চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। শেষ মুহুর্তের প্রচারণা মুখরিত উপজেলার শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, বড়উঠান ও জুলধা ইউনিয়ন।
বড়উঠানে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় মোহাম্মদ দিদারুল আলম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও অন্যান্য পদের প্রার্থীরা নির্ঘুম প্রচারণা চালাচ্ছেন।
চায়ের দোকান থেকে সিএনজি ষ্টেশন, বাজার থেকে অফিস, স্কুল থেকে কলেজ, খেলার মাঠ থেকে পড়ার টেবিল সর্বত্রই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কারা হচ্ছেন-বাকি তিন ইউনিয়নে নতুন চেয়ারম্যান?
উপজেলার স্থানীয় ভোটার, প্রার্থীসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয়েছে কার গলায় জুটবে বিজয়ের মালা। নির্বাচনী কৌশল, ব্যক্তি ইমেজ, দলীয় প্রতীক, আঞ্চলিকতার টান ও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছে কারা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকাঘুরে তথ্য পাওয়া যায়, মূলত কর্ণফুলী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তুমুল লড়াই হবে চরলক্ষ্যা ও জুলধায়। শিকলবাহায় অনেকটা এক তরফা ভোট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা শিকলবাহা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রতীক পেলেন গতবারের বিজয়ী আনারস।
অনেকের ভাষায় তিনি বিদ্রোহী কিংবা বহিষ্কৃত। তবে তিনি এলাকায় বেশ প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন হিসেবে শিকলবাহায় রয়েছে তাঁর প্রচুর জনসমর্থক। সুষ্ঠু নির্বাচনে এই ইউনিয়নে বিপক্ষীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আব্দুল করিম ফোরকানের বিজয়ের পথ ততটা মসৃন নয়।
কেননা অতীতে তিনি কোন মেম্বার বা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেননি। জনসেবায়ও এলাকায় পরিচিতি কম।
অন্যদিকে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রার্থী। স্থানীয় ভোটারের মন্তব্য প্রশাসন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে হয়। তবে বিজয়ী হবে আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইব্রাহিম মিয়া (আনারস), এটিএম হানিফ (মোটরসাইকেল), মোহাম্মদ আলী (চশমা), নাসির আহমেদ (ঘোড়া) প্রতীক পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে সবচেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী বেশি। এখানে মূলত ব্যালটের লড়াই হবে নৌকা আর চশমার মধ্যে।
নৌকা প্রতীকের সোলায়মান তালুকদার যুবলীগ সভাপতি হিসেবে চমক দেখিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ডিঙিয়ে নৌকা মনোনয়ন ছিনিয়ে আয়ত্বে নেন। অতীতে কখনো তিনি স্থানীয় নির্বাচনে না আসলেও এলাকায় রয়েছে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা। শুধু চরলক্ষ্যা নয়, পুরো উপজেলায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো অতীত ইতিহাস রয়েছে।
তাঁর বিপক্ষীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান চশমা প্রতীকের মোহাম্মদ আলী। যিনি গতবারে নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এবারে নৌকা না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হলেন। তবুও মাঠে ময়দানে সরব। গেল দু’বারের বিজয়ী চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ আলীর রয়েছে বেশ কিছু জনসমর্থক আর ভোটার। এরমধ্যে বয়স্ক আর মহিলা ভোটারের সংখ্যা বেশি।
সুষ্ঠু নির্বাচনে এখানে নৌকা প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে ঘাম ধরাতে হবে বেশ। কেননা চশমা মার্কার প্রার্থী কোন দুর্বল জনপ্রতিনিধি নয়। যদিও অতীতে কখনো মোহাম্মদ আলী নৌকা প্রতীকের মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদারের মতো শক্ত প্রার্থীর মুখোমুখী হয়ে নির্বাচন করেননি। এবারে চরলক্ষ্যায় নির্বাচন হবে হাড্ডাহাড্ডি। ব্যালট যুদ্ধে যে যাকে বিজয়ী করতে পারেন।
জুলধা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী মুহাম্মদ নুরুল হক (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিক আহমদ (আনারস),মো. মুছা (চশমা) প্রতীক পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফিক আহমদের সাথে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাজী মুহাম্মদ নুরুল হকের। দুজনেই বয়োজৈষ্ঠজন। সেক্ষেত্রে জনগণ চাইলে সুবিধা পেতে পারেন চশমা প্রতীকের তরুণ প্রার্থী মো. মুছা। দুই তিন গ্রামে তার বেশ ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অপর এক অসমর্থিত সূত্র বলছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিক আহমদের ভোট ব্যাংকে কিছুটা আঘাত করেছে তারই পূত্রের কিছু অনিয়ম আর কর্মকান্ড। যা এলাকার লোকজন মনে রেখেছে। যা বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে ব্যালটে এটাই জানাচ্ছেন এলাকার লোকজন। সব মিলিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে এখন নৌকার প্রার্থী। যদিও তিনি বারবার দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পাবার আকুতি জানালেও দূরত্ব অনেকের।
সচেতন মহলের দাবি, কর্ণফুলীর তিন ইউনিয়নে দলীয় প্রতীক কিংবা দলীয় নেতা দেখে সাধারণ ভোটারেরা ভোট প্রদান করবে না। কারণ স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রভাবের চেয়ে শক্ত বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আঞ্চলিকতার টান আর আত্বীয়তা। স্থানীয় নির্বাচনে ভোট প্রয়োগে দলের চেয়ে নাড়ির চান বেশি প্রাধান্য পায়। সেটাই অনেক হিসাব নিকাশে পার্থক্য গড়ে দেবে।
আর তিন ইউনিয়নে পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার বেশি।
পূর্বের নির্বাচন আর অতীত রেকর্ড মতে জনগণ এখন ভোট প্রদানে অনীহা। পুরো উপজেলায় ৪ ইউপি নির্বাচনে ২১৯ প্রার্থী। এর মধ্যে শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, বড়উঠান ও জুলধায় চেয়ারম্যান পদে ১০ জন, সংরক্ষিত ১২টি মহিলা আসনে ৩৯ জন এবং ৩৬ টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭০ জন প্রার্থী। ইতোপূর্বে বড়উঠান ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের প্রার্থী মোঃ সাইফুদ্দীন মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হলেন মোহাম্মদ দিদারুল আলম।
একই ইউনিয়নে সংরক্ষিত আসনে ১,২, ৩ ওয়ার্ডের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জোবাইদা আক্তার। বিষয়টি জানিয়েছেন শিকলবাহা-চরলক্ষ্যার রিটার্নিং অফিসার মকর চাকমা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার এবং বড়উঠান জুলধার রিটার্নিং অফিসার আব্দুল শুক্কুর।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার অফিসার আব্দুল শুক্কুর আচরণ বিধি মেনে সকল প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণার অনুরোধ জানিয়ে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বিপি/কেজে