Home আন্তর্জাতিক ইসরায়েলের নিষ্ঠুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব!

ইসরায়েলের নিষ্ঠুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব!

গাজা নিয়ে নিষ্ঠুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলার মধ্যেই ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সসহ আরব দেশগুলো এর কড়া সমালোচনা করেছে। ফলে ইসরায়েলের কট্টরপন্থীদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

by বাংলাপ্রেস ডেস্ক
A+A-
Reset

বাংলাপ্রেস ডেস্ক: ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ শেষ হলে ভবিষ্যতে কীভাবে গাজা শাসন করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা গত সপ্তাহে প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি বলেন, ঐ এলাকায় ফিলিস্তিনি শাসন থাকবে সীমিত। হামাস আর গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং ইসরায়েল সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি যখন এই পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন, তখন গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। প্রায় ২৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কেবল হত্যা নয়, কবরস্থান থেকে মরদেহও চুরি করা হচ্ছে। ফলে কবরস্থানও ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতা থেকে বাদ যাচ্ছে না। অনেক ফিলিস্তিনিকে আটক করা হচ্ছে এবং অর্ধনগ্ন করে নির্যাতন করা হচ্ছে।

গ্যালান্টের বর্তমান চতুর্মুখী পরিকল্পনার আওতায় গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে থাকবে। বহুজাতিক একটি বাহিনী ঐ এলাকার পুনর্গঠনে কাজ করবে। কারণ ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় প্রতিবেশী দেশ মিশরের একটি ভূমিকা থাকবে তবে তা কী হবে, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু নথিতে বলা হয়েছে যে, পুরো এলাকা পরিচালনার দায়িত্ব ফিলিস্তিনিদেরও দেওয়া হতে পারে। গ্যালান্ট বলেন, গাজার বাসিন্দারা ফিলিস্তিনি, তাই ফিলিস্তিনি একটি কাঠামো নেতৃত্বের দায়িত্বে তারা থাকবে। কিন্তু এখানে শর্ত থাকবে যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি কোনো শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড বা হুমকি আসবে না।

গ্যালান্টের পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে যে, গাজায় পরবর্তী ধাপের যুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে—সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী— আইডিএফ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আরো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এগিয়ে যাবে। সেখানে অভিযান চালানোর পাশাপাশি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা এবং বিমান ও স্থল হামলা চালানো হবে। দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামাসের নেতাদের খোঁজ পেতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

গাজাবাসীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ‘মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক উপায়’ খুঁজে বের করতে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার মন্ত্রিসভার একজন উগ্র ডানপন্থি মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, জাপানি নাগরিকদের মনোবল ভেঙে তাদেরকে পরাজিত করার জন্য আমেরিকা যা করেছিল গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও তেল আবিবকে একই আচরণ করতে হবে। উগ্র মন্ত্রী অ্যামিচাই এলিয়াহু ইসরায়েলের ১০৩ এফএম রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এ আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে আল-আকসা তুফান অভিযান চালানোর পর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে গাজা উপত্যকাকে পিষে ফেলার হুমকি দিয়েছিল ইহুদিবাদী ইসরায়েল। কিন্তু তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও গাজা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছে না তেল আবিব। এ কারণে গাজাবাসীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের নানা মুনি নানা মত দিয়ে যাচ্ছেন। উগ্রবাদী মন্ত্রী এলিয়াহু তার সাক্ষাত্কারে বলেন, আগে গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের মনোবল ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস ও তাদেরকে বাস্তুচ্যুত করে তাদের জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিতে হবে। ইসরায়েলি মন্ত্রী বলেন, গাজাবাসীর সামনে এই উপত্যকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কোনো বিকল্প রাখা যাবে না। তারা যাতে এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয় সে ব্যবস্থা করতে  হবে।

ইসরায়েলের পরিকল্পনা প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র এর বিরোধিতা করেছে। দেশটি বলেছে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনিদের হাতেই থাকবে। এর ভার ইসরায়েলের নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ এসেছে ফ্রান্সের কাছ থেকে। যদিও এর আগে ফ্রান্স ইসরায়েলের গাজায় হামলাকে সমর্থন দিয়েছিল। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোন্না বলেছেন, গাজার ভবিষ্যত্ নির্ধারণের অধিকার ইসরায়েলের নেই। গাজা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড। আমাদের আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতিতে ফিরে যেতে হবে এবং এই নীতিকে সম্মান জানাতে হবে। ফরাসি মন্ত্রী আরো বলেন, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এই ধরনের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন। এদিকে লেবাননসহ অন্যান্য অঞ্চলে যেন যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে—সেদিকে নজর রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আরব দেশগুলোও ইসরায়েলের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে।

কেবল আন্তর্জাতিক বিশ্ব নয়, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এই আলোচনায় নিয়ে ইসরায়েলের মধ্যে গভীর মতভেদ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু কট্টর ডানপন্থি সদস্য বলেছে, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের গাজা ছেড়ে নির্বাসনে চলে যেতে বলা উচিত। আর ঐ এলাকায় ইহুদিবসতি আবার গড়ে তোলা উচিত। বিতর্কিত এই প্রস্তাবকে চরমপন্থি এবং অকার্যকর বলে উল্লেখ করে তা বাতিল করে দিয়েছে ঐ এলাকার অন্য দেশগুলো যাদের মধ্যে ইসরায়েলের মিত্রদেশও রয়েছে। যদিও গ্যালান্টের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তার অন্য সহকর্মীদের আনা প্রস্তাবের তুলনায় বেশি বাস্তবসম্পন্ন বলে মনে করা হচ্ছে, তারপরও হয়তো এই প্রস্তাব বাতিল করে দেবেন ফিলিস্তিনি নেতারা। তারা বলছেন, এই বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ঐ এলাকা পরিচালনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গাজাবাসীর থাকা উচিত। নেতানিয়াহু অবশ্য গাজা কীভাবে শাসন করা হবে তা নিয়ে জনসমক্ষে এখনো কোনো ধরনের মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন যে, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হওয়া গাজার এই যুদ্ধ এখনো কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।

গ্যালান্ট যুদ্ধপরবর্তী গাজার জন্য যে পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন তার তীব্র সমালোচনা করেন এলিয়াহু। তিনি বলেন, গাজায় এমন মানসিকতাসম্পন্ন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইতামার বেন-গাভিরের নেতৃত্বাধীন উগ্র ডানপন্থি ওজমা ইয়েহুদিত পার্টির এই মন্ত্রী গত নভেম্বর মাসে গাজা উপত্যকায় পরমাণু বোমা নিক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইসরায়েলের এই পার্টি গাজা উপত্যকার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে আবার ইহুদি বসতি নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে আসছে।

গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের জীবিত উদ্ধার করার দাবিতে রাজধানী তেল আবিবসহ ইসরায়েল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের পতন এবং গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শনিবার রাতে তেল আবিবের ‘পণবন্দি’ স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন। বিক্ষোভে গত ৭ অক্টোবরের আল-আকসা তুফান অভিযানে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের স্বজনরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। ঐ বিক্ষোভ সমাবেশ সম্পর্কে তেল আবিব থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানান, নেতানিয়াহু সরকারের পতন ও গাজা যুদ্ধ বন্ধের যে দাবি তোলা হয়েছে তা নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ, যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা এ বিষয়ে একমত ছিল যে, যখন গাজায় যুদ্ধ চলছে এবং সেখানে পণবন্দিরা আটক রয়েছে তখন ইসরায়েলে ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

বিপি/টিআই

 

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী