১৪ অক্টোবর ২০২৫

নরসিংদীতে অনুষ্ঠিত 'বাউল মেলা' মিলনমেলায় পরিনীত

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
নরসিংদীতে অনুষ্ঠিত 'বাউল মেলা' মিলনমেলায় পরিনীত
বোরহান মেহেদী, নরসিংদী : নরসিংদীর মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়া ধাম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের ৩ দিনব্যাপী মেলা। লোকগাঁথা থেকে জানায় প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো এ মেলায় পুণ্যস্নান, মহাযজ্ঞ ও পূজা-অর্চনায় যোগ দিতে এরই মধ্যে সমবেত হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক বাউল। এই হিন্দু ধর্মীয় সাধক বা বাউলদের উৎসব এখন সব ধর্মের মানুষের মিনমেলায় পরিনীত হয়েছে। মেলা উপলক্ষে মেঘনার পাড়ে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ মেলা। প্রতিবছর আট দিন ব্যাপী এই মেলা হলেও এবার করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত করে ৩ দিন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাউল আখড়া ধামের তত্ত্বাবধায়ক মৃদুল বাউল মিন্টু। প্রথম দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ব্রহ্মার পূজা (যজ্ঞ) অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভক্তরা উপবাস থেকে মেঘনায় পুণ্যস্নান করে যজ্ঞানুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এ ছাড়া জগন্নাথের মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। বাউলর আখড়াবাড়ি সূত্রে জানায়, প্রায় ৭০০ বছর আগে নরসিংদীতে এক বাউল ঠাকুর ছিলেন। তিনি নিজেকে শুধু বাউল বলেই পরিচয় দিতেন। এ জন্য বাউল ঠাকুরের প্রকৃত নাম জানেন না কেউ। সেই বাউল ঠাকুরের স্মরণে তার আখড়া ধামে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। তবে কে প্রথম এখানে বাউল মেলার আয়োজন করেন তার প্রকৃত ইতিহাস কারও জানা নেই। ইংরেজ শাসনামল থেকে এখন পর্যন্ত মেলার আয়োজন করছেন স্বর্গীয় মণীন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবার। বর্তমানে এই মেলায় আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন মণীন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবারের সদস্য সাধন চন্দ্র বাউল, মৃদুল বাউল মিন্টু, শীর্ষেন্দু বাউল পিন্টু ও মলয় বাউল রিন্টু। এদিকে, বাউল মেলা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ঝপরি সাজিয়ে বসেছেন। তারা বাঙালির চিরচেনা মুখরোচক খাবার ও বাহারি পণ্য বিক্রির জন্য প্রদর্শন করছেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে আমিত্তি, জিলাপি, সন্দেশ, বারো মিঠাই, দই, মুড়ালি, গুড়ের তৈরি মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের সন্দেশ, কদমা, নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, খাজা, গজা, নিমকি, মনাক্কা, গাজরের হালুয়া, পিঠাসহ রকমারি খাবার। এ ছাড়া খেলনা, ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন। মেলার একদিন পুর্বে মঙ্গলবার দুপুরে বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাউল সাধকেরা দল বেঁধে মেলায় যোগ দিচ্ছেন। তারা আখড়ায় থাকা বিভিন্ন ঘরে বৈঠকে মিলিত হয়ে বাউল ঠাকুরের দর্শন নিয়ে আলোচনা করছেন। সিলেট থেকে আগত শংকর পোদ্দার বাউল বলেন, সারা বছর এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকি। বাউল ঠাকুরের এই আঙিনায় আসলে সকল ভক্তদের সঙ্গে দেখা হয়। ধর্মীয় আলোচনা ও গান হয়। মনে প্রশান্তি লাগে। আখড়া বাড়ির অধিকর্তা মৃদুল বাউল মিন্টু বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে এই মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কোনো প্রকার প্রচারণা ছাড়াই প্রতিবছর ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে ওঠে এই মেলা প্রাঙ্গণ। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাউল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিপি/আর এল
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন