১৪ অক্টোবর ২০২৫

পেঁয়াজ মাত্র ৬০ টাকায় ১০ কেজি

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
পেঁয়াজ  মাত্র ৬০ টাকায় ১০ কেজি

মেহেরপুর থেকে সংবাদদাতা : মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর, আনন্দবাস, গোপাল নগর সহ প্রায় সব গ্রামেই সুখসাগর জাতের পেঁযাজ চাষ করেন চাষীরা। তবে জেলার সদর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ চাষটা বেশি হয়।

‘কিনবেন পেঁয়াজ। মাত্র ৬০ টাকায় ১০ কেজি। এই সুযোগ শুধুমাত্র আজকের জন্য, যারা ৪০ কেজি কিনবেন তাদের জন্য মাত্র ৫ টাকা কেজি।’ এভাবেই মাইকিং করে মেহেরপুর জেলা শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত জনপদে প্রতিদিনই পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কম হবার কারণে সব শ্রেণীর মানুষই এমন অফারে কৃষকদের কষ্টে উৎপাদিত সুখ সাগর পেঁয়াজ কিনছেন। লাভের আশায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও সুখ সাগর পেঁয়াজের চাষ করে আশায় বুক বেধেঁছিলেন মেহেরপুরের কৃষকরা। কিন্তু সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ করে জীবনের সুখ হারাতে বসেছেন কৃষকরা।

পেঁয়াজ চাষী আবুল কালামের মত রফিকুল ইসলাম, বাবুল জোয়ার্দার, হায়াত আলী, আদম আলী, আশিক গাজী পেয়াজ সাথে কথা বললে একই চিত্র ভেসে উঠে। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বাজারজাত করছে কৃষকরা। পেঁয়াজচাষীদের পাশাপাশি আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের নানা ধরণের কর্মসংস্থান হয় পেঁয়াজ চাষকে ঘিরে। কিন্তু এবছর পেঁয়াজ চাষ করে চাষীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। কেজি প্রতি তিন টাকা ক্ষতি গুনতে হচ্ছে চাষীদের।

মঙ্গলবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন শিবপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আবুল কালাম। তিনি এ বছর পেয়াজ চাষ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে। প্রতিবিঘা জমিতে তিনি খরচ করেছে ৫২ হাজার টাকা করে। বিঘাপ্রতি জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ মন। এক বিঘা জমির পেয়াজের বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ভাল দাম পাওয়ার আশায় জমিতে পেঁয়াজ রেখে দিলেও তা ফেটে যাচ্ছে। ফেটে যাওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হয় না। গত সোমবার ২২ মন ফেটে যাওয়া পেঁয়াজ বস্তা সহ বিক্রি করেছেন মাত্র ২২০০ টাকায়। তিনি বলেন, পেঁয়াজ করে যেভাবে এ গ্রামের উন্নতি হয়েছে। এবার সেভাবেই গ্রামের মানুষ গুলো পেয়াজ চাষ করে ঋণগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন কৃষকদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামে পেঁয়াজ ফেরি করে অফারে বিক্রি করতে দেখা গেল সমির আলী নামের একজনকে। তিনি জানালের মুজিবনগরের চাষীদের কাছে ৫৫ কেজির পেঁয়াজের বস্তা কিনিছেন ২২০ টাকা করে। প্রতিদিন অফারে ৮ থেকে ১০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। লাভ করছেন সাত থেকে আট‘শ টাকা করে।

মেহেরপুর তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ জানান, দেড় মাস থেকে ভারতের পেয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, পেয়াজের দাম কমে যাওয়ায় আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এই পেয়াজের চাহিদা নিয়ে ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে। তাছাড়া এই পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষন করে রাখা যায় না। যার ফলে চাহিদা না থাকায় চাষীদের কম দামেই পেয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়। সুখ-সাগর পেঁয়াজ এখন পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মিলছে সাত থেকে আট টাকা কেজি দরে। কৃষক পাচ্ছেন কেজি প্রতি তিন-চার টাকা।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, চলতি বছরে জেলায় ১হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সুখসাগর ও তাহেরপুরী নামের এই দুই জাতের পেয়াজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মুজিবনগর উপজেলাতে শুধু সুখসাগার জাতের পেয়াজ চাষ করেন চাষীরা। তিনি স্বীকার করেন- পেয়াঁজ চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে।

বিপি/আর এল

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন