১৩ অক্টোবর ২০২৫

২৩ বস্তা গোপন নথি জব্দ

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
২৩ বস্তা গোপন নথি জব্দ
বাংলাপ্রেস ডেস্ক:  সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিদেশে অর্জিত সম্পদ ও অর্থ পাচার মামলায় ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার ভোরে চট্টগ্রামে জাবেদের পারিবারিক গাড়িচালকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব আলামত জব্দ করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তার সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুদক।
জাবেদের দুই সহযোগী আজিজ ও উৎপল পালকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা জাবেদ ও স্ত্রী রুকমিলা জামানের নামে-বেনামে থাকা সম্পদের কাগজপত্র লুকিয়ে রাখার তথ্য দেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই দুদক আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় তিন দিন ধরে অভিযানের পর এসব নথিপত্র জব্দ করতে সক্ষম হয়। এদিকে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ হাতবদলের উদ্যোগ নেওয়ার খবর পেয়ে দুদক জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করেছিল। রোববার চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক আবদুর রহমান দুদকের সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। দুদক চট্টগ্রাম-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অর্জিত সম্পদের তথ্য আড়াল করতেই নথিপত্রগুলো নিজের অফিস কিংবা বাসা থেকে সরিয়ে কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে তাদের গাড়িচালকের বাড়িতে রাখা হয়েছিল। দুদক জানায়, ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আÍসাৎ ও পাচারের মামলায় জাবেদের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা-আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম আব্দুল আজিজ এবং আরামিট পিএলসির এজিএম উৎপল পালকে গ্রেফতার করা হয়। এ দুইজন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হলেও কার্যত তারা জাবেদের অবৈধ আয়, ঋণের নামে অর্থ পাচার ও সম্পদ দেখাশোনার কাজ করতেন। গ্রেফতারের পর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা জাবেদের অবৈধ সম্পদের নথিপত্র লুকিয়ে রাখার তথ্য দেন দুদককে। এর ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। রোববার ভোরে জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের গাড়িচালক ইলিয়াসের শিকলবাহার বাড়িতে অভিযান চালনো হয়। অভিযানের শঙ্কায় ইলিয়াস আগেই তার বাড়ি থেকে সেসব নথিপত্র সরিয়ে কর্ণফুলী এলাকায় অবস্থিত জনৈক ওসমান তালুকদার নামের এক ব্যক্তির বাসায় রাখেন। দুদকের টিম সেখানে অভিযান চালিয়ে বাড়ির একটি কক্ষের তালা ভেঙে ২৩ বস্তা নথি জব্দ করে। তা পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে আসা হয় দুদক কার্যালয়ে। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি নথি ঘেঁটে বিদেশে অর্থ পাচার এবং বিভিন্ন ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। সব নথি পর্যালোচনা করলে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে জানান অভিযানে নেতৃত্বদানকারী দুদক কর্মকর্তা মশিউর রহমান। চলতি বছরের ২৪ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১-এ জাবেদ, তার স্ত্রী, ভাই-বোন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা আরামিটের কর্মকর্তাদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে গম, ছোলা, হলুদ ও মোটর আমদানির জন্য ১৮০ দিনের মধ্যে ফেরতযোগ্য ‘টাইম লোন’ আবেদন করা হয়। তাদের মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকেই (ইউসিবিএল) এ আবেদন করা হয়। দুদক জানায়, গ্রেফতার হওয়া উৎপল পাল আরামিট গ্রুপের এজিএম হলেও দীর্ঘদিন জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে বিদেশে সম্পদ তৈরি ও দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতেন। দুদকের হাতে আটক হওয়ার সময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব ডিভাইস থেকে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। এগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দুদক চট্টগ্রাম-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, জব্দ করা আলামতে বিদেশে সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত পেমেন্ট, বাড়ি ভাড়া আদায়ের তথ্য, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, কোর্টের আদেশ সংক্রান্ত ডকুমেন্টস রয়েছে। এখনো সব বস্তার আলামত পর্যালোচনা করার সুযোগ হয়নি। পর্যালোচনার কাজ শেষ হলে জাবেদ দম্পতির সমুদয় সম্পত্তির হিসাব মিলতে পারে। জানা যায়, দুর্নীতির অভিযোগ জাবেদ ও তার স্ত্রী, ভাইসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আলাদা মামলা করা হয়। দুদকের একটি মামলায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাবেদ ও স্ত্রী রুকমিলা জামানের নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টিসহ অন্যান্য দেশে বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-জমিসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এছাড়া ৫ মার্চ অপর একটি মামলায় জাবেদ ও তার পরিবারের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একটি আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে তাদের ৫ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জমা রয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি>টিডি
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন