Home কলাম ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্প ভাবলো কী আর হইলো কী?

ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্প ভাবলো কী আর হইলো কী?

by bnbanglapress
Published: Updated:
A+A-
Reset

ছাবেদ সাথী

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইউক্রেন সম্পর্কে যেসব উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে গণমাধ্যম, বিশ্লেষক এবং রাজনীতিকদের মধ্যে একধরনের সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষজন বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা করছেন, তবে সারকথা একটাই ‘উনি আসলে কী ভাবছেন?’
দুঃখজনকভাবে ওয়াশিংটন এবং ইউরোপের বিভিন্ন রাজধানীতে এখন এই প্রশ্নটি শুধুই কথার কথা হিসেবে বলা হয়, যার তেমন কোনো মূল্য নেই আসল পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে। কিন্তু যদি সত্যিই কেউ এই প্রশ্নটি গুরুত্ব দিয়ে করে এবং প্রকৃত উত্তরের প্রত্যাশা করে, তাহলে কিছু অনুমান করা সম্ভব।
ট্রাম্প ইউক্রেন নিয়ে কী ভাবছেন? সম্ভাবনা অনেক। হয়তো তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তার প্রথম অভিশংসনের জন্য আংশিকভাবে দায়ী মনে করেন। অথবা তিনি তার পরিচিত স্ট্র্যাটেজিক অনিশ্চয়তার কৌশল ধরে রাখতে চাইছেন। তবে আরেকটি সম্ভাবনা আরও বাস্তবসম্মত শোনায়- ট্রাম্পের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্ভবত ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউ ইয়র্ক পোস্ট বা ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে ভিন্ন।
দশ বছর আগেও এই দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) খুব কম মানুষই ইউক্রেন সম্পর্কে জানতেন। এমনকি মাত্র কয়েক বছর আগেও কিয়েভ শহরের সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম না।
যা কিছু আমরা ইউক্রেন সম্পর্কে জানতাম, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল দেশটির ভয়াবহ দুর্নীতির ইতিহাস। এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল ইউক্রেন, যে দেশটির সঙ্গে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা, এমনকি বৈদেশিক সাহায্যও যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচি ছাড়াই দিত না। এমনকি ‘ইউক্রেনে দুর্নীতি’ বিষয়টি নিয়ে উইকিপিডিয়াতেও আলাদা একটি পৃষ্ঠা রয়েছে।
কিন্তু তারপরও, ইউক্রেন কখনোই বৈশ্বিক রাজনীতি কিংবা মার্কিন স্বার্থের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না যতক্ষণ না ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে। তখনও পশ্চিমারা বিশেষ কিছু করেনি, শুধু জাতিসংঘে অভিযোগ আর কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েই দায় সারছিল। (এটাই যদি হয় ‘আপিসমেন্ট’, তাহলে তো কথাই নেই।)
অন্যদিকে, রাশিয়া কিন্তু আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এমনকি ভ্লাদিমির পুতিনের স্বৈরশাসনের মধ্যেও। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার থাকা মানেই এমন গুরুত্ব। তাই হয়তো ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্য ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিকভাবেই আলাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাদের খুব কাছের ইতিহাস, এবং বর্তমান রাশিয়ার অনেক কিছুই ১৯৩০ দশকের নাজি জার্মানির কথা মনে করিয়ে দেয়।
কিন্তু সেটি ইউরোপের ভাবনা। ট্রাম্প হয়তো এই সমীকরণটিকে ভিন্নভাবে দেখছেন। হয়তো তিনি দেখছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া এক পাশে, আর চীন অপর পাশে।
ইউরোপের বন্ধুদের জন্য এটি হতাশাজনক শোনালেও, একে পুরোপুরি অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইউরোপের অর্থনীতি স্থবির, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত, দীর্ঘস্থায়ী অভিবাসন সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান। এমনকি, আশ্চর্যজনকভাবে অনেক ইউরোপীয় মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা-রাশিয়ার আগ্রাসন, চীনের বিস্তার বা পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
হয়তো ট্রাম্প ভাবছেন, এমন একটি অঞ্চল দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত সহযোগী হওয়ার জন্য খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়। হ্যাঁ, চীন এবং রাশিয়া এখন খুব ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবে এটি যে স্থায়ী কোনো জোট, এমন ধারণারও কোনো ভিত্তি নেই। দুই দেশ প্রকৃত অর্থে কখনোই স্বাভাবিক মিত্র ছিল না। মাত্র এক প্রজন্ম আগেও তারা সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছিল, এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে পরমাণু হামলার ইঙ্গিতও দিয়েছিল।
এখন তাদের একমাত্র মিল হলো যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা। হয়তো ট্রাম্প ভাবছেন, তিনি এটিকে বদলাতে পারবেন। হয়তো তিনি ভাবছেন, এই ত্রিমুখী বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র যেন দুই বনাম এক জোটে শক্তিশালী পক্ষে থাকে।
যদি সত্যিই ট্রাম্প এমনভাবে বিশ্বকে দেখেন এবং সেটি যদি তার ইউক্রেন নীতিকে প্রভাবিত করে, তাহলে এটি হবে এক অভাবনীয়, বিশ্বপরিবর্তনকারী ঝুঁকি। যদি তিনি ভুল হন এবং রাশিয়া এটি দুর্বলতা, অস্থিরতা বা ২১ শতকের আপিসমেন্ট হিসেবে দেখে, তবে এর ফল হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যার ভয়াবহতা অকল্পনীয়।
সেই পরিস্থিতিতে ইতিহাস ট্রাম্পকে নেভিল চেম্বারলেইনের চেয়েও খারাপভাবে মূল্যায়ন করবে। কিন্তু যদি তিনি ঠিক হন, তাহলে হয়তো এক নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হবে -যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং রাশিয়া (হয়তো ভারতও) এক হয়ে চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির ভারসাম্য রক্ষা করবে। তাতে ট্রাম্প হয়ে উঠবেন একসঙ্গে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, রিচার্ড নিক্সন, জন ফস্টার ডালেস এবং হেনরি কিসিঞ্জারের মতো।
এ এক চরম ঝুঁকির খেলা কিন্তু হয়তো এটাই কাজের অংশ। হয়তো এটাই ট্রাম্পের প্রকৃত ভাবনা।

ছাবেদ সাথী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি, লেখক ও সাংবাদিক। সম্পাদক-বাংলা প্রেস

[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী