
বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকা থেকে বাদ পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট


নোমান সাবিত: ২০ বছর পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট আর বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় নেই। একটি পাসপোর্টকে 'শক্তিশালী' বলা হয় কীভাবে? সাধারণত এটি নির্ভর করে সেই পাসপোর্টধারী ব্যক্তি কতগুলো দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন তার ওপর।
হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স (Henley Passport Index) হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের ক্ষমতা মাপার অন্যতম সূচক। এই সূচকের ২০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট শীর্ষ ১০ থেকে বাদ পড়ল।
বর্তমানে তালিকার শীর্ষে রয়েছে তিনটি এশীয় দেশ- সিঙ্গাপুর, যার পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশ ও অঞ্চলে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন;
দক্ষিণ কোরিয়া, ১৯০ দেশে এবং জাপান, ১৮৯ দেশে।
হেনলির সর্বশেষ ত্রৈমাসিক র্যাঙ্কিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১২তম, যেখানে তারা মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে রয়েছে। দুটি দেশের নাগরিকই ২২৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ১৮০টিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশাধিকার পান।
তবে হেনলি একই স্কোরধারী দেশগুলোকে এক স্থান হিসেবে গণনা করে, তাই কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তালিকায় আরও ৩৬টি দেশের পেছনে।
এই সূচকটি তৈরি করেছে লন্ডনভিত্তিক বৈশ্বিক নাগরিকত্ব ও আবাসন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস, যারা তথ্য সংগ্রহ করে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA) থেকে।
কেন পরিবর্তন ঘটল?
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছিল তালিকার এক নম্বরে। এমনকি চলতি বছরের গ্রীষ্মকালেও তা শীর্ষ ১০-এ ছিল। তাহলে কেন ধারাবাহিকভাবে নিচে নামল?
দ্য ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, এর পেছনে রয়েছে একাধিক দেশের প্রবেশনীতিতে পরিবর্তন।
এপ্রিল মাসে ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার বাতিল করে, কারণ ঐ দেশগুলো ব্রাজিলের নাগরিকদের একই সুবিধা দেয়নি।
এছাড়াও মিয়ানমার ও পাপুয়া নিউগিনি তাদের প্রবেশ নীতিতে পরিবর্তন আনে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর কমিয়ে দেয়। চীন তার সম্প্রসারিত ভিসামুক্ত তালিকা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দেয়।
সবশেষে, সোমালিয়া ই-ভিসা ব্যবস্থা চালু করে এবং ভিয়েতনাম তাদের নতুন ভিসামুক্ত তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দেয়—ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে পড়ে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসের চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান এইচ. কেলিন বলেন, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের ক্রমাবনতি কেবল একটি র্যাঙ্কিং পরিবর্তন নয় এটি বৈশ্বিক চলাচল ও সফট পাওয়ারের ভারসাম্যে মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেসব দেশ উন্মুক্ততা ও সহযোগিতা গ্রহণ করেছে, তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, আর যারা অতীতের সুবিধার ওপর নির্ভর করছে, তারা পিছিয়ে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উন্মুক্ততার অবস্থান
যেখানে আমেরিকান নাগরিকরা ১৮০টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজে মাত্র ৪৬টি দেশের নাগরিককে ভিসামুক্ত প্রবেশের অনুমতি দেয়। এর ফলে হেনলির Openness Index-এ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৭৭তম।
এই সূচকটি দেশগুলোর বিদেশি দর্শনার্থীদের প্রতি উন্মুক্ততার মাত্রা পরিমাপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ও তার নিজস্ব উন্মুক্ততার মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বড় ফারাক রয়েছে।
এই সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে ১১টি দেশ: বুরুন্ডি, কেপ ভার্দে, কোমোরো দ্বীপপুঞ্জ, জিবুতি, কেনিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, সামোয়া, টিমর-লেস্তে ও টুভালু। এই দেশগুলো ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের নাগরিকদের ভিসা ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দেয়।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকা (হেনলির সর্বশেষ র্যাঙ্কিং অনুযায়ী)-
সিঙ্গাপুর-১৯৩, দক্ষিণ কোরিয়া- ১৯০, জাপান- ১৮৯, জার্মানি, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, স্পেন, সুইজারল্যান্ড-১৮৮,অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস- ১৮৭, গ্রিস, হাঙ্গেরি, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, সুইডেন- ১৮৬, অস্ট্রেলিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মাল্টা, পোল্যান্ড-১৮৫, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য- ১৮৪, কানাডা -১৮৩, লাটভিয়া, লিশটেনস্টাইন — ১৮২, আইসল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া- ১৮১, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া- ১৮০ গন্তব্যে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে।
বিপি।সিএস
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন





নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে এক নারীর বিরুদ্ধে যৌন পাচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
