
প্রধান উপদেষ্টার নিউ ইয়র্ক সফরে বিক্ষোভ ঠেকানো অসম্ভব


নোমান সাবিত: অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্কে আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আ.লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসুচিও ঘোষণা করেছে উভয় দল। নিউ ইয়র্কে আওয়ামীলীগ বা অন্য কোন দলের বিক্ষোভ ঠেকানোর কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি রোববার রাত নিউ ইয়র্কে উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আগমনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীদের আনন্দ সমাবশ ও আওয়ামীলীগের বিক্ষোভ কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের বিক্ষোভ কর্মসুচি ঘোষণা করে আওয়ামীলীগের নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে খুনি-ফ্যাসিস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দলের পক্ষ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। অবৈধ সরকারের জাতিসংঘে সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
জনগণের টাকায় খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূসের সাথে বিএনপির কোন শীর্ষ নেতার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ সমীচীন হবে না। যেখানেই খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বলে উল্লেখ করেছেন নেতারা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের বিক্ষোভ কর্মসুচি ঠেকাতে শান্তি সমাবেশ করবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও প্রধান উপদেষ্টার আবাসিক এলাকায় তারা শান্তি সমাবেশ করবে বলে দলের একটি সুত্র জানিয়েছেন। যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে তারা খেয়াল রাখবেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চারজন রাজনৈতিক নেতা থাকছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিগত এক বছরে দেশে সংঘটিত সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া আগামী তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের সভায়ও অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন নিউ ইয়র্কে আওয়ামীলীগ বা অন্য কোন দলের বিক্ষোভ ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। প্রধান উপদেষ্টার নিউ ইয়র্ক সফরকে কেন্দ্র করে যে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে সেখানে পুলিশ প্রস্তুত থাকবে। তবে সেখানে বিক্ষোভ ঠেকানোর উপায় নেই।
তিনি বলেন, এখানে আমাদের বুঝতে হবে, পশ্চিমের দেশগুলোতে বাধা দেওয়া, স্লোগান দেওয়া, রাস্তায় মিছিল করা, প্রতিবাদ করার রাস্তা আটকানোর কোনও উপায় আমাদের কেন, কারো নেই। সেসব দেশের সরকার এটা করতে দিতে বাধ্য। শুধু ডেলিগেশন দলের নিরাপত্তা যেন সঠিক থাকে। আমি আসলে তেমন আশঙ্কা করছি না।
তৌহিদ হোসেন বলেন, কারণ নিউ ইয়র্ক পুলিশ এনওয়াইপিডি এই ব্যাপারে বিস্তর অভিজ্ঞ। আপনারা যারা গেছেন, তারা দেখে থাকবেন, মোটামুটি তিন হাত দূরে একটা করে গাড়ি থাকে। আমি আশা করছি, কোনও অপ্রীতিকর কিছু হবে না।
তিনি বলেন, বিক্ষোভ হবে, এটা কিন্তু আমি ধরে নিচ্ছি। কারণ এটা ঠেকানোর উপায় আমাদেরও নেই, তাদেরও নেই।
গত বছর যা ঘটেছিল নিউ ইয়র্কের জে এফ কে বিমানবন্দরে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনন্দ সমাবেশ করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)এবং একই সাথে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (নিউইয়র্ক সময়) রাত ১০ টা ১০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটটি আট নম্বর টার্মিনালে অবতরণের আগেই বাইরে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা টার্মিনাল এলাকা। ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই জেএফকে বিমাবন্দরে জড়ো হয় প্রধান উপদেষ্টা বরণ করতে আসা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নানা ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন। টার্মিনালের আরেক পাশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রতিবাদসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানানোর পর মোটর শোভাযাত্রা সহকারে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ম্যানহাটনের অভিজাত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি। সিএসআপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন




-20241021080600.jpg)
