
ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাসুদ কাওসার


নোমান সাবিত: বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত নজিরবিহীন গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। উদীয়মান প্রযুক্তি ঝুঁকি মূল্যায়ন, ডেটা ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকসেবার ধরণ পাল্টে দিচ্ছে। এই রূপান্তরের অগ্রভাগে রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত গবেষক মো. মাসুদ কাওসার। প্রায় এক দশকের পেশাদার অভিজ্ঞতা এবং যুক্তরাষ্ট্রে চলমান গবেষণার সমন্বয়ে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ঋণঝুঁকি মূল্যায়ন ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে গড়ে তুলছেন।
কাওসারের কর্মজীবন শুরু হয় বাংলাদেশের প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যাংকিং খাতে। তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন—শাখা ঋণ মূল্যায়ন কর্মকর্তা, আঞ্চলিক ঋণ মূল্যায়ন কর্মকর্তা এবং শাখা সম্পর্ক কর্মকর্তা হিসেবে। আট বছরের এই সময়ে তিনি ঋণ মূল্যায়ন, ঋণঝুঁকি বিশ্লেষণ, গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা এবং শাখা-আঞ্চলিক সমন্বয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকিং শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি মানুষ ও সমাজকে বোঝার ব্যাপার। প্রতিটি ঋণ সিদ্ধান্তের প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এ কারণেই ঋণ প্রদানে যথার্থতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত জরুরি।”
গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কাওসার জটিল তথ্য বিশ্লেষণে দক্ষতা অর্জন করেছেন। গণিতের মডেল ব্যবহার করে তিনি ডেটায় লুকানো প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে পারেন, যা ব্যাংকিং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়। তিনি বলেন, “গণিত আপনাকে এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি দেয় যা বিশৃঙ্খলায়ও নিয়ম খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ফাইন্যান্সে সেটি সঠিক ঋণ সিদ্ধান্ত ও অযথা ঝুঁকির মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।”
বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কট কলেজ অব বিজনেস থেকে এমবিএ করছেন এবং স্টুডেন্ট ম্যানেজড ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড কনসোর্টিয়াম (SMIFC)–এ গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনভেস্টমেন্ট ক্লাবের স্টক অ্যানালিস্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

গবেষণা খাতেও তিনি সমান সফল। এখন পর্যন্ত সাতটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে তিনটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অর্থের জন্য গণিত: ঋণ পোর্টফোলিও অপ্টিমাইজেশনে পরিমাণগত পদ্ধতির একটি পর্যালোচনা প্রবন্ধে ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের ৮৭টি গবেষণা বিশ্লেষণ করে ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় উন্নত পদ্ধতি উপস্থাপন করেছেন। উদীয়মান অর্থনীতিতে ঋণ ঝুঁকি মূল্যায়ন মডেলের একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা: বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকিং খাতের উপর একটি আলোকপাত প্রবন্ধে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বিশেষ চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ খুঁজেছেন। আর ব্যাংকিংয়ে ব্লকচেইন: ঋণ প্রক্রিয়াকরণ, ক্রেডিট ইতিহাস এবং সম্মতিতে বিতরণকৃত লেজার অ্যাপ্লিকেশনগুলির একটি পর্যালোচনা প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঋণ অনুমোদনের সময় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব এবং একইসঙ্গে তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বাড়ানো যায়।
কাওসারের লক্ষ্য হলো এআই ও ব্লকচেইনভিত্তিক ঋণঝুঁকি মডেল তৈরি করা, যা দ্রুত, ন্যায্য ও স্বচ্ছ ঋণ অনুমোদনে সহায়ক হবে। তিনি মনে করেন, এই উদ্ভাবন ছোট ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়াবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “শুধু প্রযুক্তি দিয়ে আর্থিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর সঙ্গে সঠিক নীতি ও মানবিক বিচারের সমন্বয় থাকতে হবে। তবেই আস্থা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যাবে।”

বাংলাদেশের কমিউনিটি-ভিত্তিক ব্যাংকিং থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের গবেষণায় পৌঁছানো মাসুদ কাওসারের যাত্রা ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। তাঁর কাজ বৈশ্বিক ব্যাংকিং খাতকে দক্ষতা, ন্যায্যতা ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিচ্ছে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত করছে। তিনি বলেন, “যেখানেই কাজ করি না কেন, আমি আমার শিকড় সঙ্গে নিয়ে চলি। বাংলাদেশ আমাকে মূল্যবোধ দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র সুযোগ দিচ্ছে। এই দুয়ের সমন্বয়ই আমার আর্থিক ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলছে।”
গণিত, ব্যাংকিং ও উদীয়মান প্রযুক্তির সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে মো. মাসুদ কাওসার এমন এক গবেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, যার অবদান আগামী বছরগুলোতে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন




যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাইটক্লাব ব্যবসায়ী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী,সমালোচনার ঝড়

