Home কলাম যুক্তরাষ্ট্রে এখনই অভিবাসন সাধারণ ক্ষমা প্রয়োজন

যুক্তরাষ্ট্রে এখনই অভিবাসন সাধারণ ক্ষমা প্রয়োজন

by bnbanglapress
Published: Updated:
A+A-
Reset

 

ছাবেদ সাথী
যুক্তরাষ্ট্রে আজ অভিবাসন সংকট চরমে, অথচ কার্যকর সমাধান হিসেবে ‘সাধারণ ক্ষমা’র কথা কেউ বলছে না। প্রেসিডেন্ট রেগান একবার ক্ষমা দিয়েছিলেন, বুশ চেষ্টাও করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অবৈধ অভিবাসীদের গণনির্বাসন না সম্ভব, না অর্থনৈতিকভাবে টেকসই। আমেরিকার কৃষি, নির্মাণসহ বহু খাত অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল। অথচ এই শ্রমিকদের শোষণ করে একটি ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ গোষ্ঠী তৈরি করা হচ্ছে। এ থেকে বের হতে হলে চাই এককালীন সাধারণ ক্ষমা, পাশাপাশি অবৈধভাবে নিয়োগদাতাদের শাস্তির কঠোর বিধান। এতে কর রাজস্ব বাড়বে, নির্বাসনের খরচ কমবে, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার হবে সবচেয়ে বড় কথা, অবৈধ শ্রমিকদের আইনি মর্যাদা দিয়ে একটি মানবিক ও বাস্তবসম্মত অভিবাসন নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
আজকের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে অভিবাসন ইস্যু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ সেখানে আমরা প্রতিটি সমাধান খুঁজছি, শুধু সাধারণ ক্ষমা বাদে।
প্রশ্ন হলো, কেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা একসঙ্গে বসে অভিবাসন সাধারণ ক্ষমার কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন না, যেখানে এটিই হতে পারে সেই কাঠামোগত সংস্কারের প্রথম ধাপ, যা আমেরিকাকে সত্যিই দরকার?
হ্যাঁ, আমি জানি, আজকের দিনে একজন প্রেসিডেন্সিয়াল বা কংগ্রেসনাল প্রার্থী যদি ‘অ্যামনেস্টি’ শব্দটিও উচ্চারণ করেন, তবে সেটা তার রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল। তবুও, আমরা যে পথে এগোচ্ছি যেখানে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা অর্থহীন নির্বাসনের মাধ্যমে আমেরিকানদের মৌলিক অধিকারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন-তা আর চলতে পারে না। একই সঙ্গে, কিছু ডেমোক্র্যাট যেভাবে নিষ্ক্রিয় থেকেছেন, সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
আমেরিকানরা আজ সেই বাস্তবতার সঙ্গে লড়ছেন যেখানে হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করছে, অভিবাসন শুনানিতে উপস্থিত ব্যক্তিদের আটকে ফেলা হচ্ছে, আর কর্মস্থলে অভিযান চালানো হচ্ছে। যারা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ স্লোগানে উল্লসিত ছিলেন এই ভেবে যে ট্রাম্প লক্ষ লক্ষ মানুষকে জোর করে ফেরত পাঠাবেন, তাদের অনেকেই এখন হতবাক হয়ে দেখছেন-বন্ধুবান্ধব আর প্রতিবেশীরাই লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্প অনেক কিছু বললেও লক্ষ লক্ষ মানুষকে ফেরত পাঠাননি। এবং আজ যারা সবচেয়ে বেশি টার্গেট হচ্ছেন সশস্ত্র ইমিগ্রেশন এজেন্টদের দ্বারা-তারা মূলত কর্মজীবী, ছাত্র, এবং গির্জায় নিয়মিত যাতায়াতকারী মানুষ। কেন? কারণ আমেরিকায় বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের বিশাল সংখ্যকই এই দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, ‘দখলদার’ নয়-যেমনটি কেউ কেউ দাবি করেন।
আমি বলছি না সমস্যাকে অগ্রাহ্য করতে হবে, যেমনটি কিছু উদারপন্থী করেন। অবৈধ অভিবাসন ভুল-এ কথা মানতেই হবে। কিন্তু আমাদের এই সত্যটাও স্বীকার করতে হবে যে আমরাই এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করেছি, যেখানে কালোবাজারি শ্রমশক্তি ও উৎপাদন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হয়। ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত গণনির্বাসন আমাদের দেশকে যে কোনো শুল্কের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। জাতীয় ঋণ ও ঘাটতি বাড়বে, এবং মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ট্রাম্প যেটাকে বিক্রি করেছিলেন কোটি কোটি ভোটারের কাছে, তা বাস্তবে অসম্ভব-কারণ বহু ব্যবসা, আন্তর্জাতিক করপোরেশন থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পর্যন্ত, অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করেন।
আমরা একদিকে অভিবাসীদের ‘খলনায়ক’ বানিয়ে ফেলি, অথচ যারা তাদের নিয়োগ দেয়, সেই আমেরিকানদের ভূমিকা এড়িয়ে যাই-এটাই বাস্তব।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডেসান্টিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সময়, এবং সাম্প্রতিককালে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে চেয়েছেন ‘ই-ভেরিফাই’ সিস্টেম ব্যবহার করতে। যুক্তি সোজাসাপ্টা-যেসব ব্যক্তি অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ দিচ্ছেন, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। যদি সরকার নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা নিশ্চিত করে, তাহলে সমস্যার একটা বড় অংশ আপনা-আপনি কমে যাবে।
তবে এই পদ্ধতিও একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি-জাতীয়ভাবে ই-ভেরিফাই ব্যবহারের ফলে অর্থনীতি বহু বছর ধরে ধাক্কা খাবে। এ কারণেই অনেক রাজনীতিক ব্যবসাপতিদের শাস্তি দেওয়ার প্রশ্নে পিছিয়ে যান।
আমরা একদিকে এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে অবৈধ অভিবাসী শ্রমের ওপর নির্ভরতা আছে, অন্যদিকে গণনির্বাসন ও ই-ভেরিফাই আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে-তাহলে কি কিছুই করব না?
না, কিছু করতেই হবে। একজন উদারপন্থী হিসেবে আমি বলব, অবৈধ শ্রমিকদের শোষণ করা হয়, তাদের ব্যবহার করা হয় শ্রমিক সংগঠন দুর্বল করতে, এবং তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে পড়ছেন। কোনো ডেমোক্র্যাটেরই এ নিয়ে স্বস্তিতে থাকার কথা নয়। সমাধান হলো এককালীন একটি সাধারণ ক্ষমা-যা অবশেষে আমাদের অভিবাসন সংস্কারের পথ তৈরি করতে পারে।
রেগানের সাধারণ ক্ষমায় একটি মারাত্মক ভুল ছিল-নিয়োগকর্তাদের শাস্তি এবং আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তবু এই ক্ষমার মাধ্যমে বহু মানুষ ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আরও অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছিল। তারা বৈধ অভিবাসীদের ‘লাইন কাটা’র সুযোগ পায়নি, বরং তাদের সন্তান-নাতিরা আজ আমেরিকার মূলধারার অংশ।
জর্জ ডব্লিউ বুশও একটি সাধারণ ক্ষমার জন্য চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার নিজের দলই তাকে ব্যর্থ করে দেয়। হয়তো ‘অ্যামনেস্টি’ শব্দটি তাদের ভয় দেখিয়েছিল, কিংবা হয়তো বুশ অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগদাতাদের (অর্থাৎ, বড় ব্যবসায়িক অনুদানদাতাদের) শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন-যা কেউ চায়নি। ফলে কিছুই হয়নি, এবং সেই শোষণপ্রবণ ব্যবস্থাই আজও চলছে।
ট্রাম্প চাইলে একটি বিশাল জয় পেতে পারেন-একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে, পাশাপাশি নিয়োগকর্তাদের ওপর কঠোর শাস্তির বিধান রেখে। এতে করে আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস হবে না, বরং কর রাজস্ব বাড়বে, নির্বাসনের খরচ কমবে, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ প্রকৃত অপরাধীদের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে, আর সীমান্ত রক্ষীরা মাদক পাচার এবং আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে আরও কার্যকর হতে পারবে। কারও লাইন কাটা হবে না, নিয়োগদাতাদের কঠোর শাস্তি ভবিষ্যতের স্রোত ঠেকাতে সহায়তা করবে।
আমি জানি, অনেকের কাছেই সাধারণ ক্ষমা মানে যেন বেআইনি কাজের পুরস্কার-যেমনটি রেগানের সময়েও অনেকেই ভেবেছিলেন। কিন্তু আমরা এই ব্যবস্থাকে এভাবেই চলতে দিতে পারি না। আর ‘লক্ষ লক্ষ মানুষকে ফেরত পাঠানো হবে’- এই ধারণাটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিভ্রম।
অভিবাসন সংস্কার অপরিহার্য। আর প্রথম ধাপ হলো-একটি পরিকল্পিত, কাঠামোবদ্ধ সাধারণ ক্ষমা।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতি পর্যবেক্ষক। সম্পাদক বাংলা প্রেস।

[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

banglapress24

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

১১১ শেলডন রোড # ১৮৮৪, ম্যানচেস্টার, কানেকটিকাট ০৬০৪২

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৫ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী