১৪ অক্টোবর ২০২৫

ফ্যাসিস্টদের আমরা আর ফেরত দেখতে চাই না: মির্জা ফখরুল

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
ফ্যাসিস্টদের আমরা আর ফেরত দেখতে চাই না: মির্জা ফখরুল


বাংলাপ্রেস ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এই সময়টাতে অত্যন্ত সাবধানে, সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। আমাদের ভুলের কারণে বা রাজনৈতিক কোনো ভুল পদক্ষেপের কারণে আমরা যেন আবার ফ্যাসিস্টদের নির্যাতনের কবলে না পড়ি। অর্থাৎ ফ্যাসিস্টদের আমরা আর ফেরত দেখতে চাই না। ’

আজ মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত সদর উপজেলা বিএনপি ও রুহিয়া থানা বিএনপির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা জানেন- বিএনপি সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে আটক করা হয়েছিল, আমাদের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নেতা ইলিয়াসসহ ১৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো চিহ্ন আমরা খুঁজে পাইনি। আমাদের নেতা তারেক রহমানকেও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তিনি এখনো দেশে ফিরে আসতে পারেননি।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আবার গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থায় ফিরে আসতে চাই। আমাদের মানুষ নির্বাচন চায়, তারা ১৫-১৬ বছর যে ভোট দিতে পারেনি তাই আবার তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। নিজস্ব সরকার তৈরি করতে চায় এবং সেই পার্লামেন্টে ও সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আবার সচল করে একটা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চায়। ’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের যারা সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই অমত পোষন করেছেন এটা হতেই পারে। তার জন্য সেটাকে লক্ষ্য করে ও কেন্দ্র করে আবার আন্দোলন করা রাস্তায়- এটা কোনো মতইে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ যে দাবিগুলো তারা তুলছেন সেই দাবিগুলো নির্বাচনের পরে যে পার্লামেন্ট গঠন হবে সেই পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি- সংস্কার আমরা চাই এবং সংস্কারগুলোর শুরু আমরাই করেছিলাম। ‘

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের উত্তরণের যে পরীক্ষা, সেই পরীক্ষার আমাদেরকে উত্তীর্ণ হতে হবে। আমাদের সমস্ত বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্রই হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থায় সবধরনের মানুষের বিকাশের সুযোগ করে দেয়। সকল মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে, পার্লামেন্টের নিজের কথা বলার সুযোগ থাকে, পত্র-পত্রিকায় নিজেরা কথা বলতে পারেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং একইভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়া একইভাবে আমরা আমাদের যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থাকের গণতান্ত্রিকরণের মধ্য দিয়ে আমরা আরও অনেক উন্নত করতে পারি। ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি সংবাদকর্মী ভাইদের একটাই অনুরোধ জানাব- আপনারা রাষ্ট্রের একটা অন্যতম স্তম্ভ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেট একটা খুঁটি হচ্ছে গণমাধ্যম। আপনাদের বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এবং বস্তুনিষ্ট সমালোচনার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র টিকে থাকে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের নিয়ম এবং সেখানেই গণতন্ত্রের সাফল্য। আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের সংবাদমাধ্যমের কাছে- শুধুমাত্র চটকদার বা বেশি বিক্রি হবে এ ধরনের সংবাদ ছাপিয়ে আমরা যেন মুল জায়গা থেকে সরে না যাই। ’

তিনি বলেন, ‘আরেকটি বড় মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া, এখানে অনেক ধরনের অপপ্রচার হয়, এখানে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছু প্রচার করা হয়, যা সত্য নয়। সেগুলোকে বাছাই করে রাজনৈতিক কর্মীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ‘

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং গণতন্ত্রনের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন; সেইভাবে আমরা কাজ করছি। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রে ফিরে আসার জন্য, সে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রাখছি এবং আশা করছি সবাই মিলেএই গণতন্ত্রকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী ১৭ তারিখে অর্থাৎ শুক্রবারে সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে একটা সনদ (জুলাই সনদ) প্রকাশিত হবে। সেই সনদে সমস্ত রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করব। আর যেগুলোতে আমরা একমত হতে পারিনি, সেগুলো নির্বাচনের পরে পার্লামেন্টে নির্ধারিত হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো এসমস্ত বিষয়গুলোকে নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হবে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সেসমস্ত বিষয়গুলো নিশ্চপ্তি হবে। ’

তিনি বলেন, ‘একটি কথা আমরা পরিষ্কার করে জানাতে চাই- গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই, গণতন্ত্রের বিকল্প গণতন্ত্রই। সুতরাং গণতান্ত্রিক উপায়ে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে সৌন্দর্য হচ্ছে- যেখানে শত ফুল ফুটবে, অনেক মতামত থাকবে; সমস্ত মতামতগুলো একটা জায়গায় এসে মিলিত হয়ে গণতন্ত্র বিকশিত হবে অর্থাৎ সমস্ত ফুলের সৌরভ নিয়ে একটা গণতন্ত্রকে সুরভিত করবে। ’

গণভোট প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংস্কার কমিশনে আমরা বলেছি, একদিনেই নির্বাচন হবে, সেদিনই আমরা গণভোটের প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। অর্থাৎ যে বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা গণভোটে জনগণের কাছে যেতে পারি। ’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। 
বিপি/কেজে

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন