মোঃ মামুনুর রশিদ (মিঠু), লালমনিরহাট থেকে : ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে দুঃখের সাগরে ভেসেছিলেন মরিয়ম। ভেবেছিলেন স্বামীর সংসারেই সুখের মুখ দেখবেন। কিন্তু তা আর হলো না। স্বামীর ছুড়িঘাতে হাসপাতালে ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বাবার বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে।
এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সেবকদাস গ্রামের মৃত মোস্তফা আলীর মেয়ে মরিয়ম আক্তারের(২৩) বয়স যখন ৫ বছর তখন বাবাকে হারিয়ে দুলাভাই রিয়াজুল ইসলামের নিকট বড় হন। দুলাভাই লালন-পালনের পাশাপাশি সু শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। মরিয়ম বিয়ের উপযুক্ত হলে প্রায় ১ বছর আগে পাশের ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মোঃ সোহাগ মিয়ার সাথে জমি বিক্রি করা ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেন। কথা থেকে যায় যৌতুক বাবদ আরো টাকা দিতে হবে তবে নির্ধারণ ছিলো না টাকার অংক।
বিয়ের কিছুদিন পরেই মরিয়মকে তার দুলাভাইয়ের বাড়িতে রেখে ঢাকা চলে যান স্বামী সোহাগ। তারপর থেকে স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করেন তিনি। গত ঈদে ঢাকা থেকে ফিরে বাবা আব্দুস সামাদকে পাঠিয়ে দেন স্ত্রীকে বাড়িতে আনার জন্য।
ঈদ ছুটি কাটিয়ে ঢাকা চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে স্বামীর সাথে ঢাকা যাবার বায়না ধরেন মরিয়ম। আর এই বায়নাই কাল হয়ে দারায় মরিয়মের।
গত ৪ আগষ্ট শশুর বাড়িতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন মরিয়ম। প্রতিবেশী কেন্দু সহ অন্যরা নির্যাতনে বাধা দিলে তাদের উপরই ক্ষিপ্ত সোহাগ,বোন সাহেরা খাতুন (৩৫) , ভাই আলম মিয়া(৩৭),শাহিনুর আলম(৪২),সাইফুল ইসলাম(২৫), শশুর আব্দুস ছামাদ(৬৫),ভাবি লাইজু (৩৮),আনিছা বেগম(৩২)।
এক পর্যায়ে ঘর হতে ছুড়ি নিয়ে মরিয়মের কমরে আঘাত হানেন ঘাতক স্বামী সোহাগ। ছুড়িঘাতে মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে রক্তাক্ত মরিয়ম। তাকে ফেলে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীরা ঘাতক সোহাগকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে আহত মরিয়মকে প্রথমে কালীগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে পরে অবস্থা আশংকাজনক হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ৭ দিন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করে গতকাল ১০ আগষ্ঠ (সোমবার) মারা যায় মরিয়ম। মরদেহ রংপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরিয়মের নিজ বাড়ি কালীগঞ্জের সেবকদাস গ্রামে আনা হলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে নির্যাতন ও হত্যার সাথে জরিত সকালের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেন।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরজু মোহাম্মদ সাজ্জাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান ঘাতক সোহাগ গ্রেফতার রয়েছে এবং জড়িত অন্যদের গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বিপি/আর এল