আবু সাবেত: যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিভিশন (আইপিটিভি) ব্যবসায় জড়িত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই সহোদর অভিযুক্তের পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শতাধিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিনের পর দিন আইপিটিভি ব্যবসা চালিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার সকালে নিউ ইয়র্কের চিকটোওগাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নূর নবী চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের খবরে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর পরেই অনেকেই নিজেদের ফোন বন্ধ রেখেছেন।
তথ্যের অভাবের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইপিটিভি ব্যবসার মালিকদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন। তবে এ কথা ঠিক যে শতাধিক বাংলাদেশিসহ দেশ জুড়ে হাজার হাজার আইপিটিভি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ছোট এবং স্থানীয় ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোও জড়িত এ পেশায়। তবে অধিকাংশই অবৈধ বলে জানা গেছে।
নিউ ইয়র্কের চিকটোওগাতে থাকেন নূর নবী চৌধুরী(৫৬), আরেক ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান (৩৬) থাকেন ঢাকায়। দুই ভাই মিলে অবৈধভাবে এনবিএল, এনবিএ ও এনএইচএ গেমস সরাসরি প্রবাহ বা লাইভ স্ট্রিম করতেন। এর জন্য সর্বনিম্ন ১০ ডলার ফি নিতেন তাঁরা। এভাবে ৭০ লাখ ডলারের বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে লাইভ স্ট্রিম করে সংক্ষুব্ধ বিভিন্ন পক্ষের মোট ১০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি করেছেন। তাঁদের মার্কিন জুরি অভিযুক্ত করেছে বলে বিচার বিভাগের বরাত দিয়ে ফরচুন ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে নূর নবী চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিউইয়র্কে ব্রুকলিনে ফেডারেল আদালতে দুই বাংলাদেশি অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর ভাই মোহাম্মদ রহমান (৩৬) ঢাকায় থাকেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ‘২৪৭/টিভি স্ট্রিম’ নামে অবৈধ লাইভ স্ট্রিম চালাতেন। এর জন্য মাসিক ফি নিতেন। এর মধ্যে কপিরাইট ছাড়া লাইভ স্পোর্টস প্রোগ্রামিং ও বিভিন্ন টেলিভিশন শো প্রচার করত।
আদালতের নথি অনুযায়ী, আনুমানিক মে ২০১৭ এবং নভেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে আসামীরা অবৈধভাবে অনলাইন ভিডিও এবং স্পোর্টস স্ট্রিমিং পরিষেবা প্রদান করে আসছিল। প্রতি মাসে ১০ ডলারের মতো সাবস্ক্রিপশন ফিতে, গ্রাহকদের ইন্টারনেট-সংযুক্ত ডিভাইসে লাইভ টেলিভিশন এবং স্পোর্টস প্রোগ্রামিং দেখাতো।
অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের ব্যবহৃত ওয়েবসাইট ডোমেনগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক ‘টোয়েন্টি ফোর সেভেন টিভি স্ট্রিম ডটকম’ ভিজিট করলে সেখানে জব্দ করার নোটিশ দেখা যাচ্ছে।
নূর নবী চৌধুরী ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ রহমান কয়েক বছর ধরে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাঁরা ‘২৪৭/টিভি স্ট্রিমের’ মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৭০ লাখ ডলারের বেশি সাবস্ক্রিপশন ফি নিয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, তাঁদের এই কর্মকাণ্ডের কারণে বৈধ কপিরাইটধারী মালিকদের ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ডলারের বেশি। আর এই কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁরা নিজেদের পরিচয় গোপন করে অন্য একজনের পরিচয় ব্যবহার করেন।
আদালতে শুনানির সময় ফৌজদারি বিচার বিভাগের প্রধান নিকোল এম. আরজেন্টিয়ারি বলেন, ‘অভিযুক্ত দুই ভাই অনুমোদন ছাড়াই অন্যের কপিরাইট লাইভ স্পোর্টস প্রোগ্রাম ও বিভিন্ন টেলিভিশন শো প্রচার করেছে। এভাবে তাঁরা বৈধ ব্যক্তিদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করেছে।’
ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস বলেন, ‘আমাদের অফিস ও বিচার বিভাগ ডিজিটাল পাইরেসির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এইএসআই) নিউ ইয়র্ক ফিল্ড অফিসের স্পেশাল এজেন্ট ইন চার্জ উইলিয়াম এস. ওয়াকার বলেন, ‘অভিযোগ অনুযায়ী, নূর নবী চৌধুরী ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ রহমান নিজেদের পরিচয় গোপন করে অন্য একজনের পরিচয় ব্যবহার করে একটি অবৈধ স্ট্রিমিং সাইট পরিচালনা করছিলেন, যা বৈধ কপিরাইট মালিকদের ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি করেছে।’
‘২৪৭/টিভি স্ট্রিম’ পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত ডোমেইন নামগুলো সরকার জব্দ করেছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসেও তাঁদের সার্ভার জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নূর নবী চৌধুরী ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ রহমানের সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
এদিকে, আইপিটিভি ব্যবসায়ী নূর নবী চৌধুরী গ্রেপ্তারের খবরে নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শতাধিক বাংলাদেশিসহ হাজার হাজার আইপিটিভি ব্যবসায়ী গ্রেপ্তারের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
বিপি।এসএম