ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনদিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছেন উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার ভোর থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত তারাকান্দা বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাবে রহমত জানান, বৃহস্পতিবার রাতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য শুক্রবার ভোর থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত তারাকান্দা বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এসময়কালে কোনো পক্ষই সভা, সমাবেশ, জনসংযোগ ও মিছিল করতে পারবে না। উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরী হওয়ায় জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে তারাকান্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কর্মীরা গণসংযোগ করতে থাকে। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা গণসংযোগ করতে এলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়। নৌকার সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিসে হামলা ও ভাংচুর করে। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্তত ২০ সমর্থক আহত হয়। এরপর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। ঘন্টাব্যাপী থেমে থেমে চলা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুজ্জামান সরকার বকুল জানান, পরাজয় জেনে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা অতর্কিত হামলা করেছে। রাতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। ভাংচুর করা হয়েছে আমার নির্বাচনী অফিস ও দোকানপাট। এতে আমার ১৫জন সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ১০ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশংকাজনক। তারা সকলেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করা হয়। তারা আমাদের বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে।
এদিকে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন তারাকান্দা বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে, গতকাল রাতের ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মন্ডল।
বিপি/কেজে