মমিনুল হক রুবেল, নবীনগর থেকে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নূরজাহানপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৯৫টি ঘরের মধ্যে ৬টি ঘর অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীরা। কিনে নেওয়া ব্যক্তিরা এখন ওইসব ঘরে বসবাস করছে। ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা তা অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, জনপ্রতি ২শতক জমি ও প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকার ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আর বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীরা এ ঘর বিক্রি করেছে মাত্র ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। ফলে বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীরা এ ঘর বিক্রি করে দিয়েছে। আর এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ৯৫টি ঘরের মধ্যে ৩০টি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নূরজাহানপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ নং গলির ৩ নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন মৃত আফছর উদ্দিনের স্ত্রী সাধনের নেছা ও তার রুবেল। কিন্তু স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ওই ঘরটি ২৫ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন সোহেল মিয়া তার স্ত্রী শাহনাজ বেগম। একই গলির ২ নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন গাজী মদন ও স্ত্রী জুলেখা বেগম। কিন্তু এ ঘর ৩৫ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন রহিমা বেগম ও তার স্বামী ইমন মিয়া। ২ নং গলির ডান পাশের ৯ নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন মৃত ফজলুল মিয়ার স্ত্রী হেনা বেগম। তবে হেনা বেগম থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে ওই ঘরে বসবাস করছেন মৃত হামিদ মিয়া স্ত্রী নাজমা বেগম। একই গলির ডান পাশের ১৭নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন ধরাভাঙা গ্রামের হাবিব মিয়া। কিন্তু এ ঘর ২২ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন থোল্লাকান্দি গ্রামের এক ভিক্ষুক নার্গিস বেগম। বড়িকান্দি গ্রামের ইকবাল হোসেন প্রথম গলির ৯নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সেখানে বসবাস করছেন বড়িকান্দি গ্রামের কালন মিয়ার ছেলে মোঃ মোক্তার হোসেন ও তার পরিবার। ২ নং গলির বাম পাশের ৯নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন কাসেম স্ত্রী জমেলা বেগম। এ ঘর ৩০ হাজার টাকায় কিনে এখানে বসবাস করছে হক সাহেব ও তার পরিবার। বসবাসকারী ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে ঘর কেনার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কোনো বাড়িঘর নেই। আবেদন করেও ঘর বরাদ্দ পাইনি। তাই নিরুপায় হয়ে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর কিনে বসবাস করছি।
এবিষয়ে নবীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এইটা তো আমার কাজ না, এইটা ইউএনও এসিল্যান্ড এর কাজ। এ বিষয়ে ওনারাই ভালো জানেন। আমি শুধু তালিকা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি।
এবিষয়ে নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাহমুদা জাহান বলেন, আমি তো নতুন কিছুদিন হয় নবীনগরে এসেছি। ইউএনও স্যারকে অবগত করে অবশ্যই তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেলে ঘর বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিপি>আর এল