
গাজায় উত্তেজনা, ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ শনাক্ত নিয়ে অনিশ্চয়তা


বাংলাপ্রেস ডেস্ক: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আরও চার জন নিহত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
মঙ্গলবার গভীর রাতে রেড ক্রস মরদেহগুলো কফিনে করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু এখনো ২০ জন নিহত বন্দির মরদেহ ফেরত না আসায় ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে ইসরায়েল সতর্ক করেছিল, হামাস তাদের ২৮ নিহত বন্দি সবার মরদেহ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় মানবিক সহায়তা সীমিত করে দেবে। গত সোমবার ২০ জন জীবিত ও চার জন নিহত বন্দিকে হস্তান্তর করেছিল হামাস। খবর বিবিসির।
রেড ক্রস জানিয়েছে, একই দিনে ইসরায়েল ৪৫ জন নিহত ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে গাজায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যে সব ৪৮ জন বন্দিকে ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। চুক্তিটি ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই মেনে নেয়। সব জীবিত বন্দি ফেরত এলেও এখনো ২০ জন নিহত বন্দির মরদেহ ফেরত আসেনি। এ নিয়ে দুই পক্ষের ওপরই চাপ বাড়ছে।
আইডিএফ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘হামাসকে চুক্তির নিজের অংশ পূরণ করতে হবে এবং সব বন্দিকে তাদের পরিবারের কাছে ও সঠিকভাবে দাফনের জন্য ফিরিয়ে দিতে হবে।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করেছেন, ‘যেকোনো বিলম্ব বা ইচ্ছাকৃত গাফিলতি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর জবাব দেওয়া হবে।’
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, হামাস বন্দিদের মরদেহ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গাজায় সহায়তা সীমিত করা এবং মিশরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত পুনরায় খোলার পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়েছে।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহত বন্দিদের মরদেহ শনাক্ত ও খুঁজে বের করতে তারা ‘জটিলতার’ মুখে পড়েছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি অনুলিপিতে উল্লেখ ছিল, হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব মরদেহ খুঁজে বের করতে নাও পারতে পারে।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন যারা ফেরত আসেনি তাদের মরদেহ শনাক্তে একটি আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্স কাজ শুরু করবে।
ট্রাম্প এক্সে (আগের টুইটার) লিখেছেন, ‘একটি বড় বোঝা শেষ হয়েছে, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। মৃতদের ফেরত দেওয়া হয়নি, যেমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল! দ্বিতীয় ধাপ এখনই শুরু হচ্ছে!’
দুই বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
চুক্তির প্রথম ধাপে ১০ অক্টোবর স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যদিও যুদ্ধবিরতি মোটামুটি টিকে আছে, ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজার পূর্বাঞ্চল ও খান ইউনিসের পূর্বে দুই ঘটনায় ইসরায়েলি হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার খবরে বলা হয়, গাজার পূর্ব শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি পরিদর্শন করছিলেন, তখনই ড্রোন হামলা হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী সেনারা যে ‘হলুদ রেখা’ পর্যন্ত সরে গেছে, তার ওপারে কেউ গেলে তারা লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
সোমবার মিশর, কাতার ও তুরস্কের নেতাদের উপস্থিতিতে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় সই করেন। তুরস্ক শেষ পর্যায়ে মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ ২০টির বেশি দেশের নেতা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকেই মুসলিম ও আরব বিশ্বের। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হামাসের প্রতিনিধি কেউই অনুষ্ঠানে ছিলেন না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন বন্দি হয়। এরপর সেদিন থেকেই গাজায় সেনা অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় দুই বছর ধরে চালানো অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৮৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিপি/টিআই
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন




নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে এক নারীর বিরুদ্ধে যৌন পাচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকা থেকে বাদ পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট
