নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে নিজের অনড় অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেন তিনি। তাঁর দাবি, শারীরিকভাবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ রয়েছেন। ফলে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। আর আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য তিনিই সেরা প্রার্থী।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ৭৫তম সম্মেলন শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ঘুরেফিরে বাইডেনের রাজনৈতিক জীবন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্বকাল, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতার মতো বিষয়গুলো সামনে উঠে আসে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাইডেন জানান, নিজের প্রার্থিতা বহাল রাখার বিষয়ে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিদেশি নেতারাও তাঁকে একই পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘আপনাকে জিততে হবে।’ বাইডেন বলেন, ‘উত্তরাধিকারের কথা ভেবে এই নির্বাচনে আমি লড়ছি না। যে কাজ শুরু করেছি, তা শেষ করার জন্য আমাকে এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কাজের গতি কমে গেছে বলে আমি মনে করি না।’
সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে চান কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘পুতিন আলোচনার পরিবেশ খোলা রাখেননি। তাই আপাতত এমন কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা নেই। তবে মস্কোর দিক থেকে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আলোচনার টেবিলে বসতে কোনো আপত্তি নেই।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনী এ পর্যন্ত তাদের সাড়ে ৩ লাখ সদস্যকে হারিয়েছে। এর পরও তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
শারীরিকভাবে নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ দাবি করলেও বেফাঁস মন্তব্য পিছু ছাড়ছে না বাইডেনের। বৃহস্পতিবার রাতের সংবাদ সম্মেলনে শুরুতেই ভুল করে বসেন তিনি। নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সম্বোধন করেন ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প’ হিসেবে।
ওয়াশিংটনে আয়োজিত ন্যাটো সম্মেলনে এদিন বাইডেনের পরের বক্তা ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে নিজের বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি বলেন, ‘আমি এবার মঞ্চ ছেড়ে দিতে চাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে, যাঁর আছে সাহস, আছে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা। আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে স্বাগত জানাচ্ছি।’ তার এমন বক্তব্যে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন জেলেনস্কি। ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে পরে অবশ্য নিজের ওই বক্তব্য সংশোধন করে নেন বাইডেন। বলেন, ‘পুতিনকে হারাবেন জেলেনস্কি।’
বৃহস্পতিবার রাতের সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান বাইডেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধ থামানোর সময় এসেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ইসরায়েলকে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতো হামাস নেতাদের পিছু নেওয়া ছাড়তে হবে। সিনওয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সাহায্য করবে।
যুদ্ধপরবর্তী গাজা কীভাবে চলবে এমন প্রশ্নে বাইডেন বলেন, ‘যুদ্ধপরবর্তী গাজায় ইসরায়েলের কোনো দখলদারত্ব থাকবে না। তখন অঞ্চলটিতে শান্তি নিশ্চিতে কাজ করবে আরব দেশগুলোর যৌথ বাহিনী। এই বাহিনীতে মিসর থেকে শুরু করে সৌদি আরব পর্যন্ত দেশগুলোর বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।’
বাইডেন এ সময় গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধকৌশলকে আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধকৌশলের সঙ্গে তুলনা করেন। ইসরায়েল যেমন হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি ২০০১ সালে আল-কায়েদাকে ধ্বংস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করেছিল। বাইডেন বলেন, ২০০১ সালে আল-কায়েদা টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে ভুল করেছে, তা যেন ইসরায়েল না করে। এ সময় আফগানিস্তানে প্রবেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভুল ছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি।
বিপি।এসএম