সুলতানা মাসুমা, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ। এটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া কাজটি ৩০ জুনের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা বিলম্বিত হয়েছে। আগামী বছরের ২২ জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেছে এলজিইডি।
তবে ভবনটির স্থান নির্বাচন ও এর প্রবেশমুখ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের দাবি পরিকল্পিতভাবে ভবনটিকে দক্ষিণমুখী করে এর মূল সৌন্দর্য নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ভবনের সম্মুখ অংশে জমির মূল মালিকদের ৩ শতাংশ বাদ রেখে অধিগ্রহণ করায় সেখানে স্থাপনা উঠলে ভবনটি মূল সড়ক থেকে দেখা যাবে না। এ নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁরা।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ভবনটির নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ১৪ হাজার ৮শ’ ৮৭ টাকা। এজন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৮ শতাংশ জমি। যার মূল্য পড়েছে এক কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। উত্তর দক্ষিণে ৭০ ফুট লম্বা ও পূর্ব পশ্চিমে ৫০ ফুট পাশ বা প্রস্থ। জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখা থেকে জমিটি অধিগ্রহণ করে দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এক হাজার দু’শ তেইশ কোটি চুয়ান্ন লক্ষ টাকা ব্যয়ে দেশের ৬৪টি জেলার ৪শ’ ৭০টি উপজেলায় এ ধরণের কমপ্লেক্স নির্মাণ চলছে। ইতোমধ্যে ৩শ’ ৮৩টি ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন রায়পুরসহ ৪০টি উপজেলায় নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরে সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম অধিকতর সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য ভৌত সুবিধাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন সাধন, দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তান-সন্তুতিগণের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ সাধন এবং ভবনের অর্জিত আয় থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ, নির্মিত ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় সৃষ্টি করাই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন সড়কের পশ্চিম পাশে ৩ তলা বিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। কাজটি করছেন লক্ষ্মীপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিয়াসাত এন্ড ব্রাদার্স এর পক্ষে চরভৈরবী এলাকার ঠিকাদার শিমুল চোকদার। ইতোমধ্যে বেজ ঢালাই করে মূল স্থাপনার জন্য কলাম করা হয়েছে।
দক্ষিণ দেনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল খায়ের, জাহাঙ্গীর হোসেন, জহির হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় এতোবড় একটি প্রকল্প হচ্ছে কিন্তু আমরা কিছুই জানি না। আমরা ভেবেছিলাম এটি কোনো ব্যক্তি নিজের জন্য বাসভবন বানাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রকল্পটি করা হলেও এখানে কোনো নামফলক বা প্রকল্পের পরিচিতি সাইনবোর্ড নেই। একটি সাইনবোর্ড থাকলে লোকজনও সরকারের মহতি উদ্যোগের কথা জানতে পারতো।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন পাঠান ও মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সফি উল্যাহ বলেন, ভবনটির স্থান ও প্রবেশমুখ নিয়ে আমরা খুশি নই। আমরা প্রধান সড়কের দিকে পূর্বমুখী ভবন চেয়েছিলাম। কিন্তু এটি করার পূর্বে আমাদের সাথে কোনো আলোচনা করা হয়নি। কাজ শুরুর পর আমাদেরকে বলা হয়েছে। ভবনের পূর্বে খালি জায়গা রেখে একজনের বাড়ির রাস্তামুখী করে ভবনটি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ওই বাড়ির লোকজন সড়কের পাশে স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করলে আমাদের ভবনটির সৌন্দর্য নষ্ট হবে। হয়তো দেখাই যাবেনা এ ভবন। এমনকি তারা তাদের বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে দিলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
ঠিকাদার মোঃ শিমুল চোকদার জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর আবার চালু করা হয়েছে। আগামী বছরের ২২ জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করছি সময়ের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করতে পারবো। কোনো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজটি শুরু না করায় কোনো নামফলক নেই। এলজিইডির কাজে সাইনবোর্ড রাখার বিষয় না থাকায় আমরা কোনো সাইনবোর্ড দেইনি।
এলজিইডির রায়পুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, শহরে জমি পাওয়া কঠিন কাজ। বহু চেষ্টা-তদবির করে এ জমিটি পাওয়া গেছে। প্রবেশমুখ কোনো নির্দিষ্ট দিকে দেওয়া না দেওয়া আমাদের কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় নয়। মন্ত্রণালয়ের ড্রইং অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করতে পূর্ব-পশ্চিমের চাইতে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ২০ ফুট বেশি হওয়ায় প্রবেশমুখ দক্ষিণমুখী করা হয়েছে। কাজটি যথাযথভাবে তদারকি করা হচ্ছে। প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগনোর জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি না হলে কর্তৃপক্ষ সময় বিবেচনা করতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পদাধিকার বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সাবরীন চৌধুরী বলেন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ভবনের প্রবেশমুখ ও জমি নিয়ে কিছু সমস্যার বিষয় তুলে ধরেন। সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ চলমান আছে। আমরা সরেজমিন গিয়ে সেটি পরিমাপ করে দেখেছি। অধিগ্রহণকৃত জায়গাতেই ভবনটি হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
বিপি/কেজে