বাংলাপ্রেস ডেস্ক: সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে সবার আগে বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হককে এনে সবার আগে বিচার করা উচিত। তিনি যে রায় দিয়েছেন তার জন্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। এর জন্য দায়ী একমাত্র তিনিই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না, তখন তিনি রায় লিখে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। খায়রুল হকের ষড়যন্ত্রের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে।’
এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশবিরোধী সরকার, গণতন্ত্রবিরোধী সরকার, স্বাধীনতাবিরোধী সরকার। আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর চাই। আপনার মতো শেয়ালের অধীনে নির্বাচন চাই না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বারবার খেয়ে ফেলবেন। ১৪ সালে খেয়েছেন, ১৮ সালে খেয়েছেন। আবারও আরেকবার খেতে চেয়েছেন। প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন নিজের মতো সাজাচ্ছেন। মন্ত্রীদের পিএসকে প্রশাসক বানাচ্ছেন। জনগণ জেগে উঠলে এসব থাকবে না।’
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সমমনা ৩৬টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে যৌথ ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যে সংগ্রামে নেমেছি, এই সংগ্রাম আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম। এই সংগ্রাম বিএনপির নয়, তারেক রহমান সাহেবের নয়, বেগম খালেদা জিয়ার নয়, আমাদের কারোরই নয়, এই সংগ্রাম এ দেশের আপামর জনগণের, ১৮ কোটি মানুষের সংগ্রাম। কারণ, আমরা আমাদের অধিকারটা ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা একটা ভোট দিতে চাই, সেই ভোট আমরা যাকে খুশি তাকে দেব, সেখানে আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করব।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ ভয়াবহ লুটেরা, একটি ফ্যাসিস্ট… তাদেরকে সরিয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন আমরা চাই। সেই লক্ষ্যে বন্ধুগণ, আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো, যারা এতদিন ধরে যৌথভাবে কর্মসূচি করে আসছি, এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তারা সর্বসম্মতভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আজকে আমরা একটা যৌথ ঘোষণা দেব, যার যার জায়গা থেকে। আমাদের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল, প্রায় ৩৬টি দল, জোট আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সর্বসম্মতভাবে। সেই সিদ্ধান্তটি কি, আমি আপনাদের পড়ে শোনাই। যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের একদফার যৌথ ঘোষণা। একদফা, আর কোনো দফা নাই।’
এক দফার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড় তোলা ও সফল করার ঘোষণা প্রদান করছে।’
আজ দুপুর ২টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ শুরু হয়।সমাবেশের জন্য কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ছয়টি ট্রাক দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। চলমান সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি।
সমাবেশের ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের একদফা যৌথ ঘোষণা’।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিপি/কেজে