১৪ অক্টোবর ২০২৫

ইউক্রেনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ‘নিহত’ সাংবাদিক!

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
ইউক্রেনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ‘নিহত’ সাংবাদিক!
বাংলাপ্রেস অনলাইন : রাশিয়ার ভিন্নমতালম্বী সাংবাদিক আরকাডি বেবশেঙ্কো মারা যাননি। বরং, বেঁচে আছেন বহাল তবিয়তেই। ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই তার মৃত্যু ‘মঞ্চস্থ’ করেছে। সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আততায়ীর গুলিতে বেবশেঙ্কো নিহত হয়েছেন, এমন খবর প্রকাশের ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে তিনি হাজির হন সংবাদ সম্মেলনে। ইউক্রেনের পুলিশ বলছে, বেবশেঙ্কোকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল রাশিয়া। সেই ষড়যন্ত্র উন্মোচন করতেই এত কাঠগড় পোড়ানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।ইউক্রেনের গোয়েন্দা প্রধান ভেসিল রিতস্যাক বলেন, রাশিয়ার প্রেরণ করা আততায়ীকে ধরতেই এই ফাঁদ পাতা হয়। এখন পর্যন্ত একজনকে এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার ঘটনায় আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেবশেঙ্কোর স্ত্রী বলেছিলেন, বাসার প্রবেশপথে গুলিবদ্ধ অবস্থায় পড়ে ছিলেন তিনি। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান বলে সাংবাদিকদের জানায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মঙ্গলবার এই ‘হত্যা মামলার’ তদন্ত সম্পর্কে জানাতে পুলিশের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢুকেই চোখ ছনাবড়া হয়ে যায় সাংবাদিকদের। অনেকেই জীবন্ত বেবশেঙ্কোকে সেখানে দেখে চমকে উঠেন। সংবাদ সম্মেলনে বেবশেঙ্কো তার জীবন রক্ষার জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক বন্ধু ও সহকর্মীকে দাফন করেছি। আমি জানি এই অনুভূতি কেমন। আমি দুঃখিত যে, আপনাদেরকেও এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে এছাড়া কোনো পথ ছিল না।’ বেবশেঙ্কো বলেন, প্রায় এক মাস আগে তাকে রাশিয়ার হত্যা ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানানো হয়। এরপর থেকে তিনি ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। ইউক্রেনের গোয়েন্দা প্রধান রিতস্যাক বলেন, বেবশেঙ্কোকে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে খবর পেয়েই গোপনে প্রস্তুতি শুরু হয়। তিনি বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এক ইউক্রেনের নাগরিককে ইউক্রেন থেকেই গুপ্তঘাতক খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেয়। ওই ব্যক্তি নিজের পরিচিত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বেবশেঙ্কোকে হত্যার ব্যাপারে যোগাযোগ করেন। এর মধ্যে যুদ্ধফেরত সেনাও ছিলেন। হত্যার বিনিময়ে ৩০ হাজার ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এদেরই একজন ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী বিষয়টি বেবশেঙ্কোকে জানায়। আর ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে বেবশেঙ্কোর সাজানো মৃত্যুর পরিকল্পনা হাতে নেয় ইউক্রেন। তবে বেবশেঙ্কোর স্ত্রী ওলেচকা আগে থেকে বিষয়টি জানতেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য বেবশেঙ্কো সংবাদ সম্মেলনে নিজের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ওলেচকা, আমি খুবই দুঃখিত। তবে আর কোনো উপায় ছিল না।’ এদিকে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া যাখারভ এক বিবৃতিতে বলেছেন, অপপ্রচার চালাতে এই কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেবশেঙ্কো জীবিত, এতে রাশিয়া খুশি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পরশেঙ্কো বলেছেন, তার দেশ বেবশেঙ্কোকে সুরক্ষা দেবে। তার ভাষ্য, ‘মস্কো শান্ত হয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম। আমি বেবশেঙ্কো ও তার পরিবারকে সুরক্ষা দিতে নির্দেশ দিয়েছি।’ কে এই বেবশেঙ্কো? মস্কোতে আইন নিয়ে পড়ার সময় ১৮ বছর বয়সে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন বেবশেঙ্কো। তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত চেচেন যুদ্ধে অংশ নেন। তার স্মৃতিকথা ‘এক সৈন্যের যুদ্ধ’ বইতে তিনি ওই সংঘাতে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। চেচেন যুদ্ধে উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। পরবর্তীতে সাংবাদিক বনে যান তিনি। হয়ে উঠেন ক্রেমলিনের অন্যতম হাই প্রোফাইল সমালোচক। তিনি সিরিয়া ও পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তিনি ফেসবুকে সিরিয়াগামী একটি টু-১৫৪ পরিবহণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে পোস্ট দেন। তার দাবি, এই পোস্টের কারণে তাকে রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি গার্ডিয়ানে লেখা এক নিবন্ধে বলেন, ওই পোস্টের কারণে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ২০১৪ সালে বিবিসির হয়ে ইউক্রেনের সেনা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার সংবাদ কাভার করেন বেবশেঙ্কো। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংবাদিক ও রাজনীতিক সহ বেশ কয়েকজন হাই প্রোফাইল ব্যক্তি হত্যার শিকার হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই ক্রেমলিনের কড়া সমালোচক ছিলেন। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে এই কিয়েভেই গাড়ি বোমা হামলায় মারা যান পাভেল শেরেমেত নামে একজন বেলারুশিয়ান সাংবাদিক ও ক্রেমলিন সমালোচক। ২০১৭ সালের জুনে আরেকটি গাড়ি বোমা হামলায় মারা যান ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল ম্যাক্সিম শাপোভাল। একই বছরের মার্চে সাবেক রাশিয়ান এমপি ডেনিস ভরোনেনকোভকে একটি হোটেলের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন