নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি ছাত্র সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের জন্য এককভাবে ইসরায়েলকেই দায়ী করেছে। তবে হার্ভার্ডের সাবেক শিক্ষার্থীরা এ বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এমনকি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন অনেক অ্যালামনাই।
যদিও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নারী–শিশুসহ অন্তত ৯০০ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর ওই বিবৃতির বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট বাই হার্ভার্ড প্যালেস্টাইন সলিডারিটি গ্রুপস অন দ্য সিচুয়েশন ইন প্যালেস্টাইন’ শীর্ষ যৌথ বিবৃতিতে ৩৪টি ছাত্র সংগঠন স্বাক্ষর করেছে। ইসরায়েলের নিন্দা জানানোর মধ্যে শামিল হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। এই মানবাধিকার সংস্থাটি আইভি লিগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হলো আইভি লিগেরই একটি প্রতিষ্ঠান।
ফিলিস্তিনের পক্ষে বাংলাদেশিসহ ৩৪ সংগঠনের বিবৃতিতে হার্ভার্ডে উত্তেজনাফিলিস্তিনের পক্ষে বাংলাদেশিসহ ৩৪ সংগঠনের বিবৃতিতে হার্ভার্ডে উত্তেজনা
যুক্তরাষ্ট্রের আটজন প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান চারজন বিচারপতি হার্ভার্ডের সাবেক শিক্ষার্থী।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের এই আকস্মিক হামলা অকারণে বা হাওয়া থেকে হয়নি। ইসরায়েলি সরকার ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের দুই দশকের বেশি সময় ধরে একটি ‘উন্মুক্ত জেলখানার’ মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য করছে। আমরা এখানে স্বাক্ষরকারী ছাত্র সংগঠনগুলো চলমান সহিংসতার জন্য এককভাবে ইসরায়েলি বর্ণবাদী রাষ্ট্রকেই দায়ী মনে করি।
স্বাক্ষরকারী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মুসলিম ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থক গ্রুপের পাশাপাশি হার্ভার্ড জিউস ফল লিবারেশন এবং আফ্রিকান আমেরিকান রেসিস্ট্যান্স অর্গানাইজেশনের মতো বিভিন্ন গ্রুপও রয়েছে।
গতকাল সোমবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত কয়েকজন অ্যালামনাই ছাত্রসংগঠনগুলোর ফিলিস্তিনের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট লরেন্স সামারস, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সরকারের ট্রেজারি সেক্রেটারি (অর্থমন্ত্রী) হার্ভার্ডের বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। কারণ কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিবৃতির যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও বেশ কয়েকজন হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট।
সামারস এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন ‘হার্ভার্ডের নেতৃত্বের এই নীরবতাই…হার্ভার্ডকে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতি নিরপেক্ষ অবস্থানের জায়গা নিয়ে গেছে। তাদের অবস্থানে আমি অসুস্থবোধ করছি।’
নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য এবং হার্ভার্ডের স্নাতক এলিস স্টেফানিক এমন বিবৃতিকে ‘ঘৃণ্য এবং জঘন্য’ বলে অভিহিত করেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ, হার্ভার্ড ল স্কুলের স্নাতক। তিনি এক্স–এ লিখেছেন, ‘হার্ভার্ডের আসছে ঘটছেটা কী!’
ফিলিস্তিন–ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিন গে এবং ১৫ জন ডিনসহ সিনিয়র নেতৃত্ব গতকাল সোমবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘এই সপ্তাহান্তে ইসরায়েলের নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামাসের হামলায় যে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে, এতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি।’ তবে তাঁরা বিবৃতিতে ছাত্র সংগঠনের বিবৃতির প্রসঙ্গটি সরাসরি উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াও এড়িয়ে গেছেন।
বিপি।এসএম