১৫ অক্টোবর ২০২৫

সৈয়দপুরের ইতিহাস নিশ্চিহ্ন করতেই গণকবরস্থান দখল চলছে

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
সৈয়দপুরের ইতিহাস নিশ্চিহ্ন করতেই গণকবরস্থান দখল চলছে

এম আর আলী টুটুল, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিশ্চিহ্ন করতেই দখলকারীরা সৈয়দপুরের গণকবরটি দখল করতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ঈদুল আযহায় সরকারী ছুটির দিনে সৈয়দপুর শহরের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ওই গণকবরস্থানটিতে টিনের চালা দিয়ে আংশিক দখল করা হলেও কারও কোন মাথা ব্যাথাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ কারনে শহর ব্যাপী চলছে সমালোচনার ঝড়।

একাধিক সূত্র জানায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দপুরের ইতিহাস অতি বেদনাদায়ক। দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে এ শহরে প্রায় ১০ হাজারও বেশি মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। শহীদ হওয়া এসব মানুষদের শহরের বিভিন্ন এলাকায় কবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধান কবরস্থানটি হলো সৈয়দপুর শহরের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন গণকবরস্থানটি। অধিক সংখ্যক বাঙ্গালী ও পাকসেনা মিলে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মানুষকে কবর দেওয়া হয় এ স্থানটিতে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এ কাবরস্থানটি সুরক্ষায় থাকলেও পরবর্তীতে অবহেলা ও জঙ্গলময় হয়ে স্থানিয়দের স্মৃতি অনেকটা আড়াল হয়ে গেছে। ফলে দখলকারীরা এ সুযোগের সৎ ব্যবহার করে সেটি আংশিক দখল করে ইতিহাস নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাঙ্গালীদের লাশ গদাগদি করে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সামান্য মাটি খুড়ে তাদের দাফন দেওয়া হয়। একই সাথে ওই সময় পাক সেনাদেরও লাশ দাফন করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের পর এ কবরস্থানটি পাক সেনাদের কবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা প্রায় বন্ধই হয়েযায়। ফলে জঙ্গলে ভরে যায় কবরস্থানটি। কিন্তু এ কবরস্থানটিতে শত শত বাঙ্গালীরাও তাদের মৃত দেহ পড়ে থাকলেও সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার যেন কেউই নেই।

মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষদর্শী ইমতিয়াছ আলী (৭০) জানান, মুক্তিযোদ্ধের সময় পাক সেনারা তাকে সহ একাধিক বাঙ্গালী যুবকের দ্বারা বিমানবন্দরের রানওয়ে কাজ করিয়ে ছিলো। ওই সময় বাঙ্গালীসহ যেসব পাক সেনা মারা যায় তাদেরও দাফন করা হয়েছিল এ কবরস্থানটিতে। লিয়ামত আলী (৭৫) নামের ওপর এক ব্যক্তি জানান, এ কবরস্থানটিতে পাক সেনাদেরই বেশি কবর দেওয়া হয়েছে। শহীদ বাঙ্গালীদের তুলনামূলক কম দাফন করায় এটি পাক সেনাদের কবরস্থান হিসেবে পরিচিত রয়েছে। সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে প্রায় ২০ শতকেরও বেশি জমিতে রয়েছে কবরস্থানটি। বাঙ্গালী ও পাক সেনাদের কবরস্থান নিয়ে টানা হেচড়া করার কারণে কবরস্থানটির পূর্ব পাশের প্রায় ৮ শতক জমিতে টিনের চালা দিয়ে দখলে নিয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আর এটি পরিশুদ্ধ করতেই ওই টিনের চালার ভিতর চলছে ভূড়িভোজ ও তাসের আড্ডা। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন বরাবরে অভিযোগ দেওয়া হলেও কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইউনুছ আলীর সাথে তিনি জানান, এ কবরস্থানটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছুর চিহ্ন বহন করে। তাই এটি নিশ্চিহ্ন করতে যেই চেষ্টা করুক না কেন তা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে এ কবরস্থানটি অতিস্বত্ত্বর সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। তবে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম গোলাম কিবরিয়া কোন মন্তব্য প্রকাশ করেনি।

বিপি/কেজে
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন