
আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে এই আলিকো, তার সম্পদ কত?


বাংলাপ্রেস ডেস্ক: আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, নাইজেরিয়ার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি আলিকো দাঙ্গোতে যখন গত বছর বলেছিলেন যে, নিজ দেশের বাইরে তার কোনো বাড়ি নেই, তখন অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন তিনি।
তার দুটি বাড়ি—একটি নিজ শহর কানোতে, আরেকটি বাণিজ্যিক রাজধানী লাগোসে। আর আবুজায় তিনি একটি ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। তারপরও তার বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য যে বিশালতা অর্জন করছে, তা অবাক করার মতোই।
বর্তমানে এই শিল্পপতি তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের (২৯.৬ বিলিয়ন ডলার) কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন। এমন এক বিশাল অঙ্কের মাইলফলক স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন তিনি, যা আধুনিক আফ্রিকার ইতিহাসে একজন ধনকুবেরের জন্য এক নতুন রেকর্ড হতে পারে।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ারস ইনডেক্স অনুযায়ী, আর মাত্র ৪০ কোটি ডলার যোগ হলেই এই এলিট ক্লাবে প্রবেশ করবেন আলিকো দাঙ্গোতে।
গত বছরের জানুয়ারিতে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে নাম আসে দাঙ্গোতের। নাইজেরিয়ার অর্থনীতি তীব্র সংকটের মধ্যে থাকলেও, টানা ১৩ বছরের মতো তিনি আফ্রিকার শীর্ষ ধনীর স্থান ধরে রেখেছিলেন। ফোর্বস তখন জানিয়েছিল, তার সম্পদ গত বছর ৪০০ মিলিয়ন ডলার বেড়ে মোট ১৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
তবে চলতি বছরে দাঙ্গোতের উত্থান আরও বিস্ময়কর। আগস্ট মাসে বিজনেস ইনসাইডার আফ্রিকা ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ারস ইনডেক্সের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, দাঙ্গোতে ৩০০ কোটি ডলারের লক্ষ্য থেকে ৭০ কোটি ডলার পিছিয়ে ছিলেন।
কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ২৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাব অনুযায়ী, এই নাইজেরীয় বিলিয়নিয়ার তার সম্পদের এই মাইলফলকের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছেছেন। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই তিনি ৩০০ কোটি ডলারের মালিক হওয়া আধুনিক আফ্রিকার প্রথম ধনকুবের হতে পারেন।
বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ ওঠানামা করা স্বাভাবিক। তাই দাঙ্গোতের সম্পদেও হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে, ব্লুমবার্গ সূচক অনুযায়ী ডাঙ্গোটের সম্পদের সর্বশেষ পরিবর্তন ছিল ৪০ কোটি ১ লাখ ডলার বৃদ্ধি, এবং এ বছর এ পর্যন্ত তার সম্পদ ১ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
দাঙ্গোতের এই সম্পদ বৃদ্ধি তার পশ্চিম আফ্রিকার সিমেন্ট উৎপাদন কার্যক্রমের সর্বশেষ উদ্যোগের সঙ্গে মিলে গেছে। আইভরি কোস্টের আবিদজানের প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে আতিংগুয়েতে ১৬ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি বিশাল সিমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে।
৫০ হেক্টরের এই কমপ্লেক্সটি প্রতি বছর ৩০ লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদন করতে সক্ষম, যা নাইজেরিয়ার বাইরে তার অন্যতম বৃহৎ প্ল্যান্ট। কর্পোরেট ডেটা বলছে, আতিংগুয়ের নতুন এই প্ল্যান্ট আফ্রিকান দেশগুলোতে দাঙ্গোতে সিমেন্ট প্ল্যান্টের সংখ্যা বাড়িয়ে ১১-তে নিয়ে এসেছে। এর ফলে মহাদেশটিতে গ্রুপটির মোট ইনস্টলড ক্ষমতা প্রতি বছর প্রায় ৫৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে।
দাঙ্গোতের সিমেন্ট ব্যবসা বরাবরই তার প্রধান উদ্যোগগুলোর অন্যতম। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার সম্পদের উল্লম্ফনের পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে তার তেল শোধনাগার।
দাঙ্গোতে অয়েল রিফাইনারি ২০২৩ সালের মে মাসে চালু হয় এবং একই বছরের অক্টোবরে এর কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে এটি প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল ডিজেল ও জেট ফুয়েল উৎপাদন করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
তবে দাঙ্গোতের এই আর্থিক যাত্রা অবশ্য সবসময় মসৃণ ছিল না। গত মে মাসে ব্লুমবার্গ যখন তাকে বিশ্বের ৮১তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে, তখন তার মোট সম্পদ ছিল ২০ দশ্মমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক পরবর্তীকালে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেলেও পরে আবার দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে।
২০২৪ সালের শুরুতে জোহান রুপার্ট যখন আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন (১০.৩ বিলিয়ন ডলার), দাঙ্গোতের সম্পদ ছিল ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশিদিন টেকেনি।
বছরের প্রথম মাস শেষ হওয়ার আগেই এক দারুণ ধাক্কায় দাঙ্গোতে নিজের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন। এই সময়ে তিনি জেফ বেজোস এবং বিল গেটসের মতো ধনকুবেরদেরও পেছনে ফেলে দেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে, দাঙ্গোতে গ্রুপের সিইও আলিকো দাঙ্গোতে ২০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেন। সেই সময়ে তার সম্পদের সর্বশেষ পরিবর্তন ছিল ২৮ কোটি ২০ লাখ ডলার বৃদ্ধি এবং বছর শেষে তার সম্পদ বেড়েছিল ৬ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
তবে এই যাত্রা সহজ ছিল না। ২০২৪ সালের জুলাই নাগাদ, ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার সূচক অনুযায়ী দাঙ্গোতের মোট সম্পদ ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যখন সংবাদমাধ্যম জানায় যে তিনি এক বিলিয়ন ডলার খুইয়েছেন।
এরপরই আসে ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। ২০২৪ সালের অক্টোবরে দাঙ্গোতের সম্পদ প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার থেকে এক লাফে ২৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে, ব্লুমবার্গ সূচকে দাঙ্গোতের সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। যদিও বছরের মাঝামাঝি সময়ে, তার মোট সম্পদ ছিল ২৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
বিপি>টিডি
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন





