১৪ অক্টোবর ২০২৫

হাসিনাসহ বিভিন্ন বাহিনীর জড়িতদের শাস্তি দাবি

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
হাসিনাসহ বিভিন্ন বাহিনীর জড়িতদের শাস্তি দাবি
বাংলাপ্রেস ডেস্ক:  জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ যারা জড়িত, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, গুমের ঘটনায় অন্য বাহিনীর জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। অপরাধী কোন বাহিনীর, তা যেন না দেখা হয়। জবানবন্দি শেষে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসাবে নাহিদ ইসলাম আংশিক জবানবন্দি দেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মতর্‚জা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বুধবার বেলা পৌনে ১১টা থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনের মতো আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। দুপুর দেড়টায় মাহমুদুর রহমানের জেরা শেষ হয়। নাহিদ ইসলাম জানান, জুলাই আন্দোলনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যায়িত করায় সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানবোধ করেছিলেন। জবানবন্দিতে তিনি ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন, পাশাপাশি ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি ১৪ জুলাই রাজাকারের নাতিপুতি বলে শেখ হাসিনার মন্তব্য, ১৫ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আন্দোলন বন্ধে ডিজিএফআই-এর চাপ, পুলিশের ভূমিকা, ১৬ জুলাই আবু সাঈদের হত্যার পর বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ ১৯ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন পর্যন্ত আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরেন। বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক মো. নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। শেখ হাসিনার এ মামলায় সাক্ষ্য শুনানির ১৭তম দিনে জবানবন্দি দেন তিনি। অবশিষ্ট জবানবন্দি প্রদানের জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতুবি করেন ট্রাইব্যুনাল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৭ জন ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মামলার অপর দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক আছেন। জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা প্রদান করা হয়। কারণ, তারা সব সময় দেখেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করা হলে তাদের রাজাকারের বাচ্চা আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। গত বছরের ১৭ জুলাই ডিজিএফআই তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য চাপ দেয় বলেও উলে­খ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দেওয়া হয়। সারা দেশেই এ ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সব বাধা অতিক্রম করে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। নাহিদ ইসলাম জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই রাতে তারা দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আন্দোলনের নেতাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং গ্রেফতার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যান। সেদিন সারা দেশে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন। সেদিন রাতে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও শহীদ হন। জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৯ জুলাই তারা বুঝতে পারেন যে, সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। তাদের আন্দোলনের এবং হতাহতদের কোনো খবর কোনো মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিল না। ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিই। একই দিন ছাত্রলীগ পালটা কর্মসূচি দেয়। সেদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে, ‘আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’ তার এ ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়। কারণ, তারা আন্দোলনের সম্মুখসারিতে ছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক সৈকত এ হামলায় নেতৃত্ব দেন। তারা বাইরে থেকেও সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করেছিলেন। এ হামলায় বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রছাত্রীদের ওপরও তারা নির্যাতন চালায় এবং চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়। চট্টগ্রাম ও রংপুরে গুলিবর্ষণ নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৬ জুলাই ওই হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিই। এ তারিখে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। ওইদিন চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ জন আন্দোলনে শহীদ হন। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে একজন আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়। সেদিন বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করে ফেলে। গায়েবানা জানাজা শেষে কফিন মিছিল শুরু করলে পুলিশ মিছিলের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ আমাদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। সেদিন ডিজিএফআই আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য চাপ দেয়। হলের বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের সঙ্গে সংলাপে আমরা অস্বীকৃতি জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানাই। তিনি আরও বলেন, অনেক মিডিয়া হয়তো এর বাইরে ছিল বা চেষ্টা করেছে। আমরা পরবর্তী সময়ে এসব শুনতে পেয়েছি। কিন্তু ১৮ বা ১৯ জুলাই আমরা এসব দেখতে পাইনি। মিডিয়া বারবার দেখাচ্ছিল আন্দোলন স্থগিত হবে, সরকারের সঙ্গে বসবে; এমন নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে শিরোনাম করা হয়েছিল। আমরা মিডিয়া বা সাংবাদিকদের কাছে যে তথ্য পাওয়ার আশায় ছিলাম কিংবা এত হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা টেলিভিশনে আসছিল না। সেই প্রেক্ষাপট থেকে বলেছি, মিডিয়াকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে সরকার। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা। এছাড়া শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এদিকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে আশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পুড়ানোর মামলায় বুধবার শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের পিতা খলিলুর রহমানের জেরা সম্পন্ন করেছেন আইনজীবীরা। অপর সাক্ষী শহীদ বায়েজিদ বোস্তামির স্ত্রী রিনা আক্তারের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। [বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি>টিডি
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন