১৪ অক্টোবর ২০২৫

১৯৪ টাকায় উৎপাদিত সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম
১৯৪ টাকায় উৎপাদিত সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়

ঝিনাইদহ থেকে সংবাদদাতা : চিনি উৎপাদন খরচ ১৯৪.১৯ টাকা এবং উৎপাদিত সেই চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ টাকায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য কথা যে, ২০১৮-২০১৯ মাড়াই মৌসুমে মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের চিত্র ছিল এমনই। আর দির্ঘ বছর ধরে এভাবেই চলছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অবস্থিত মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চিনি উৎপাদন ও বাজারজাতকরন। এদিকে মিলের রেকর্ড বই বলছে, ২০১৫-২০১৬ মাড়াই মৌসুমে প্রতিকেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ১৭৬.৪০ টাকা। ২০০১৬-২০১৭ মৌসুমে তা বেড়ে হয় ১৯৯.৮ টাকা। এরপর ২০১৭-২০১৮ মাড়াই মৌসুমে এসে সেই খরচ দাড়ায় ১৮৯.১২ টাকায়। উল্লেখিত বছরগুলোতে চিনির কেজি প্রতি বিক্রয় মূল্য ছিল ৪৫, ৪৭ ও ৫০ টাকা। যদিও উৎপাদন খরচের এই টাকার অংকটা একেক বছর একেক রকম হয়ে থাকে।

ফলে প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম এই ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকে। বছরের পর বছর ঐতিহ্যবাহি এ মিলটির মোটা অংকের লোকসানের কারন খুজতে গিয়ে জানা যায় চমকপ্রদ সব নানা তথ্য। মিলটির পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, মোটা অংকের ব্যাংক সুদ প্রদান ও মান্দাতার আমলের ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারখানাকে লোকসানের জন্য প্রধানতম কারন বলছেন মিল সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। অন্যদিকে, চিনি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক মজুরী খরচ, আখ ক্রয়, মিলে অপরিস্কার আখ সরবরাহ, রস ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত দৈনিক আখ মাড়াই, পরিবহন খরচ, কারখানা মেরামত এবং বয়লারের জালানীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খাতের খরচ মিটিয়ে প্রতি বছরই বাড়ছে চিনি উৎপাদন খরচের এই অংক।

মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর বলছেন, পুরাতন যন্ত্রপাতি, কৃষক পর্যায়ে আখের মূল্য বৃদ্ধি, জনবল সংকট, শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ও উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্য নির্ধারনের ফলে লোকসান বাড়ছে। সাথে পুঞ্জিভুত মোটা অংকের ব্যাংক ঋণের সুদ প্রদানকেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারন বলছিলেন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।এদিকে অব্যহত এই লোকসানের জন্য সরকারের নীতি-নির্ধারনকে দুষছেন মিলের কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা।

ফলে বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে লোকসানের বোঝা। তবে, চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর সরকাররের নীতি-নির্ধারনকে ভুল বলতে বাজি নয়। তার ভাষ্য, উৎপাদন খরচ বেশি হলেও বাজার নিয়ন্ত্রন এবং প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর এই খাদ্য পণ্যটি জনসাধারনে মধ্যে সহনীয় রাখতেই সরকার নির্ধারিত মূল্য ৫৫ টাকায় তারা চিনি বিক্রি করছেন।বিগত ২০১৮-২০১৯ মাড়াই মৌসুমে মিলটি চিনি উৎপাদন করে ৫ হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন। প্রতি কুইন্টাল চিনি উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৯৪১৯.৬৫। সে হিসাবে প্রতি কেজি উৎপাদন করতে খরচ হয় ১৯৪.১৯ টাকা।

ওই বছরে এ পরিমান চিনি উৎপাদন করতে মিলটির লোকসান গুনতে হয় ৭৭ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।একই বছর এক লাখ আট হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৮ হাজার ১৩২ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। আর চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছিল ৭.৫০ কিন্তু গড় চিনি আহরণ করা হয় ৫.৬৮ ভাগ। আর চিনি উৎপাদন হয় ৫ হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন। ওই মৌসুমে মিলটি আখের মন কিনেছিল ১৪৪.৫৪ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি আখের দাম পড়েছিল ৩.৬১ টাকা। এর আগে ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে ৭০ কোটি ২৮ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে লোকসান হয় ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

এ পর্যন্ত ৩৫ মাড়াই মৌসুমে মিলটির লোকশান হয় ৩০১ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ২০০৫- ২০০৬ মাড়াই মৌসুমে লাভ হয় ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এ নিয়ে মিলের ৫২ মাড়াই মৌসুমে ১৬ মৌসুমে লাভ হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এদিকে প্রায় তিনশত কোটি টাকার পুঞ্জিভুত ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর ২০১৯-২০২০ মৌসুমে আখ মাড়াই শুরু করেছে। এ বছর ১ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার ৬৮৮ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। আর চিনি আহরনের হার ধরা হয়েছে ৬.২৫ ভাগ। মিলটি ৯০ দিন মিলটি চলবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

বিপি/আর এল

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন