
আটলান্টায় ফোবানা সম্মেলন পরিণত হলো পারিবারিক অনুষ্ঠানে


ছাবেদ সাথী, আটলান্টা থেকে ফিরে: চরম অব্যবস্থাপনা,অনিয়ম আর দর্শকশ্রোতাদের সীমাহীন হয়রানির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজের আটলান্টায় শেষ হলো তিন দিনের ৩৯তম ফোবানা সম্মেলন। আয়োজকদের খামখেয়ালিপনার ফলে শনিবার দ্বিতীয় রাতে মিলনায়তনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত দর্শকশ্রোতার সমাগম হওয়ায় গুয়িনেট কাউন্টির ফায়ার মার্শালের নির্দেশে অনুষ্ঠানে বন্ধ করে দেওয়া হয়। টিকেট কেটেও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি প্রচুর সংখ্যক দর্শকশ্রোতা।
রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনির মাধ্যমে প্রবেশপথে জিম্মি করা হয় দর্শকশ্রোতাদের। গত আটত্রিশ বছরে যা ঘটেনি এবারে তাই ঘটছে আটলান্টার ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনে। জর্জিয়ার সর্বস্তরের মানুষ এ সম্মেলনে কোন সাড়া দেয়নি। সবার অংশগ্রহণ না থাকায় আটলান্টার প্রবাসীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন আহবায়ক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা নাহিদুল খান সাহেলের পারিবারিক অনুষ্ঠানের রুপান্তরিত হয় এবারের ফোবানা সম্মেলন।
আটলান্টা থেকে ৩৫ মাইল দূরে ডুলুথ শহরের প্রাণকেন্দ্র গ্যাস সাউথ কনভেনশন সেন্টারে গতকাল শুক্রবার (২৯ আগষ্ট) সন্ধ্যায় ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলনটি ডুলুথ শহরে অনুষ্ঠিত হলেও কেন আটলান্টা নামে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা অনেকেরই বোধগম্য নয়।

উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের বাঙালিদের মিলনমেলাখ্যাত ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষনা করেন ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক নাহিদুল খান সাহেল। অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন, যুক্তরাষ্ট্রের লেফটেন্যান্ট গভর্নর অফ জর্জিয়া বার্ড জোন্স, চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স, বাংলাদেশ সালাউদ্দিন মাহমুদ, কনসোল জেনারেল অব বাংলাদেশ, মায়মি, সেহেলি সাবরিন, জর্জিয়ার সেনেটর শেখ আব্দুর রহমান, সেনেটর নাবিলা ইসলাম, সেনেটর শেলী হেরাল, সিনেটর জস ম্যাকলেইন, জর্জিয়া ফায়ারের চেয়ারম্যান হাসান তারেক দ্বীপ, ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক নাহিদুল খান সাহেল, মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, মো. আলমগীর, সেক্রেটারি জেনারেল আবির আলমগীর, চেয়ারপারসন ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটি মাসুদ রব চৌধুরী, চেয়ারপারসন ফোবানা হোস্ট বিজনেস কমিটি ডিউক খান, কাজী নাহিদ, চীফ কো-অর্ডিনেট এম মওলা দিলু , মোয়াজ্জেম এইচ চৌধুরী, তাসিক আহমেদ, কবি ও বাচিক শিল্পী ভাস্কর ব্যানার্জি, ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ, যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র বাংলাদেশি মুসলিম জজ আজমেরী হক, মাহবুব রেজা চৌধুরী প্রমূখসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর আলোচকরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্য, সংস্কৃতি ও আগামী প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষা এবং ঐতিহ্য পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা হাজারো প্রবাসী বাঙালির পদচারণায় পুরো অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয়েছিল এক টুকরো বাংলাদেশে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে শনিবার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করা হয় অনুষ্ঠান। মিলনায়তনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত দর্শকশ্রোতার সমাগম হওয়ায় ফোবানা কর্মকর্তা, পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা অনুষ্ঠান আগাম বন্ধ করতে বাধ্য হন। দ্বিতীয় দিনের বাদ পড়া শিল্পীরা পরদিন দুপুরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বলে জানিয়েছেন ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
ফোবানা কর্মকর্তারা জানান, এবারের ফোবানা সম্মেলনে এমন অতিরিক্ত দর্শক-শ্রোতার সমাগম এর আগে কখনও হয়নি। রবিবার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দর্শকশ্রোতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে গিয়ে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনির মাধ্যমে প্রবেশপথে জিম্মি করা হয় দর্শকশ্রোতাদের ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিজনেস নেটওয়ার্কিং সেমিনার। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদেরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানান বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন। ওই সেমিনারে তিনি কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই ফোবানা সম্মেলনের।

এবারের সম্মেলনে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল আলোচনা সভা, সাহিত্য আসর, প্রবাসীদের জীবনধারা ও নতুন প্রজন্মের সমস্যাবলী নিয়ে সেমিনার। এছাড়া নাটক, লোকসংগীত, আধুনিক গান, ফ্যাশন শো এবং শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী, সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিবিদরা। তাদের অংশগ্রহণে আয়োজনটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। একইসঙ্গে প্রবাসী ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি সম্মেলনকে রূপ দিয়েছে এক মহা মিলনমেলায়।
তিন দিনব্যাপী এ মহোৎসবকে ঘিরে আটলান্টার বাঙালি কমিউনিটিতে বইছে উৎসবের আমেজ। শুধু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নয়, এখানে ছিল বাঙালি খাবার, পোশাক, অলঙ্কার ও বই মেলা। যা পুরো সম্মেলনকে রূপ দিয়েছে এক ক্ষুদ্র বাংলাদেশে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজকরা তাদের বক্তব্যে বলেছেন, এই সম্মেলন প্রবাসীদের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও দৃঢ় করবে এবং আগামী প্রজন্মকে মাতৃভাষা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে অনুপ্রাণিত করবে।
তারা আরো বলেছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শুধু সাংস্কৃতিক বন্ধনই দৃঢ় করেনি, বরং তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশি ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করারও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ফোবানা সম্মেলন আগামী দিনে প্রবাসীদের পরিচয়, ঐক্য ও মূলধারায় সম্পৃক্ততাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলেও তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
এবারের সম্মেলনে ছিল বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর বিশেষ সেবা সার্ভিস। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব জর্জিয়া এই বিশেষ সার্ভিসটি আয়োজন করেন। পাসপোর্ট নবায়ন, ই পাসপোর্ট, এনআইডি সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয় সেখানে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন আটলান্টাভিত্তিক সাহিত্য-সংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলা ধারা’।
এবারের সম্মেলনের মূল ফোকাস ছিল ‘প্রবাসী প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশ্বীকরণে বাংলাদেশের অবস্থান’। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়ানো, বাংলাদেশিদেরকে দেশটির মূলধারায় সম্পৃক্ত করা এবং শিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছিল সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) চেয়ারপারসন মাসুদ রব চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়িয়ে তোলা, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের জীবন, শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এই সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
এবারের সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এছাড়া এবার আটলান্টার ১০ জন নতুন প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।
ফোবানার এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর বলেন, এবারের সম্মেলনে উত্তর আমেরিকার ২৪টি শহর থেকে সর্বমোট ৭৪টি সংগঠন এবং সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন।
এছাড়া ছিল উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরের সাংগঠনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার, বইমেলা, সাহিত্য আসর, কাব্য জলসা, বিভিন্ন পণ্যের স্টল, ইয়ুথ ফোরাম, বিজনেস নেটওয়ার্কিং ইভেন্টস এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান।
সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী বছর ২০২৬ সালের ৪০তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফোবানা ২০২৫ এর কনভেনর নাহিদুল খান সাহেল বলেন, ফোবানা সম্মেলন মানে প্রবাসীদের একটি মিলনমেলা।
তিনি আরো বলেন, ফোবানা সম্মেলনে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই নয়, মানবিক বিষয়েও কাজ করা হয়। তবে ফোবানা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ থাকে। প্রবাসে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দেওয়াও এই সম্মেলনের বড় অর্জন।
তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে বেশ কয়েকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এবারের সেমিনারগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল সামাজিক ইস্যু: মানবাধিকার ও সামাজিক-রাজনৈতিক দিক। স্বাস্থ্য ও সুস্থতা: প্রতিরোধমূলক এবং চিকিৎসাগত দিক। প্রযুক্তি: প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। শিক্ষা, ক্যারিয়ার ও যোগাযোগে প্রযুক্তির প্রভাব। গঠিত পরিবেশ ও জলবায়ু: স্থাপত্য, পরিকল্পনা, শহরায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন। ব্যবসা ও অর্থনীতি: ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, উদ্যোক্তা, বাজার এবং অর্থনৈতিক নীতি। শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি: পাঠদান, সৃজনশীল শিল্প, ডিজাইন, চলচ্চিত্র, মিডিয়া এবং সাহিত্য। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: ঐতিহ্য সংরক্ষণ, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং বাংলাদেশি-আমেরিকানদের মূলধারায় সম্পৃক্ততা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিজনেস নেটওয়ার্কিং সেমিনার শেষে বাংলাদেশি প্রবাসী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অবদান রাখা এবং ফোবানার বিভিন্ন কর্মকান্ডে অবদান রাখার জন্য ১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে প্রাউড স্পনসর এন্ড কন্ট্রিবিউটরস এওয়ার্ড দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আটলান্টার বাংলাদেশী প্রবাসী গ্রেট কেয়ার ডেন্টিস্ট্রি ডাক্তার নাঈম বাসার ।
তিনদিনব্যাপী এ ফোবানা সম্মেলনকে ঘিরে উঠে এসেছে নানা চরম অব্যবস্থাপনা,অনিয়ম আর দর্শকশ্রোতাদের সীমাহীন হয়রানির। অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন আটলান্টায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে জর্জিয়ার প্রবাসীদের সর্বস্তরের মানুষের কোন অংশ গ্রহণ ছিল না। আয়োজকদের মধ্যে ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক নাহিদুল খান সাহেল, মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, চেয়ারপারসন ফোবানা হোস্ট বিজনেস কমিটি ডিউক খান, চীফ কো-অর্ডিনেট এম মওলা দিলু স্ব স্ব এলাকায় বিতর্কিত ব্যক্তি। তাদের নামে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ। সাহেল খান ও ডিউক খান তাদের সকল দোকান কর্মচারি, আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী সন্তানকে এ সম্মেলনে সম্পৃক্ত করায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এসব ঘটনা নিয়ে জর্জিয়া প্রবাসীদের মাঝে বইছে সমালোচনার ঝড় ।
বেলাল ফোবানার নতুন সভাপতি নির্বাচিত, খালেদ নির্বাহী সচিব
ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)’র নতুন নির্বাহী কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ এক বছর মেয়াদি নতুন এ কমিটিতে রবিউল করিম বেলাল (ফিলাডেলফিয়া),সভাপতি (চেয়ারপারসন) এবং খালেদ আহমেদ রউফ (শিকাগো) নির্বাহী সচিব (এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি) নির্বাচিত হয়েছেন। ফোবানা সম্মেলনের তিন দিন আগে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) অনলাইনে ইলেকট্রোনিক্স ভোটিং এর মাধ্যমে প্রায় ৬৪টি সংগঠনের সদস্যরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব রেজা রহিমের পরিচালনায় অনলাইনে ইলেকট্রোনিক্স ভোটিংয়ে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। পূর্ণ বিধিমালা অনুসরণ করে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তক ঘোষিত ফলাফলে– রবিউল করিম (বেলাল) ৩১ ভোট পেয়ে সভাপতি (চেয়ারপারসন) পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ দিলু মওলা, তিনি পেয়েছেন ৩০ ভোট, মোহাম্মদ এম রহমান (জহির) ৩৮ ভোট পেয়ে সভাপতি (ভাইস চেয়ারম্যান) পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন আবির আলমগীর, তিনি পেয়েছেন ২৩ ভোট। খালেদ আহমেদ রউফ ৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাহী সচিব (এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন বাবুল হাই, তিনি পেয়েছেন ২২ ভোট। অ্যান্থনি পিয়ুস গোমেজ ২৮ ভোট পেয়ে সহ নির্বাহী সচিব (জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন ড. প্রিয়লাল কর্মকার, তিনি পেয়েছেন ২৭ এবং এম জেড আসিফ আই খান, তিনি পেয়েছেন ৬ ভোট, মোহিন উদ্দিন দুলাল ৩৪ ভোট পেয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকততম প্রার্থী ছিলেন শামসুদ্দিন মাহমুদ, তিনি পেয়েছেন ২০ ভোট এবং সাঈদ আহসান (কোকো), তিনি পেয়েছেন ৭ ভোট।
এছাড়াওে মুহাম্মদ আলী (মানিক) ৬০ ভোট পেয়ে শ্রেষ্ঠ (আউটস্ট্যান্ডিং) সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যান্য শ্রেষ্ঠ (আউটস্ট্যান্ডিং) সদস্যরা হলেন তিনি মোহাম্মদ আরেফিন বাবুল ৫৯ ভোট (বিজয়ী), জসিম উদ্দিন ৫৭ ভোট বিজয়ী, শামসুদ্দুহা (সাগর) ৫৪ ভোট (বিজয়ী), নুরুল আমিন ৪৯ ভোট (বিজয়ী), আবু এম রুমি ৪৬ ভোট (বিজয়ী), ড.আব্দুস মোহাম্মদ সাত্তার ৪১ ভোট (বিজয়ী)
তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে যারা নির্বাহী সদস্যপদ লাভ করেছেন তারা হলেন যথাক্রমে- বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটি অব গ্রেটার হিউস্টন (ইমতিয়াজ আহমেদ পাভেল) ৫৬ ভোট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (রোকশানা পারভীন) ৫৫ ভোট, রামা সার্কেল, নিউ ইয়র্ক (কান্তা আলমগীর) ৫৫ ভোট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা ইনক. (শফিকুল ইসলাম জুয়েল) ৫২ ভোট, মেরিল্যান্ড ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি (মোহাম্মদ কাজল) ৫২ ভোট, বাংলাদেশ থিয়েটার হিউস্টন (নাহিদা নাসের ইয়াসমিন) ৫০, ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি ডিএমভি ইঙ্ক (আখতার হোসেন) ৪৯ ভোট, ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি হিউস্টন (নাদিম ভূঁইয়া) ৪৮ ভোট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার কানসাস সিটি (রেহান রেজা) ৪৮ ভোট, অপরাজেয় বাংলা, ইনক. (শম্পা বণিক) ৪৮ ভোট, ইউএস বাংলা অ্যাসোসিয়েশন অব জর্জিয়া (কাজী নাহিদ) ৪৬ ভোট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব মিশিগান বাম (জাবেদ চৌধুরী) ৪৬ ভোট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন হিউস্টন (এম. আজমল এ. খান) ৪৫ ভোট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস (বান্ট), (হাসমত মোবিন) ৪৪ ভোট, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন অব জর্জিয়া (শাকিরা আলী বাচ্চি) ৪০ ভোট, ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি (সুমসুন রুমি) ৩
৩৯ বছরেও সাংবাদিকদের বসার ব্যবস্থা হয়নি ফোবানা সম্মেলনে
৩৯ বছরেও সাংবাদিকদের বসার আলাদা কোন ব্যবস্থা হয়নি ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলনে। সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার ও ভিডিওগ্রাফারদের বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কেউ প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সারিতে বসলে তাদের উঠিয়ে দেওয়া হয় অনুরোধে বা নিরাপত্তাকর্মীদের দ্বারা। এ বিষয়টি প্রতি বছরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও কেউ তা কর্ণপাত করেননি।
দ্বিতীয় দিনে শনিবার (৩০ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া একজন সংবাদকর্মীকে চেয়ার ছেড়ে অন্যত্র যাবার অনুরোধ করেন। পরে তিনি করিডোরে ফ্লোরে বসেই কাজ করেন। সাংবাদিকদের অবমূল্যায়ন করে পৃষ্ঠপোষকদের পেছেনে ছুটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসময় অপর একজন কর্মী এসে ভার্জিনিয়ার জনৈক একজন পৃষ্ঠপোষককেও চেয়ার ছেড়ে অন্যত্র যেতে বলেন। তিনি বলেন আমিও একজন স্পন্সর। পাল্টা উত্তরে তিনি বলেন যারা ১০ হাজার ডলারের বেশি স্পন্সর করেছে এসব চেয়ার শুধু তাদের জন্য। বিতর্ক না বাড়িয়ে পরে তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন।
দ্বিতীয় দিনে শনিবার (৩০ আগস্ট) নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করা হয় অনুষ্ঠান। মিলনায়তনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত দর্শকশ্রোতার সমাগম হওয়ায় ফোবানা কর্মকর্তা,পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা অনুষ্ঠান আগাম বন্ধ করতে বাধ্য হন। দ্বিতীয় দিনের বাদ পড়া শিল্পীরা কাল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বলে জানিয়েছে ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
ফোবানা কর্মকর্তারা জানান, এবারের ফোবানা সম্মেলনে এমন অতিরিক্ত দর্শক-শ্রোতার সমাগম এর আগে কখনও হয়নি। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে রোববার দর্শক-শ্রোতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। রোববার যথারীতি দুপুর ১টার দিকে শুরু হবে তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান। প্রীতমসহ আরো গুণী শিল্পীরাও রোববার দুপুরের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
আটলান্টা ফোবানায় গৌরবময় সেবার শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার পেলেন মোহাম্মদ আলমগীর
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাজুড়ে সর্ববৃহৎ বাংলাদেশি সংগঠন নেটওয়ার্ক ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) আটলান্টার সম্মেলনে গৌরবময় সেবার শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার পেয়েছেন অ্যাটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর। ৮০টিরও বেশি সদস্য সংগঠন এবং ৬০ হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়ে গঠিত এই ফেডারেশনের এই সম্মাননা সেইসব ব্যক্তিদের দেওয়া হয়, যাদের সেবামূলক অবদান কমিউনিটিতে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।
মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বগুণ ও মানবিকতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক হিউস্টন অ্যাকর্ড-এর প্রধান উদ্যোক্তাদের একজন, যা দীর্ঘদিন বিভক্ত থাকা দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে ফোবানার মিশনকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। একজন সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ছিলেন প্রজ্ঞার কণ্ঠস্বর—সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে উৎসাহিত করেছেন এবং কঠিন সময়ে এগিয়ে এসে সবার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর সুদৃঢ় দিকনির্দেশনায় ফোবানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় সহায়তা দিয়েছে এবং উত্তর আমেরিকা ও বাংলাদেশে অসংখ্য পরিবারকে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে।
সংকট মোকাবেলার বাইরেও তিনি তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বৃত্তি ও শিক্ষার সুযোগ, যা অসংখ্য তরুণের ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তাঁর হোস্ট কমিটিকে নেতৃত্ব দিয়ে ফোবানার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তহবিল সংগ্রহে সক্ষম হন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করেন, যার ফলে ফোবানা সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারি উপস্থিতি নিশ্চিত হয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফোবানার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পায়।
এই স্বীকৃতিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ করেছে মোহাম্মদ আলমগীরের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। তাঁর অর্জনের জন্য যেমন তাঁকে সম্মান করা হয়, তেমনি সহকর্মী, কমিউনিটি নেতা ও পরিবারগুলোর কাছেও তিনি প্রিয়, কারণ তাঁরা তাঁর মধ্যে খুঁজে পান বিনয় ও দৃঢ়তার এক বিরল সমন্বয়। তাঁর উত্তরাধিকার হলো ঐক্য, সেবা ও দূরদর্শী প্রভাবের এক দৃষ্টান্ত, যা তাঁকে জানে এমন প্রত্যেককেই অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি। সিএসআপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন




যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাইটক্লাব ব্যবসায়ী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী,সমালোচনার ঝড়

