১৪ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে যেভাবে ফাঁসি কার্যকর করা হয় !

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
বাংলাদেশে যেভাবে ফাঁসি কার্যকর করা হয় !

বাংলাপ্রেস, ঢাকা : একজন ফাঁসির আসামী শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেন কোন দৈব শক্তি এসে তাকে রক্ষা করবে। এমনকি পেছনে হাত বাঁধা, গলায় দঁড়ি পরানো অবস্থায় এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবীতে যাওয়ার মাঝখানে দেয়াল যখন একটি মাত্র রুমাল; নীরবে দাঁড়িয়ে তখন সে ভাবতে থাকে এই বুঝি তাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে এলো!

বাংলাদেশে এক সময়ে মুনিরের ফাঁসি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর এরশাদ শিকদারের ফাঁসি নিয়ে ছিল মানুষের ব্যাপক আগ্রহ!!

একজন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী যতই ঘৃন্য হোক, তার শেষ ইচ্ছা পালনের চেষ্টা করা হয়। চেষ্টা করা হয় তার মৃত্যুটি যথাসম্ভব আরামদায়ক করার। মৃত্যুদন্ড আরামদায়ক করার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এই ধারাবাহিকতায় ইলেকট্রিক চেয়ার, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড আবিস্কার হয়েছে। তবে যত সিস্টেমই আবিস্কার হোকনা কেন, মৃত্যুতো মৃত্যুই! আইনানুগ সকল ফর্মালিটি শেষে ফাঁসির আসামীকে নিয়ে আসা হয় কনডেম সেলে। সেখানে শুধু ফাঁসির আসামীরাই থাকে। মাথায় থাকে লাল টুপি। অনেকটা ওয়েটিং রুমের মতো। এখানে কয়েকদিন রাখা হয়। তার সাথে যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করা হয়। বিদেশ থেকে আনা হয় দঁড়ি। সাধারণত জার্মানি থেকে বিশেষ এই দঁড়ি আনা হয়। নিয়ম করে কয়েকবার এতে মাখানো হয় সবরি কলা আর মাখন। জল্লাদ নির্বাচন করা হয় কয়েদিদের মধ্য থেকেই।

প্রতিটি ফাঁসি কার্যকরের জন্য ঐ কয়েদির ২ মাস করে সাজা কমে। আসামীর সম-ওজনের বালির বস্তা দিয়ে কয়েকবার ফাঁসির প্র্যাকটিস করা হয় কয়েকদিন আগেই। কনডেম সেলে আসামীর আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করানো হয়। তবে কবে ফাঁসি কার্যকর হবে তা আসামী এবং আত্মীয়-স্বজন কাউকেই বুঝতে দেয়া হয় না। সাধারণত রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে জেল সুপার কনডেম সেলে যান। তখন কয়েদি বুঝতে পারেন যে আজই তার জীবনের শেষ রাত। সাড়ে ১১টার মধ্যে তওবা পড়ানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। ১২টার ৫ মিনিট আগে যম টুপি ও গলায় দঁড়ি পরিয়ে দেয়া হয়। জেল সুপার হাতে রুমাল নিয়ে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। সাথে দাঁড়িয়ে থাকেন অন্যান্য অতিথিরা। জল্লাদের চোখ তখন রুমালের দিকে। ঐ মুহুর্তে এই রুমালই একজন মানুষকে এপাড় থেকে ঐপাড়ে পাঠিয়ে দেয়ার ভূমিকা পালন করে।

আসামীর চোখে মুখে অন্ধকার। দাঁতে দাঁত খিটে থাকে। গলাটাকে ফোলানোর চেষ্টা করেন যেনো ব্যথাটা একটু কম লাগে। কিন্তু বিশাল এই দেহের ওজন কি আর গলা সইতে পারে? ধর্মীয় দোয়া/মন্ত্র পাঠ করতে থাকে আর মনে মনে অপেক্ষায় থাকে কোন দৈব শক্তির! কান খাড়া করে রাখে এই বুঝি কেউ একজন বলে উঠবে, “স্টপ; এই ফাঁসি হবে না”। ভাসতে থাকে প্রিয় মানুষগুলোর মমতাভরা মুখ। তাদের মায়ামুখগুলো ভেবে হৃদয় কেঁদে উঠে। মনে হয়, যে কোন কিছুর বিনিময়ে আর ক’টা দিন যদি ওদের সাথে কাটাতে পারতাম। প্রিয় মানুষগুলোকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারতাম।

সর্বশেষ ১২টা পাঁচ মিনিটে পায়ের নিচ থেকে পাটাতন সরে যায়। গলায় আটকে যায় মোটা দঁড়ি। শুরু হয় রহস্যময় যাত্রা! ১০ মিনিট ঝুঁলিয়ে রাখার পর একজন ডাক্তার এসে ঘাড়ের চামড়া কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে থাকে নিথর দেহ। এরপর থেকে আর প্রয়োজন হয়না কোনো খাবার কিংবা পানি। রাতে খাওয়া খাবারগুলো দেহের কোনো কাজে আসেনা। পাকস্থলিতে পরে থাকে নিরব হয়ে। মৃত্যুর আগ মুহুর্তে একজন আসামী ফিরে যেতে চায় তার অতীতে। ভুলগুলো মুছে দিয়ে নতুন করে লিখতে চায় জীবনের অধ্যায়।

বিপি/আর এল

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন