১৩ অক্টোবর ২০২৫

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩০ এএম
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

 

 

বাংলাপ্রেস ডেস্ক: চলতি বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ম্যারি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের সিমন সাকাগুচি।

সোমবার (৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।


বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে সুইডেনের স্টকহোম থেকে এ বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট।

পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এটি রোগ-প্রতিরোধ বা ইমিউন সিস্টেমের একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীরের নিজস্ব উপাদান (self-antigens) এবং ক্ষতিকারক নয় এমন বহিরাগত উপাদান (যেমন: কিছু খাদ্য উপাদান, উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া) এর বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া (immune response) সৃষ্টি হওয়া রোধ করা হয়।

নোবেলজয়ী এই বিজ্ঞানীরা পাবেন একটি মেডেল, একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। যেসব বিভাগে একাধিক নোবেলজয়ী থাকবেন, তাঁদের মধ্যে এই ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা ভাগ হয়ে যাবে। বর্তমান বাজারে এর মান প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

প্রতিবছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল ঘোষণা করে সুইডেনের স্টোকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট। আর পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের নোবেল ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স।

১৯৯৫ সালে গবেষণার জগতে প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রথম বড় আবিষ্কারটি করেন জাপানি বিজ্ঞানী শিমন সাকাগুচি। সে সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, শরীরের ইমিউন টলারেন্স বা সহনশীলতা কেবল থাইমাসে তৈরি হয়, যেখানে ক্ষতিকর কোষগুলো নির্মূল হয়ে যায়। একে বলা হয় ‘সেন্ট্রাল টলারেন্স’। কিন্তু সাকাগুচি দেখান, ইমিউন সিস্টেম আরও জটিল। তিনি এমন এক নতুন শ্রেণির কোষের সন্ধান দেন, যারা শরীরকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে।

এরপর ২০০১ সালে মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র‌্যামসডেল আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। তারা দেখেন, একটি বিশেষ জাতের ইঁদুর সহজেই অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ তাদের ‘এফওএসপিথ্রি’ নামে এক জিনে ত্রুটি রয়েছে। পরে তারা প্রমাণ করেন, মানুষের শরীরেও এই জিনে মিউটেশন হলে গুরুতর অটোইমিউন রোগ ইমিউনোডিসরেগুলেশন পলিএন্ডোক্রিনোপ্যাথি এনটেরোপ্যাথি এক্স-লিংকড সিনড্রোম (আইপিইএক্স) দেখা দেয়।

২০০৩ সালে সাকাগুচি এই দুটি আবিষ্কারকে যুক্ত করেন। তিনি দেখান, এফওএসপিথ্রি জিনই সেই কোষগুলোর বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো তিনি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কার করেছিলেন। এই কোষগুলো এখন পরিচিত ‘রেগুলেটরি টি সেল’ নামে। যারা অন্য ইমিউন কোষগুলোর কর্মকাণ্ড নজরে রাখে এবং নিশ্চিত করে যে শরীর নিজের টিস্যুগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই না করে।

তাদের এই আবিষ্কার ইমিউন সিস্টেম গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যাকে বলা হয় ‘পেরিফেরাল টলারেন্স’। এর ওপর ভিত্তি করে অটোইমিউন রোগ ও ক্যানসারের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছে। পাশাপাশি, এই গবেষণা ভবিষ্যতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন আরও সফল করতে সাহায্য করতে পারে। এরই মধ্যে এসব চিকিৎসা পদ্ধতির কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চলছে।

মেরি ই. ব্রাঙ্কো যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ ফিলোসফি (পিএইচডি) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার। ফ্রেড র‌্যামসডেল ১৯৮৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকসর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত। শিমন সাকাগুচি ১৯৭৬ সালে এমডি ও ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টারর ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর তিনি।


বিপি/কেজে

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন