১৪ অক্টোবর ২০২৫

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দাবি ও লক্ষ্য অবহিত করলেন

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দাবি ও লক্ষ্য অবহিত করলেন

বাংলাপ্রেস অনলাইন: ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সামনে সাত দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য তুলে ধরেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেক শোরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব তুলে ধরা হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদ্দেশে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি ও ১১ দফা তুলে ধরেন তিনি। এ সময় কূটনীতিকদের প্রশ্নের জবাবও দেন ড. কামাল হোসেন। ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, ভিয়েতনাম, কানাডা, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

নতুন জোটের আহ্বায়ক গণফোরামের সভাপতি, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। নতুন জোটের পক্ষে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা :

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।

২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

৪. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।

৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশে কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনের সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।

৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

১১ দফায় লক্ষ্যে :

১. মহান মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানকল্পে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা।

২. ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন ও সাংবিধানিক কোর্ট গঠন করা।

৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা।

৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা, দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হস্তে দমন।

৫. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুব সমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কোটা সংস্কার করা।

৬. সকল নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিধান করা, কৃষক শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা , বাসস্থান, ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।

৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।

৮. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন, ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা।

৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া।

১০. ‘সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব- কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’, এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

১১. বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণসমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, প্রযুক্তি ও সমর সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

বাংলাপ্রেস/আর এল

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন