Home কলাম ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ কীভাবে থামানো যায়

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ কীভাবে থামানো যায়

by bnbanglapress
Published: Updated:
A+A-
Reset

ছাবেদ সাথী

গত রাতে কানাডার আলবার্টায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন থেকে হঠাৎ করেই বেরিয়ে এলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ঘোষণা ছিল ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ নিয়ে জরুরি কাজ আছে, যদিও অনেকেই মনে করছেন এটি কেবলমাত্র নাটকীয়তা তৈরির কৌশল।

ইসরায়েল এই যুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত সফল হয়েছে। দেশটি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং গুরুত্বপূর্ণ ইরানি সামরিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালিয়েছে। তেহরানের চারপাশে একটি নিরাপদ আকাশপথ তৈরি করেছে তারা এবং গতকাল ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সময় হামলা করেছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কোনো কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা বোঝায় যে ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলাগুলো পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি সফল ছিল। এমনকি ইউক্রেনের সাম্প্রতিক রাশিয়ার ভেতর থেকে চালানো ড্রোন হামলার মতো করে, ইসরায়েলও ১২ জুন ইরানের অভ্যন্তর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ও প্রতিরক্ষা অবস্থানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো তুলনামূলকভাবে দুর্বল, একসঙ্গে ৩০ থেকে ৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলেও ধীরে ধীরে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ভেদ করে ঢুকছে। গতকাল ২০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলে আঘাত হানে। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন, কয়েকশো আহত এবং ১৫,০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—যা ইসরায়েলিদের জন্য অভূতপূর্ব।

ইসরায়েল দাবি করছে, তারা ইরানের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তবে যদি ইরান একবারে ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে অতিক্রম করে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা সৃষ্টি করবে—যা যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলবে।

এই মুহূর্তে ইরান ও তার আঞ্চলিক প্রভাব ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানপন্থী “অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স” কার্যত ভেঙে পড়েছে—এমনকি হুতিরাও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কিন্তু গাজা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বলছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধ শেষ করার কোনো সুপরিকল্পিত রূপরেখা দেন না। যুদ্ধ কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে—এমন বক্তব্য বিপজ্জনক।

যুদ্ধ আরও বড় পরিসরে গড়ে ওঠার আগে—যেমন ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে বা মার্কিন স্বার্থে আঘাত করতে পারে—ট্রাম্পের উচিত নেতানিয়াহুকে বিজয় ঘোষণা করতে বাধ্য করা। এ জন্য একটি স্বল্প-মেয়াদি সময়সীমা দিয়ে ইরানকে জানানো উচিত যে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) যেন তাদের পরমাণু অবকাঠামো—নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইসফাহান—ধ্বংস করে দিতে পারে।

এই ধরনের ফলাফল ইউরোপ, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং মিশরের পক্ষেও গ্রহণযোগ্য হবে।

ইরানকে উৎসাহিত করার জন্য, যুক্তরাষ্ট্র জানাতে পারে যে তারা যদি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না করে, তবে ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের ‘MOAB’ বা “মাদার অব অল বম্বস” দিয়ে ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলবে। ফোরদো হলো ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক ঘাঁটি, যা ভূমির ২০ তলা নিচে পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। এটি এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলার বাইরে রয়ে গেছে।

যদি ইরান সম্পূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে না চায়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে—সরকার পরিবর্তনের দিকে যাত্রা।

এখনই ট্রাম্পের পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক বাংলা প্রেস।

[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

banglapress24

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

১১১ শেলডন রোড # ১৮৮৪, ম্যানচেস্টার, কানেকটিকাট ০৬০৪২

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৫ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী