ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি: ফুরফুরা শরীফের বার্ষিক ইসালে সওয়াব আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের হুগলী জেলার ফুরফুরা দরবার শরীফে খাস মিলাদ মাহফিলের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক ইসালে সওয়াবের কার্যক্রম শুরু হয়। আগামী শুক্রবার ফজর বাদ মিলাদ, জিকির ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে তিনদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক এই ইসালে সওয়াব শেষ হবে।ইসলামী পন্ডিতদের মতে, ফুরফুরা শরীফের ইসালে সওয়াব উপমহাদেশের মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে যুগ পরম্পরাগত ভাবে।
ন’হুজুর পীর কেবলার জৈষ্ঠ্য পুত্র পীর এ কামেল আল্লামা হযরত বাকী বিল্লাহ (রহ:) এঁর একমাত্র সাহেবজাদা এবং জমিয়তে জাকেরিণের মুখ্য নির্দেশক মওলানা মোহাঃ আল্লামা জাবিহ্হুল্লাহ সিদ্দিক (মাদ্দঃ) এক বাণীতে দাদা হুজুর কেবলার সিলসিলাকে আঁকড়ে থাকার জন্য তাঁর ভক্ত, মুরীদ ও আশেকানদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, দাদা হুজুর কেবলার এই ইসালে সওয়াবের মাহফিল কেয়ামত পর্যন্ত কায়েম থাকবে এবং সমাজ থেকে শিরক, কুফরী ও বিদায়াত উচ্ছেদে মুখ্য ভুমিকা পালন করে যাবে ইনশাল্লাহ।
ইতহাস থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ১৮৯০ সালে ফুরফুরা শরীফের পীর মুজাদ্দিদে যামান হযরত মাওলানা শাহ্ সুফী আবু বকর সিদ্দিকী (রহঃ) ফাল্গুন মাসের ২১, ২২ ও ২৩ তারিখ নির্ধারণ করে ফুরফুরা শরীফে ইসালে সওয়াব ও ওয়াজ মাহফিল কায়েম করেন যা আজও ওই তিন দিন ধরে সেখানে লাখ লাখ লোকের আগমন ঘটছে।ইসালে সওয়াব মাহফিলের অর্থ সওয়াব পৌঁছানোর সম্মেলন। তাই এপার বাংলা ওপার বাংলার লাখ লাখ মুসলমান উপমহাদেশের প্রখ্যাত পীর মুজাদ্দেদে যামান হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহঃ) প্রবর্তিত ইসালে সওয়াবের মাহফিলে যোগদান করে থাকেন।
তিনি ইসালে সওয়াব মাহফিল সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি জানি, আল্লাহ্ বলিয়াছেন : ইয়া আইয়ুহাল লাযীনা আমানু কুও আনফুসাকুম ওয়া আহলিকুম্ নারা- হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদিগকে ও নিজের পরিজনকে অগ্নি হতে রক্ষা কর।’ এই আয়াতের মর্ম অবলম্বনে আমার বাড়িতে দেশী-বিদেশী সকলকে আম দাওয়াত দিয়া বহু আলেম-ওলামা, হাফেজ, ক্বারী কর্তৃক ওয়াজ-নসিহত করাইয়া ও নিজে করিয়া, শরিয়তের হুকুম আহকাম জানাইয়া দেই। ৬০-৭০ বার খতম কুরআন শরীফ, সূরা এখলাস ও ফাতেহা, কলেমা ইত্যাদি পড়ানো হয়। এই সমস্তে সওয়াব রাসুল পাক (সাঃ) ও যাবতীয় ওলি-আওলিয়া গওছ, কুতুব এবং যাবতীয় মুসলমানদের রুহের ওপর সওয়াব রেছানি করা হয়। এ জন্য এই মাহফিলের নাম ইসালে সওয়াব। এই মাহফিল যাহাতে আল্লাহ্ কায়েম রাখেন, তাহার চেষ্টা আমার পুত্রগণ, খলিফাগণ ও মুরিদগণ করিবেন। খলিফাগণের মধ্যে যদি কাহারও বাড়িতে এ রূপ মাহফিল করিতে কাহারও শক্তি হয়, তবে তিনি তাহা করিবেন। সাবধান! কেহ যেন অর্থের লোভে বা অন্য কোন রূপ মান-মর্যাদার জন্য না করেন। বিশুদ্ধ হেদায়েতের নিয়তে করিলে বহু নেকি পাইবেন। আরও সাবধান থাকিবেন যে, যেন এই মাহফিলে কোন প্রকার বেদয়াত ও হারাম কার্য বা নামাজের জামায়াত তরক না হয়। বাজে তামাসা ইত্যাদি না হয়।’
বিপি/টিআই