১৫ অক্টোবর ২০২৫

ফরিদপুরে প্রকাশ্যে সিগারেট বিক্রি ও প্রচার

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
ফরিদপুরে প্রকাশ্যে সিগারেট বিক্রি ও প্রচার

ফরিদপুর থেকে সংবাদদাতা: ফরিদপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকায় ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে যত্রতত্র ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করছে তামাক কোম্পানির কর্মীরা। বিক্রি বাড়াতে হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকা, এমনকি স্কুল-কলেজের পাশেও বসছে এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান। ফলে তামাক জাতীয় পণ্য হাতের নাগালে থাকায় ধূমপানে আগ্রহী হয়ে পড়ছে অপ্রাপ্তবয়স্করাও।

ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ এর (ক) ধারায় বলা হয়েছে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা বা করানো যাবে না। (খ) ধারায় বলা হয়েছে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়ে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে এর কোনো নমুনা বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে দেয়া যাবে না এবং (ছ) ধারায় তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যে কোনো উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।

আইনে ৬ এর (ক) (১) ধারায় আছে অনধিক ১৮ বৎসরের নিচে কোনো ব্যক্তির কাছে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা যাবে না।  একই আইনে ৫ এর ৪ ধারায় উল্লেখ রয়েছে কেউ এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তাকে সর্বোচ্চ তিন মাস বিনাশ্রম কারাদ- বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পু একই ধরনের অপরাধ করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হবেন। অথচ ফরিদপুরে প্রকাশ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও স্থায়ী দোকানে প্যাকেট ও লিফলেট প্রদর্শন করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করলেও তা বন্ধে ভূমিকা রাখছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। ফরিদপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকাসহ উপজেলা পর্যায়ে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন নামী দামী ব্রান্ডের প্রচার ও প্রসারের জন্য বসানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র। হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড, স্কুল কলেজের আশপাশে সুবিধাজনক স্থানকে বেছে নেয়া হচ্ছে এই কাজে।

কোম্পানির নিয়োগ করা কর্মীদের দিয়েই চলছে এই আইনবিরোধী কাজ। এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বিএটিসি)। সিগারেটের নাম ও দামসহ ব্যানারে উল্লেখ করা হচ্ছে এখানে ন্যায্যমূল্যে পণ্য (সিগারেট) বিক্রয় করা হয়। আইন ফাঁকি দিতে সঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে চকলেট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, চাকরির শর্ত অনুযায়ী কোম্পানির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই আমরা এ কাজ করছি। ফরিদপুর শহরের প্রায় প্রতিটি মুদি দোকানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট। প্রকাশ্যে দোকানের শো-কেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব সিগারেটের প্যাকেট। আবার ক্রেতাদের নজরে আনার জন্য ডামি প্যাকেট শো-কেসে রাখা হয়েছে দোকানের বাইরে উন্মুক্ত ও সহজে চোখে পড়ে এমন স্থানে। কোথাও কোথাও। ঝুলছে লোভনীয় অফারের বিজ্ঞাপনের লিফলেটও যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫ এর (ছ) ধারা বিরোধী।

শহরের এসব মুদি পণ্যের দোকানগুলোতে সিগারেট নিতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অপ্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা একেবারে কম নয়। বিশেষ করে অলি-গলির দোকান বা একটু ফাঁকা স্থানের দোকানে এ বয়সী খদ্দেরের ভিড় একটু বেশিই। আবার কোনো কোনো স্থানে অগ্রজদের সামনেই বুক ফুলিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে সিগারেট কিনছে অপ্রাপ্তবয়স্করা। শহরের এক মুদি দোকানি আফজাল হোসেন জানান, দোকানে থাকা পণ্য চাইলে তা কাস্টমারের কাছে বিক্রি করাই আমার কাজ। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নিষেধ করলে লাঞ্ছিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তাই প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেয় তবে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই সতর্ক হবে।

সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রি বন্ধে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সচেতন করে তুলতে হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুশিল সমাজ। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

বিপি/কেজে

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন