
নিউ ইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে থেকে সরে দাঁড়ালেন এরিক অ্যাডামস


মিনারা হেলেন: নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ায় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে জনমত জরিপে বড় ব্যবধান তৈরি হওয়ায় অবশেষে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন।
রবিবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় যা শুরু হয় ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রার গান ' আমি এটা আমার মতো করে করেছি' (I Did It My Way) দিয়ে অ্যাডামস ঘোষণা দেন যে তিনি নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাচ্ছেন। তবে একইসঙ্গে তিনি মেয়র হিসেবে নিজের কর্মকালের সাফল্যগুলোর কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, যে-ই হোক না কেন আমার পরবর্তী উত্তরসূরি, তাকে অবশ্যই আমাদের শুরু করা কাজ চালিয়ে যেতে হবে: জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, জীবনমান উন্নয়নে বিনিয়োগ করা এবং অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা রোধে পুলিশের সক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, মাদক নিরাময়, গৃহহীনদের সহায়তা ও কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্যোগে জোর দিতে হবে।
অ্যাডামস আরও যোগ করেন, যদিও আমার পুনর্নির্বাচনী প্রচার এখানেই শেষ হলো, কিন্তু আমার জনসেবার পথ শেষ নয়। আমি এই শহরের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব, যেমনটি গত ৪০ বছর ধরে করে আসছি—যেদিন আমি এনওয়াইপিডিতে যোগ দিয়ে আমাদের রাস্তাগুলোকে নিরাপদ এবং আমাদের ব্যবস্থাকে ন্যায়সঙ্গত করার চেষ্টা শুরু করেছিলাম।
অ্যাডামসের এই সিদ্ধান্ত আসে জল্পনা-কল্পনার মাঝেই—ধারণা করা হচ্ছিল, স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের লড়াই থেকে সরে দাঁড়াবেন। এর আগে আরেক স্বাধীন প্রার্থী জিম ওয়ালডেন প্রচার থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এ গুঞ্জন আরও জোরালো হয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল অ্যাডামসকে প্রশাসনে কোনো পদ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছিলেন, যাতে তিনি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং অ্যান্ড্রু কুয়োমো সরাসরি জোহরান মামদানির মোকাবিলা করতে পারেন।
বার্তায় অ্যাডামস রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান উগ্রবাদের বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের শহর ও দেশকে ঘৃণা করতে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষোভ রাজনৈতিক সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় সরকারকে বিভাজনমূলক এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য বহু শক্তি কাজ করছে, যা প্রতিদিনের নিউইয়র্কবাসীর ক্ষতি করছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, বড় পরিবর্তন স্বাগত ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু যারা দাবি করে যে সমাধান হলো পুরো সিস্টেম ধ্বংস করা, তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। এটি পরিবর্তন নয়, এটি বিশৃঙ্খলা।
অ্যাডামস ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন প্রতিশ্রুতির চেয়ে প্রার্থীর বাস্তব কাজ দেখে সিদ্ধান্ত নেন।
অভিযোগ অনুযায়ী ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধ অনুদান নেওয়ার মতো দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত অ্যাডামস ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারির পরিবর্তে সরাসরি সাধারণ নির্বাচনে লড়াই করে পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া এবং বিপুলসংখ্যক নিউইয়র্কবাসীর তাঁর পদত্যাগ দাবি করার কারণে তাঁর প্রচারণা কখনও গতি পায়নি।
অ্যাডামস নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোয় এখন প্রতিযোগিতা সীমাবদ্ধ হলো তিন প্রার্থীকে ঘিরে: মামদানি, কুয়োমো ও কার্টিস স্লিওয়া। ডেমোক্র্যাট প্রভাবশালী নিউইয়র্কে মামদানিই এখনো এগিয়ে আছেন বলে ধরা হচ্ছে।
অন্যদিকে, মামদানি অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প ও তাঁর 'কোটিপতি দাতারা' অ্যাডামসকে চাপ দিয়ে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছেন, যাতে কুয়োমো সুবিধা পান। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদের পরিবর্তে আরেকজন দুর্নীতিগ্রস্তকে মেনে নেবে না। আমরা ৪ নভেম্বর অর্থের রাজনীতি ও ছোট চিন্তার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে এমন এক সরকার গড়ব, যা নিয়ে প্রতিটি নিউইয়র্কবাসী গর্বিত হতে পারবে।
অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার প্রচারণা শিবির জানিয়েছে, তিনি প্রতিযোগিতায় থাকছেন। স্লিওয়ার মুখপাত্র বলেন, 'কার্টিস স্লিওয়াই একমাত্র প্রার্থী যিনি মামদানিকে হারাতে পারেন। আমাদের পরিকল্পনা, সম্পদ ও অর্থায়ন অতুলনীয়। সর্বোপরি, আমাদের কাছে এমন সমাধান রয়েছে যা কর্মজীবী মানুষদের নিউইয়র্ক সিটিতে টিকে থাকতে ও নিরাপদে বোধ করতে সহায়তা করবে।'
কুয়োমো অ্যাডামসের সিদ্ধান্তকে কঠিন হলেও প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ধ্বংসাত্মক উগ্র শক্তির মুখোমুখি, যারা আমাদের শহরকে ধ্বংস করবে। এখনো দেরি হয়নি, আমরা একে থামাতে পারি।
তিনি আরও বলেন, মেয়র অ্যাডামসের সাফল্যের অনেক কিছু নিয়ে গর্ব করার আছে। শুধু নিউইয়র্কেই এমন সম্ভব যে, বুশউইকের এক ভাড়া-বাড়ির ছেলে, যে একসময় গাড়ির কাচ পরিষ্কার করত আর পোস্টরুমে কাজ করত, সে-ই পরে মেয়র হতে পারে। আমাদের মতপার্থক্য থাকলেও এরিক অ্যাডামসের গল্প হলো দৃঢ়তার প্রতীক এই শহরের আত্মার প্রমাণ।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি। সিএস
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন



ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসতে চান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট


সামরিক সংঘর্ষের পর আফগান সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি পাকিস্তানের
