-68eba6bfe183f.jpg)
কক্সবাজার কারাগারে টাকায় সব সুবিধা পাওয়া সম্ভব!



মোঃজাহেদুল ইসলাম(জাহেদ)কক্সবাজার থেকে: কারাগারের মূল ফটক থেকে শুরু করে ভেতরে,মাঠে,লোকজনের সঙ্গে কারারক্ষীদের কথা বলতে দেখা গেছে।ভেতরে একস্থানে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের নাম-ঠিকানা লিখতে হয়।মূলত সেখান থেকেই বাণিজ্য শুরু হয়।কথাহয়,টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের মিস্ত্রি পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম।কারাবন্দী বন্ধু শাহাব উদ্দিনকে দেখতে কক্সবাজার কারাগারে এসেছেন তিনি।তিনি বলেন,বন্ধুর জন্য ভাত এনেছিলাম।ওই ভাত পৌঁছে দেওয়ার জন্য কারারক্ষীকে দিতে হয়েছে ২০০ টাকা।সাথে কিছু পান-সিগারেটও কিনে দিয়েছি।কারাগারের অভ্যন্তরের ক্যান্টিন থেকে ছোট ৪ প্যাকেট মেরিজ সিগারেট এবং ১০ খিলি পান কিনতে খরচ হয়েছে আড়াইশ’টাকা।ক্যান্টিনে যেকোন জিনিস দুই থেকে তিনগুন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।কারা ক্যান্টিন থেকে কোন পণ্য কিনলে রশিদ দেওয়া হয় কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম বলেন,আমাদের কোন রশিদ দেওয়া হয়নি।কাউকেও রশিদ দিতে দেখিনি।সবাই রশিদ ছাড়াই জিনিস কিনেন।এখাদে পদে পদে টাকা দিতে হয়।কারাগারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে,কারাগারের মূল ফটক থেকে ভেতরে সব মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বাণিজ্য হয়।
বন্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হাসপাতালে থাকা,আসামির জামিন,বন্দী রোগী বাইরের হাসপাতালে পাঠানো,পুনরায় গ্রেফতার,খাবার বা টাকা পাঠানো,মালামাল তল্লাশি করাসহ সবক্ষেত্রেই বাণিজ্য হয় কারাগারে।বৃহস্পতিবার শুক্রবার সারাদিন কারা ফটকের বাইরে ও ভেতরে স্বাক্ষাৎপ্রার্থীদের ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মতো।দুদিনে বিকেল পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি লোকজন কারাগারে আসেন স্বজনদের দেখতে।কারাবন্দীদের প্রায় ৭০ শতাংশই ইয়াবা সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত।তাদের বিশেষ কদর রয়েছে কারাগারে।কারা ফটকের সামনে কথা হয় মোহাম্মদ হোছন নামে একজনের সাথে।তিনি বলেন,অফিস কল দিয়ে আমার ভাইকে দেখেছি।এই জন্য ১২০০ টাকা দিতে হয়েছে।অফিসে আলাদাভাবে একজন বন্দীর সাথে দেখা করার জন্য পরিবারের ৪ জনকে নিয়ে যাওয়া যায়।টাকা দিলে সবই সম্ভব এখানে।সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর মোহাম্মদ হোছন নিজের সম্পর্কে আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।তবে অনেক বড় বড় সাংবাদিক কারা তত্বাবধায়কের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি তাই আপনারা এসব দেখে লিখে কি করবেন বলে উল্লাস প্রকাশ করেন।টেকনাফ থেকে কারাবন্দীর স্ত্রী ও ভাই-বোনের দেখা করতে এসেছিলেন মো: সেলিম নামে একজন।
তিনি বলেন,কারাগারের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে স্বাক্ষাৎপ্রার্থীদের মোবাইল জমা রাখা হয় ডানপাশের একটি বুথে।সেখানে একেকটি মোবাইল জমা রাখার জন্য দিতে হয় ১০ থেকে ২০ টাকা।দুইটি মোবাইল জমা রাখার জন্য বুথে দিতে হয়েছে ৩০ টাকা।স্ত্রী ও ভাই-বোনদের জন্য কিছু কাপড়-চোপড় এনেছিলাম।সেগুলো ভেতরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাররক্ষীকে দিতে হয়েছে ৩০০ টাকা।এখনও(বিকেল সাড়ে ৪ টা)দেখা করতে পারিনি।দেখা করার জন্য আরও কিছু টাকা দিতে হবে।দুই দিন আগে টেকনাফ থানা থেকে তাদের কারাগারে আনা হয়েছিল।তখন তাদের কাপড়-চোপড় কিছ্ইু দিতে পারিনি।কারা অভ্যন্তরের একটি সূত্র জানায়,বর্তমানে এ কারাগারটির প্রধান সমস্যা হলো সাক্ষাৎ বাণিজ্য,অবৈধভাবে কারাগারে কয়েদিদের কাছে টাকা পাঠানো এবং কয়েদিদের মুঠোফোনের ব্যবহার।নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় রসিদের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হচ্ছে।বিশেষ কদর রয়েছে কারান্তরীন ইয়াবা কারবারীদের।কয়েদিদের মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভেতরে দায়িত্বরত কারারক্ষীদের সহায়তায় মুঠোফোনে কথা বলেন বন্দীরা।এর প্রমান পাওয়া গেলো স্ত্রী ও ভাই-বোনের সাথে দেখা করতে আসা সেলিমের কথায়।তিনি বলেন,ভেতরে লিপি নামে একজন নারী কারারক্ষী আমাকে একটি কাগজে তাঁর মোবাইল নাম্বার লিখে দিয়েছেন।তিনি বলেছেন,যখনই প্রয়োজন হয় তাঁকে ফোন দিতে।তিনি যখন ডিউটিতে থাকবেন তখন আমার স্ত্রী ও ভাইবোনদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেবেন।অথবা তাদের সাথে কথা বলে কখণ কি দরকার হয় তা জানিয়ে দেবেন।আমরা তো প্রতিদিন এখানে আসতে পারি না।তাই তাঁর মোবাইল নাম্বার নিয়েছি।এ বিষয়ে জানতে কারারক্ষী লিপির দেওয়া মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়।আমি কখনোই এ ধরনের কাজ কারবার করি না।কারা ফটকের সামনে দেখা হয় কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা এক যুবকের সাথে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন,টেকনাফের সাবরাং থেকে শাহজাহান নামে আমার একজন বন্ধু এসেছিলেন তার বড় ভাইকে দেখতে।তার সাথে আরও ৪ জন ছিল।তারা এখানে কিছু চিনে না বলে ফোরন করে আমাকেও নিয়ে এসেছে।শাহজানের ভাই বর্তমানে সাবরাংয়ের মেম্বার।অফিস কল করে তার সাথে দেখা করার জন্য আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
ওয়ারল্যাস নিয়ে জেলারের সাথে থাকেন-এমন একজন ওই টাকা নিয়েছেন।এখানে অফিস কল করে দেখা করলে ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।তারা কোন রশিদও দেয় না।কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী এলাকা থেকে কারান্তরীন ছেলেকে এসেছেন মধ্যবয়স্ক নারী গোলবাহার।তিনি বলেন,ইয়াবা সেবন সংক্রান্ত একটি মামলায় আমার ছেলে কারাভোগ করছে।তাকে দেখতে মাঝে-মধ্যে কারাগারে আসি।এখানে পদে পদে টাকা দিতে হয়।আজ ছেলের জন্য রান্না করা খাবার এনেছিলাম। ওই খাবার পাঠাতে ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে টিকিট কাউন্টারের কারারক্ষীকে। টাকা দেওয়ার পর তারা খাবার পৌঁছে দিয়েছে।কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার বাসিন্দা খালেদা বেগম।তিনি এসেছিলেন কারাবন্দী ভাই মহিউদ্দিন দেখতে।ঈদ উপলক্ষ্যে তার জন্য কিছু রান্না করা খাবারও নিয়ে এসেছিলেন বাড়ি থেকে।তিনি বলেন,খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য কারারক্ষীকে দিতে হয়েছে ২০০ টাকা।টাকা ছাড়া এখানে কিছু হয় না।স্বজনদের সাথে দেখা করতে খুব সকাল থেকে কারাগারে এসে দিনভর অপেক্ষার পরও দেখা করতে না পেরে ফিরে গেছেন অনেকে।তেমনই একজন রামুর খুনিয়ার পালংয়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান।বন্ধু বেলাল উদ্দিনকে দেখতে এসেছিলেন তারা ৩ জন।তিনি বলেন,আজ দিনভর অপেক্ষা করেও দেখা করতে পারিনি।ওরা বলছে, আজ আর দেখা করা যাবে না।সম্প্রতি কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পাওয়া মহেশখালীর একজন বাসিন্দা বলেন,টাকা থাকলেই কারাগারে অনেকটা রাজার হালে থাকা যায়।
এক মাসের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিলে কারাগারে মেডিকেল ওয়ার্ডে থাকতে পারেন সুস্থ যেকোন বন্দীও।ওই টাকা দিতে হয় অগ্রীম।টাকা দিলে সেখানে সব সুযোগ সুবিধা মিলে।ভালো খাবারও পাওয়া যায়।কারারক্ষীরাও তাদের তোয়াজ করেন।টেকনাফের বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রায়শই মেডিকেল ওয়ার্ডে থাকেন।এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক বজলুর রশিদ আখন্দ জানান,এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।এছাড়া ঈদের ২/৩ দিন কক্সবাজার কারাগারে বন্দী ছিলেন সাড়ে ৪ হাজারের অধিক।তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ইয়াবা সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,মুলত কারাগার থেকে যারা অনৈতিক সুবিধা নিতে পারে না তারাই এধরনের মিথ্যাচার করেন।তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় কারা কর্তপক্ষের নির্দিষ্ট্য সুবিধা ভোগের অংশিদার কে?
বিপি/কেজে
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন
-68eba6bfe183f.jpg)




নেত্রকোনার পূর্বধলায় ভাষা সৈনিক ইউনুস আলীর রাষ্ট্রীয় মর্যদায় দাফন সম্পন্ন
