নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন নগর ভবনের সামনে উড়ল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। গত মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। এর আগে ২০১৬ সালে ৪৫তম স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ড (বেইন) বোস্টনের নগর ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির আয়োজন করেন।
মঙ্গলবার বোস্টন বাংলা এইডের উদ্যোগে এবং বোস্টন সিটি কাউন্সিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির শুরুতেই এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বোস্টন সিটি কাউন্সিলর, স্থানীয় ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিককর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো আমরা ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহর ভবনের সামনে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উড়াতে সক্ষম হয়েছি। এ কাজে সহায়তার জন্য বোস্টন সিটি মেয়র ও কাউন্সিলরদের আন্তিরিকভাবে ধন্যবাদ জানান হয়। তাদের এ অবদানের কথা ম্যাসাচুসেটসের প্রবাসী বাংলাদেশিরা চিরদিন স্মরণ করবে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
বোস্টন সিটি কাউন্সিলের সদস্য ও বাংলাদেশ কমিউনিটির অকৃত্তিম বন্ধু কাউন্সিলউমেন তানিয়া এন্ডারসন এ ধরনের একটি আয়োজন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সকল ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বোস্টন বাংলা এইডের প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন মোর্শেদ, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী সৈয়দ নুরুজ্জামান, বেইনের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রিন্স, নোমান চৌধুরী, সাবেক সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক সামি, সাবেক ক্রিড়া সম্পাদক সাজ্জাদ হোসন, সাবেক শিক্ষা সম্পাদক সবুজ বড়ুয়া, সংবাদকর্মী তাপস বড়ুয়া, নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামীলীগে সাধারন সম্পাদক টিপু চৌধুরী, সালাউদ্দীন ইমন ও মুমিম খান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বোস্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন শহরগুলির একটি। ১৬৩০ সালে ইংল্যান্ড থেকে আগত পিউরিটান ঔপনিবেশিকেরা শমুট উপদ্বীপে শহরটি প্রতিষ্ঠা করে। মার্কিন বিপ্লব তথা মার্কিন স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেকগুলি অতিগুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এখানেই সংঘটিত হয়, যেমন বোস্টনের গণহত্যা, বোস্টন টি পার্টি, বাংকার হিলের যুদ্ধ এবং বোস্টনের অবরোধ। যুক্তরাজ্য থেকে মার্কিনীদের স্বাধীনতা অর্জনের পর এটি দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ও শিল্পকারখানা শহর ছাড়াও শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ভূমি দখল এবং পৌর সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি মূল উপদ্বীপ বা বোস্টন নেক ছাড়িয়ে সম্প্রসারণ লাভ করে। শহরটির সমৃদ্ধ ইতিহাসের কারণে এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। বিশেষ করে ফ্যানুইল হল একাই প্রতি বছর ২ কোটিরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক "প্রথম" স্থাপনা বোস্টন শহরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সরকারী বিদ্যালয়। প্রথম পাতালরেল ট্রেমন্ট স্ট্রিট সাবওয়ে (১৮৯৭) এবং প্রথম নগর-উদ্যান (বস্টন কমন, ১৬৩৪).
বোস্টন উচ্চতর শিক্ষার একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র। এখানে আইন, চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং ব্যবসার উপরে অনেক উচ্চমানের ও বিখ্যাত মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। উদ্ভাবন এবং নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শহরটিকে বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় একটি শহর হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে ২ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ (নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) আছে। বোস্টনের অর্থনৈতিক ভিত্তির মধ্যে আরও আছে অর্থসংস্থান, পেশাগত এবং ব্যবসায়িক সেবাসমূহ, জৈবপ্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি এবং সরকারী কর্মকাণ্ডসমূহ।
বোস্টন শহরের পরিবারগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গড়ে সবচেয়ে বেশি জনসেবামূলক কাজে অংশ নেয়। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলি পরিবেশগতভাবে টেকসই প্রকৃতি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয়। জীবনযাপনের জন্য বোস্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলির একটি। এর কারণ শহরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান, তবে বিশ্ব বাসযোগ্যতার ক্রমে শহরটি এখনও উচ্চস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে।
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]