কক্সবাজার প্রতিনিধি: ক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের দূর্ধর্ষ জলদস্যু ও ভূমিদস্যু সর্দার, সন্ত্রাসী মনোয়ারুল ইসলাম ওরফে মুকুল আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। মুকুল জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে ভূমিহীনদের জমি দখল, সাগরে জলদস্যুতা, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও বিভিন্ন অপকর্মে জড়াতে নতুন আঙ্গিকে সক্রিয় হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যায়।
পুনরায় বাহিনী গঠন করে কুতুবদিয়া দ্বীপকে আবারো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে লিপ্ত রয়েছেন। ফলে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার সাধারণ মানুষ ও জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ শে নভেম্বর ভূমিহীনদের জমি দখল করতে গেলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কুতুবদিয়ার ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে স্থানীয় জনতা মনোয়ারুল ইসলাম মুকুল ও পাঁচ ভূমিদস্যুকে গণধেলাই দিয়ে আহত করেন। ২০১৭ সালে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মুকুল বাহিনীর প্রধান কুতুবদিয়া দ্বীপের আরেক সন্ত্রাসী মো. ফেরদৌস (৪০)। ওই বছরের মে মাসে বড়ঘোপ আজম কলোনী গ্রামের ভূমিহীন মানুষের জমি দখলে নিতে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় মুকুল বাহিনী।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২২ জুন র্যাব-৭ এর হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ধরা পড়ে গডফাদার মুকুল। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬২১ রাউন্ড গুলি। মুকুল এর বিরুদ্ধে অস্ত্র, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতার অপরাধে ১১টি মামলা রয়েছে। তৎমধ্যে কুতুবদিয়া থানার অস্ত্র মামলা নং- ৯, তারিখ ২২ জুন ২০১৭, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং- ১৪, তারিখ ১৯ সেপ্টম্বর ২০১৮, সিআর দ্রুত বিচার মামলা নং ০৩/১৯, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং-০৫, তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, সিআর মামলা নং ১২০/১৭, সিআর মামলা নং-১২২/১৭, সিআর মামলা নং-২০৮/১৮, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং-০২(১১)১৮, কুতুবদিয়া থানা মামলা নং-১(৯)১৮।
আলোচিত এই জলদস্যু সর্দার মনোয়ারুল ইসলাম মুকুল এক সময় ফ্রিডম পার্টি করতেন। পরে জাতীয় শ্রমিক লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিলেও বর্তমানে আবার নতুন মোড়লে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামক একটি সংস্থার কুতুবদিয়া শাখার সভাপতি পরিচয় দিয়ে অপরাধের ডালপালা বিস্তার করতে শুরু করেন। বিষয়টির খবর পেয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেন মনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুকুল মানবাধিকার কমিশনের কেউ নয়।
অনুসন্ধানে আরো তথ্য মিলে, মুকুল এর পিতা ডা. জাবের আহমেদ চৌধুরী ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে বিপদগ্রস্ত করেন। এলাকার লোকজন তাকে রাজাকার পুত্র মুকুল নামে চেনেন। এছাড়াও তার আরেকটি পরিচয় হলো মামলা ব্যবসায়ি মুকুল। প্রায় সময় তিনি মেম্বার-চেয়ারম্যান, পুলিশ কর্মকর্তা এবং স্বয়ং ইউএনও’র বিরুদ্ধেও উচ্চ আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ খবর পাওয়া যায়, ১লা সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসীদের গডফাদার খ্যাত এই মুকুল কুতুবদিয়া থানার সাবেক ওসি দিদারুল ফেরদৌস, এসআই জয়নাল, এসআই আওরঙ্গ জেব, কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রেসক্লাবের সভাপতি কে আসামী করে কুতুবদিয়া আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-সি.আর ১৫২ /২০ইং। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। বাদী মুকুলের পক্ষে মামলা শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রাসেল সিকদার, অ্যাডভোকেট আইয়ুব হোছাইন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান।
অপরদিকে, দ্বীপ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নজির স্থাপনকারি তৎকালীন ওসি দিদারুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সচেতনমহল ও পেশাজীবি মহলসহ সাধারণ জনগণের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লেমশীখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার হোসাইন বলেন, মনোয়ারুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধে অনেক অপরাধ কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। তার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। একজন দাগী আসামী হয়ে তিনি থানার একজন সফল ওসির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। যা দ্বীপের মানুষকে হতাশ করেছে। কারণ সাবেক ওসি দিদারুল ফেরদৌস কুতুবদিয়া থাকাকালে দ্বীপের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি করেছিলো।
কুতুবদিয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল কোম্পানী বলেন, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আমরা এখন মুকুল আতঙ্কে ভুগতেছি। যেকোন সময় তিনি সাগরে বড় ধরণের জলদস্যুতা শুরু করেতে পারে। ইতোমধ্যে সে পুনরায় বাহিনী গঠনের জন্য তৎপতা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে জেলার উর্ধ্বতন প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন মালিক সমিতির লোকজন।
বিপি/আর এল