১৪ অক্টোবর ২০২৫

নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ১৯

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ১৯
বাংলাপ্রেস ডেস্ক: নেপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। কাঠমান্ডু পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশজুড়ে প্রাণহানি ১৯ জনে পৌঁছেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৪৭ জন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও ছাত্র-জনতা পোখারা, বুতোয়াল, ভারতপুর ও ইতাহারিসহ কয়েকটি শহরের রাস্তায় নামে। সকালে কাঠমান্ডুর বাণেশ্বর এলাকায় প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা রাজধানীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সংঘাত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সম্প্রতি ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স ও লিংকডইনসহ সামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যমে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে নেপালের সরকার। এর প্রতিবাদে মানুষের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়। বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে শিক্ষার্থী ও তরুণ (জেন-জি) প্রজন্ম। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপকভাবে জলকামান, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা লাঠি, গাছের ডাল, পানির বোতল নিয়ে প্রতিরোধে নামে। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী দেশটির সংসদ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, রাজধানী ছাড়াও বিক্ষোভ আরও কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোতে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুরুতে কাঠমান্ডুর একটি এলাকায় কারফিউ জারি করে সরকার। পরে তা রাজধানীসহ আরও কয়েকটি জেলায় জারি হয়েছে। এসব জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দেওয়া শুরু করেছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ছাত্র-জনতার জমায়েত বেশি হয়েছিল। কাঠমান্ডুতে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন 'শীতল নিবাস', ভাইস প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন, রাজপরিবারের প্রধান প্রাসাদ সিংহ দরবার, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসবভন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। আরও কয়েক জেলায় কারফিউ জারি ‘জেন জি’ পরিচিত তরুণ ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশের সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে দেশটির বিভিন্ন শহরে স্থানীয় প্রশাসন কারফিউ জারি করেছে। সোমবার বিকেল থেকে কাঠমান্ডু, পোখরা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া এবং ইতাহারীসহ অন্যান্য এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, কারফিউ ঘোষণার পরও কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বরে ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভ থামেনি। ভ্যালি পুলিশের মুখপাত্র খানাল বলেন, ‘কিছু এলাকায় এখনও বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষ থামেনি।’ নিবন্ধনহীন ২৬ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার বন্ধ করেছে সরকার নেপাল সরকারের দাবি, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিষিদ্ধ হওয়া প্ল্যাটফর্মের কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন নেয়নি। এ কারণে সরকার এগুলোতে ব্যবহারকারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকার যুক্তি দিয়েছে যে, অনলাইনে বিদ্বেষ, গুজব ও সাইবার অপরাধ ঠেকাতে নিবন্ধনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সোমবার এএফপি জানায়, নেপালে কয়েক লাখ মানুষ এসব জনপ্রিয় মাধ্যম ব্যবহার করেন। প্রবেশাধিকার বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদের মধ্যে ক্ষোভের তৈরি করেছে। দেশটির সরকার নিবন্ধনহীন মোট ২৬টি প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনেক নেপালি বিনোদন, খবর ও ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা করেন। এমনই একজন ২৫ বছর বয়সী জেনিশা জোশি। তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে গয়না ও আনুষাঙ্গিক সামগ্রী বিক্রি করেন। জোশি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে তিনি হতাশ। ফেসবুক বন্ধ হলে তাঁর ব্যবসায় ধস নামবে। এ ছাড়া, তার আত্মীয়রা দেশের বাইরে থাকেন। তাদের সঙ্গে তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সরকারের এটি বন্ধ করা উচিত হয়নি। দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা সুমনা শ্রীষ্টা বলেন, ‘সরকার স্বাধীন মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।’ কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ইয়ি বলেন, এই পদক্ষেপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এক বিপদজনক নজির। জেন-জিদের আন্দোলনে সমর্থন জানালেন তারকারা একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে কাঠমান্ডুর রাস্তায় নামা জেন-জিদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন দেশটির প্রখ্যাত শিল্পী ও বিনোদনজগতের তারকারা। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ এক বিবৃতিতে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেন, বয়সসীমার কারণে (এই আন্দোলনে কেবল ২৮ বছরের নিচেররা অংশ নিতে পারছে) তিনি সরাসরি বিক্ষোভে অংশ নিতে পারছেন না। তবে আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে তিনি সমর্থন করছেন। খবর দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে মেয়র বালেন্দ্র বলেন, তরুণদের আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত হবে না। অভিনেতা মদনকৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ ও হরিবংশ আচার্য ফেসবুকে প্রকাশ্যে বিক্ষোভকারীদের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন। তারা তরুণদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আচার্য সম্প্রতি একটি বেহাল সড়ক নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন তুলে বলেন, করদাতাদের অর্থে নির্মিত অবকাঠামো কেন এত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। হরিবংশ আচার্য লিখেছেন, ‘আমি প্রতিদিনই দেখে বিস্মিত হতাম, সড়কটি কীভাবে এত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। আমি প্রতিদিন এই সড়কে হাঁটতাম, চিন্তা করতাম। তবে আজকের তরুণেরা শুধু চিন্তা করেন না—তারা প্রশ্নও তোলেন। কেন সড়কটি নষ্ট হলো? কীভাবে এটা ঘটল? এর জন্য দায়ী কে? আজকের তরুণ প্রজন্ম যেসব প্রশ্ন তুলছেন, এটি শুধু তার একটি উদাহরণ। আজ আমরা যে কণ্ঠস্বর শুনছি, তা শুধু কোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়; বরং সেসব নেতা ও কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যারা এর জন্য দায়ী।’ এ অভিনেতা নিজেদের কাজের মানোন্নয়ন করতে এবং দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখনকার তরুণসমাজ বেশি বেশি জবাবদিহি আশা করে। গায়ক ও অভিনেতা প্রকাশ সাপুত দুই ভাই সুনীল ও শচীনকে বিক্ষোভে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত মাসে ইউটিউব থেকে আয় হওয়া অর্থ থেকে দুই ভাইয়ের প্রত্যেকের জন্য ২৫ হাজার রুপি করে পাঠিয়েছেন। এই অর্থ দিয়ে তাদের পানি সরবরাহ করতে ও শরীর আর্দ্র রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে এবং একসঙ্গে সবকিছু করার চেষ্টা করে নিজেদের ক্লান্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিনেত্রী বর্ষা রাউত কাঠমান্ডুর বাইরে থাকলেও টিকটকের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বিক্ষোভে অংশ নিতে অন্যদের উৎসাহিত করেছেন। অভিনেতা আনমল কে সি, প্রদীপ খদকা, ভোলারাজ সাপকোটা, বর্ষা শিবাকোটি এবং সংগীতশিল্পী এলিনা চৌহান, রচনা রিমাল ও সমীক্ষা অধিকারীও আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সবাইকে এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। নেপালের হাসপাতালে বাড়ছে রক্তের চাহিদা কাঠমান্ডু পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সোমবার আহতদের চিকিৎসা দিতে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টার ও বীর হাসপাতালে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্ট্রাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস (ব্লাড ব্যাংক) থেকে ২০০ পিন্টেরও বেশি রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে। সেন্ট্রাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিসের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার সঞ্জীব কুমার যাদব বলেন, ‌‘রক্তের জন্য ফোন ক্রমাগত বেজে চলেছে, আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে এমন হাসপাতালগুলো নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।’ এছাড়াও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার একদিনেই ১,২০০ পিন্ট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে মানুষের দীর্ঘ লাইন পড়েছে। সঞ্জীব কুমার আরও জানান, ‘রক্তের চাহিদা আরও বাড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে, রক্ত সংগ্রহের কাজে আমরা ২০ জন কর্মকর্তা মোতায়েন করেছি।’ [বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি/টিআই
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন