১৩ অক্টোবর ২০২৫

'আমার মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার ১৯৭১' একটি অনবদ্য স্মৃতিচারণ

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম
'আমার মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার ১৯৭১'  একটি অনবদ্য স্মৃতিচারণ
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুণ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ভার্জিনিয়াতে বসবাস করছেন। তিনি একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও কবি। ১৯৫১ ঢাকায় জন্মগ্রহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুণ চৌধুরী ১৯৭১ সালে ভারতের আগরতলা মেলা ঘরে মুক্তিযূদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি সেক্টর ২ কে ফোর্সে খালেদ মোশারফ ও মেজর হায়দারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি শ্রীনগর থানা কমান্ভার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তুরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুণ চৌধুরীর বই 'আমার মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার ১৯৭১'। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনন্যা প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে। বইটি প্রকাশিত হবার পরে পরেই দেশের মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রবাসী পাঠকদের মাঝে দারুন সাড়া পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখির প্রতি মানুষের বিশেষ করে তরুণদের আগ্রহ বেশ বেড়েছে। কাজেই একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই স্মৃতিচারণ করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই সেটা কৌতূহলী করে তুলবে পাঠককে। স্মৃতিচারণ বই হিসেবে সাংবাদিক হারুণ চৌধুরী কিংবা অনন্যা প্রকাশনী পাঠকের সামনে কী উপস্থাপন করছেন খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে, উপজীব্য যখন মুক্তিযুদ্ধ, তখন ইতিহাসের পাঠক হিসেবেই এই বইয়ে উপস্থাপিত তথ্য ও বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখাটা জরুরি বলে মনে হয়। কারণ মুক্তিযোদ্ধারা যা বলে গেছেন, বলে যাচ্ছেন এবং বলে যাবেন সেইসব সাক্ষ্য থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা হবে এবং যারা একাত্তর দেখেননি, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ও বিস্তৃত প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেই প্রেক্ষাপটেই ‘প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুণ চৌধুরীর বই 'আমার মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার ১৯৭১' এ তিনি অত্যন্ত স্বাবলীল ও অনবদ্য ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের নানা স্মৃতিচারণ। বইয়ে যেসব তথ্য ও মন্তব্য উপস্থাপনা করা হয়েছে তা একটু খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। যখনই চেতনার কথা চিন্তায় আসে, তখনই স্মৃতির পাতায় ভেসে আসে সেই যুদ্ধকালীন দিনগুলো। সেদিন বাংলার দামাল ছেলেরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ ঝঁপিয়ে পড়েছিল। আর আমরা তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। রণাঙ্গন তাদের নেতৃত্ব দিয়েছি। লক্ষ্য একটাই দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জন করা। তাই এ যুদ্ধ ছিল আমাদের গর্ব ও অহংকারের। আমরা চেয়েছিলাম নিজেদের হাতে দেশকে গড়ে তুলব। যেখানে থাকবে না কোনো হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি দলমত বির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল (স্বাধিীনতা বিরোধীরা ছাড়া)। বঙ্গবন্ধু সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, শত্রুর মোকাবেলায় পাড়ায় পাড়ায় আওয়ামী লীগের নের্তৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে। এই মন্ত্রে দীক্ষিত বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে তাঁর নের্তৃত্বে একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ ছিল। তারই অনুপ্রেরণায় যুদ্ধের দিনগুলোতে আমরা হাজারো মায়ের কান্না, শিশুর আর্তনাদ ও বোনের হাহাকারের শোধ নিতে শত্রুর মোকাবেলা করেছিলাম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর বর্বরতা ইতিহাসখ্যাত চিঙ্গিস খানের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিল। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধাদের যুদ্ধজয়ের সংকল্প আরও তীব্রতা লাভ করেছিল। গোটা বাংলাদেশই তখন ছিল রণাঙ্গন। আমরা গেরিলারা যথন শত্রু নিধনে ছড়িয়ে পড়েছিলাম, তখন পাকিস্তানি ও তাদের দোসরদের নিরীহ বাঙালির উপর চালানো আত্যাচারের চিত্র মুক্তিযোদ্ধারদের শত্রু আক্রমণে আরও বেপরোয়া করে তুলত। আরও শণিত করত আমাদের যুদ্ধজয়ের চেতনা। সেদিন আমারা বাংলার মাঠে-ঘাটে, নদীতে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেছি নীরিহ বাঙালি কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, নারী-বৃদ্ধ ও শিশুর অগণিত পরিত্যক্ত লাশ। এ ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মম নির্যাতনের এক বেদনাদায়ক চিত্র। দেখেছি স্বজনহারাদের অসহায় আর্তনাদ ও আহাজারি। মা-বোনের চোখে দেখেছি নির্বাক অশ্রু। এর মধ্যেই এরাই মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছিল খাদ্য-বস্ত্র-আশ্রয় ও সহায়তা। সেদিন মা-বোনেরা জায়নামাজে বসে দু’হাত তুলে দোয়া ও নিভৃত অশ্রু বিসর্জন করেছিলেন। একটা অপারেশন শেষ করার কিছু দিন পর আমরা যখন ওই এলাকায় যেতাম, তখন খবর নিয়ে জানতে পারতাম, পাক হানাদার বাহিনী ও তাদরে এ দেশীয় দোসররা ওই এলাকায় কারো বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছি, কোথাও মা-বোনদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, কোথাও বা উঠিয়ে নিয়ে গেছে তাদের। এর পাশাপাশি চালিয়েছিল গণহত্যা। এটা ছিল তখন গোটা বাংলাদেশ তাদের নিত্যনৈমিত্যিক অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্য। তাই কত বীরের রক্তধারা, কত মায়ের অশ্রু, হাজারও বোনের হাহাকার, শিশুর আর্তনাদ আর এতিমের ঝাপসা দৃষ্টিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন এই ত্যাগের সংগ্রামী ঐতিহ্য। প্রতিরোধ যু্দ্ধ কিন্তু ২৫ মার্চ রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ইপিআর, পুলিশ, মুজাহিদ, আনাসার ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা, ছাত্র জনতা, কৃষক , শ্রমিক তথা সর্বস্তরের জনগণ একাকার হয়ে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই নিজ নিজ এলাকয় দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল প্রেরণার মূল উৎস। এ প্রতিরোধ যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় প্রায় দু’সপ্তাহ সময়কালের মধ্যে একই উদ্দীপনা ও বুক ভরা সাহস ও শপথ নিৃয়ে পদার্পণ করল পরিকল্পিত স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল পর্বে। গেরিলা কায়দায় অ্যামবুশ, রেইড, গ্রেনেড অ্যাকশন, অনেক সময় সম্মুখ আক্রমণ সংঘবদ্ধভাবে বেড়েই চলছিল। কে ফোর্সে খালেদ মোশারফ ও মেজর হায়দারের অধীনে কুমিল্লার কসবা ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করার পর যে সময় বিক্রমপুরের মাটিতে প্রবেশ করি তার পূর্বেই আমাদের শ্রীনগর থানা মুক্তাঞ্চল বলে ঘোষনা করা হয়। তার নের্তৃত্বে কয়েকটি এলাকায় গেলিলা ও সম্মুখ যুদ্ধের কিছু বিবরণ এ বইয়ের ষোলঘরের গেরিলা ট্রনিং ক্যাম্প ও সৈয়দপুরে যুদ্ধ অধ্যায়সহ বিভিন্ন লেখায় তা উল্লেখ রয়েছে। বিপি।এসএম  
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন

খাঁচা
সাহিত্য

খাঁচা

২ সপ্তাহ আগে by বাংলা প্রেস