১৪ অক্টোবর ২০২৫

হাসিনা বেজার মোমেন খুশি

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম
হাসিনা বেজার মোমেন খুশি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি কাজের উছিলায় যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপছন্দের (জামাতের অর্থায়নে পরিচালিত) নিউ ইয়র্কের টাইম টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নিউ ইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত টাইম টেলিভিশনের সূচনা লগ্ন থেকেই অভিযোগ ওঠে যে, এটি একটি জামাত পরিচালিত টেলিভিশন। আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পাচারকৃত অর্থে এটি পরিচালনা হয় বলে নিউ ইয়র্কের একটি  পত্রিকা খবর প্রকাশ করেন। এ টিভির স্বত্তাধিকারীর বিরুদ্ধে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার 'এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি" বই প্রকাশের সহায়তা করারও অভিযোগ উঠেছিল বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালের মে মাসে টাইম টেলিভিশনে মেন্দি সাফাদি নামে ইসরায়েলের একজন নাগরিকের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাতের বিষয় নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিলেন যা ২৭ মে তারিখে সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা জাহিদ সরদার সাদি ও টাইম টিভির উপস্থাপক জ্যাকব মিল্টন যৌথভাবে মেন্দি সাফাদির সেই সাক্ষাতকারের কল্পকাহিনী সাজিয়েছিলেন বলে পরে তা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাইম টেলিভিশনের ওপর ক্ষুব্ধ হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিউ ইয়র্কের এলেই স্বেচ্ছায় উক্ত টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এবারও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে দেশের বিভিন্ন বিষয়সহ আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে এসে ২০১৭ সালে ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কের টাইম টেলিভিশনের সিইও ও সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের এর ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে কীভাবে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করবেন’ গড়মিল থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বেশ কয়েকটি পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন এবং প্রশ্নটি গুছিয়ে বলতে গিয়ে তালগোল পাকান। এমন একটি জবাবে নিউ ইয়র্কের টাইম টেলিভিশনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা নয়।বি এনপির জন্য আপনাদের এতো মায়াকান্না কেন? মূলতঃ জাতীয় বিষয়গুলোতে বিএনপি কেন আসছেন না এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ঐক্যমত বলতে কী বুঝাচ্ছেন। জাতীয় ঐক্যমত কেন, বিশ্বব্যাপী তো আমাদের ঐক্যমত রয়েছে। বিএনপি কেন আসছে না এ প্রশ্ন বিএনপিকেই করা উচিত। কারন আমি বিএনপিকে নেতৃত্ব দেই না। বিএনপি একটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল। তাঁদের দলের নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। জাতীয় ইস্যুতে তাঁরা কেন এগিয়ে আসে না সেটা তাঁদের ব্যাপার। প্রশ্নকর্তা মুখে বিএনপির সাফাই শুনেই রেগে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে এবং ইনডেমিনিটি বিল পাশ করে বিচার বন্ধের ব্যবস্থাও করেছিল। তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে বসবো। পাল্টা প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার বাবা-মাকে কেউ মেরে ফেললে আপনি কি তাদের সঙ্গে বসবেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী নই। তাই বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া কারো উচিত হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, যারা হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড এবং দেশকে ধ্বংসে বিশ্বাসী তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে না। পরের বছর ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভিকে কালো তালিকাভুক্ত করে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জানা যায়, ওই সময় মিশন থেকে সংশ্লিষ্টদের ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আসতে বারণ করা হয়েছি। এ খবর জানতে পেরে বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টিভি্র সিইও আবু তাহের অনেক তদবির করেও বিষয়টির সুরাহা করতে পারেন নাই। সংবাদ সম্মেলনে যাবার জন্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছেও ধর্ণা দিয়েছেন টাইম টিভির সিইও কিন্তু কোন কাজ হয়নি। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে এবারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফরের নির্দিষ্ট কোন বিষয় ছিল না। ওয়াশিংটনে হোটেলে বসেই তিনি মার্কিন জন প্রতিনিধিদের সাথে বেশ কয়েকটি ভার্চুয়াল মিটিং করেছেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ছাড়েন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরাসরি দেখা হওয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের সাথে ফোনালাপ করেন তিনি। গত বুধবার (২৪ ফেব্রিয়ারি) মার্কিন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেংয়ের (ডেমোক্র্যাট, নিউইয়র্ক) সাথে ভার্চুয়াল সংলাপ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পৃথিবীর কোন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে এসে একজন কংগ্রেসম্যান/কংগ্রেসওম্যানের সাথের সেই দেশের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন এমন নজির নেই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মার্কিন জন প্রতিনিধের সাথে সরাসরি দেখা না পারলেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে তিনি শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভার্জিনিয়ায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন ‘ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। সূত্রটি জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মূল কারণই ছিল উক্ত ইউনিভার্সিটি’র উদ্বোধন করা। যা সফরকালে গোপন রাখা হয়েছিল। ওয়াশিংটনে ৩৫তম ফোবানা আহবায়ক কমিটি তাদের আদম ব্যবসা জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আগ্রিম আমন্ত্রণসহ ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেও একই কায়দায় একই মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সময়ে তিনি নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি বাড়ির (বেসমেন্ট) গিয়ে ভারতীয় মালিকানাধীন বাংলা চ্যানেল নামে একটি টিভি চ্যানেলও উদ্বোধন করেন। এ চ্যানেলটি উদ্বোধনের জন্য ওই সময়ে নিউ ইয়র্কস্থ ভারতীয় কনসাল জেনারেলকে নিমন্ত্রণ দেওয়া হলেও কেউ আসেননি। কিন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেসমেন্টে গিয়েই তা উদ্বোধন করেন। যা ওই সময়ে প্রবাসীদের কাছে বেশ আলোচনার বিষয়বস্ত হয়েছিল। জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান উদ্বোধনের পেছেন নিউ ইয়র্কে মোমেন ফ্যান ক্লাবসহ একটি মিডিয়া দালাল চক্র কাজ করছেন। তারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়ে উদ্বোধনের জন্য সহায়তা করেন। এই দালাল চক্রটিই এক সময় জাতিসংঘের তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তৈলাক্ত সুপারিশ করেছিলেন। বিপি।এসএম  
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন