
এভাবেও ম্যাচ হারা যায়!


বাংলাপ্রেস ডেস্ক: কী হওয়ার কথা ছিল, আর কী হলো! শিরোনামটা হতে পারত ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়!’ সেখান থেকে কী হলো, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন!
আজ জাতীয় স্টেডিয়ামে লেখা হতে পারত হামজা-শমিত-মোরসালিনদের ডানায় চড়ে অসামান্য এক প্রত্যাবর্তনের গল্প, কিন্তু সেখানে ৪-৩ গোলে হেরে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ স্বপ্নের কবর রচনা হয়ে গেল রীতিমতো।
প্রতিপক্ষ শক্তিসামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়ে হারিয়ে দিয়ে গেলে না হয় কিছুটা হলেও মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যেত। কিন্তু বাংলাদেশ যে হেরে বসেছে নিজেদের ভুলেই। তাও একটা নয়, তিন তিনটে ভুলে, যার শেষটা এসেছে একেবারে শেষ মুহূর্তে। তখন শূন্য দৃষ্টি নিয়ে হামজা চৌধুরীর অভিব্যক্তিটাই বলে দিচ্ছিল সব। এমন এক ম্যাচে হারের পর এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কীইবা করার থাকে কারো?
অথচ ম্যাচের শুরুটা রীতিমতো স্বপ্নের মতো হয়েছিল। ম্যাচের আগে যাকে নিয়ে হংকং চায়নার কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড খানিকটা তাচ্ছিল্যের সুরেই বলেছিলেন, ‘ও আমাদের বেঞ্চেই পড়ে থাকত’, সেই হামজা চৌধুরীই এনে দিয়েছিলেন প্রথম গোলটা। সেটাও আবার সরাসরি ফ্রি কিক থেকে, যেমন গোলের দেখা বাংলাদেশ সচরাচর পায় না।
সে গোল যদি একপাশেও রাখা হয়, ওই অর্ধে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি সফরকারীরা। হামজা চৌধুরীকে পাহারায় রাখতে যাকে রাখা হয়েছিল, তাকে ফাঁকি দিয়ে লেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার দৌড়েছেন সারা মাঠে। বাংলাদেশও দাপিয়ে বেড়িয়েছে এই অর্ধে।
সেই মোমেন্টামটা হাতছাড়া হয়ে গেল এক ভুলে। প্রথমার্ধের সম্ভাব্য শেষ অ্যাকশন ছিল সেটা, কর্নার থেকে বল পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিপদসীমায় হাওয়ায় ভাসছিল বল, তেমনই এক সময় ফয়সাল আহমেদ ফাহিম করে বসলেন ভুল, বল চলে যায় সুযোগসন্ধানী এভেরতন কামারগোর কাছে, একটু দূরেই হামজা ছিলেন, তবে তিনি কাছে যাওয়ার আগেই বল চলে যায় জালে। লিড হারানোর বিষাদে পোড়ে বাংলাদেশ। কে জানতো সেটা ‘হ্যাটট্রিক’ ভুলের বউনি হলো সবে!
সেই এক গোল হংকংকে মোমেন্টাম এনে দিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তার ছাপও দেখা যাচ্ছিল, প্রতিপক্ষ নিজেদের পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেয়েছিল যেন। গোলটাও ‘পেয়ে গেল’ একটু পরই। পেয়ে গেল বলতে হচ্ছে, কারণ গোলটা যে রীতিমতো উপহারই পেয়েছে তারা! বক্সের একটু সামনে সোহেল রানা জুনিয়র বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন বদলি হিসেবে মাঠে আসা রাফায়েল মেরকেজের পায়ে। ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতি থেকে গোল না করার বান্দা তিনি নন, তিনি ভুল করেনওনি। বাংলাদেশ ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে ৫০তম মিনিটে।
র্যাঙ্কিংয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা হংকং পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের উপহার নিয়েই গোল করে যাবে, তা কী করে হয়? নিজেদের নৈপুণ্যেও একটা গোল এল। সেটা আরেকটু হলে ম্যাচ থেকেই বাংলাদেশকে ছিটকে দিচ্ছিল। বাংলাদেশের অফসাইড ফাঁদ এড়াতে প্রথমার্ধে হংকংকে বেশ ধুঁকতে হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে অবশেষে আলোর মুখ দেখে তাদের সে চেষ্টা। মাঝমাঠ থেকে একটা থ্রু যায় ডান পাশে থাকা এভেরতনের কাছে, তিনি সাদ উদ্দিনকে নাটমেগ করে বল দিলেন মেরকেজকে। জোড়া গোল করে জাতীয় স্টেডিয়ামের যা প্রাণ ছিল, কেড়ে নেন বদলি হিসেবে নামা এই স্ট্রাইকার।
তবে নাটকের তখনো অনেক বাকি। দুটো গোল উপহার দিয়ে বসা বাংলাদেশ একটা পাল্টা উপহার পায় ৮৪ মিনিটে। ৬ বছর আগের সল্টলেককে মনে করিয়ে দেওয়ার মতো একটা জায়গা থেকে নেওয়া জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিক গিয়ে বক্সে পড়ে। বক্সের ডান পাশ থেকে ক্রস মতো কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন ফাহামেদুল, গিয়ে পড়ল গোলরক্ষকের হাতে; তবে শিশিরভেজা বলটা তিনি কবজায় রাখতে পারেননি। তার হাত ফসকে বেরিয়ে যেই না গেল বলটা, সঙ্গে সঙ্গে শিকারী বাজের মতো তা ছোঁ মেরে জড়ালেন শেখ মোরসালিন। জাতীয় স্টেডিয়ামে মহাসমুদ্রের গর্জনটা ফিরে এল সঙ্গে সঙ্গে।
এরপর আক্ষরিক অর্থেই নানা ‘নাটক’ দেখা গেছে পিচে। একটা গোলের লিড ধরে রাখতে কী অভিনয়ই না করেছেন সফরকারী ফুটবলাররা। সবকিছু বৃথা গেল বলে মনে হচ্ছিল যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে। অভিষিক্ত জায়ান আহমেদ বদলি হিসেবে মাঠে এসেছিলেন তৃতীয় গোলের পর। এরপরই বাম পাশ থেকে প্রথম ক্রসের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জায়ানই একটা কর্নার আদায় করে দিয়েছিলেন দলকে।
শেষ মুহূর্তে পাওয়া সে কর্নার মোরসালিন ফেললেন বক্সে। হংকংয়ের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তা দিক বদলাল, তবে তাতে সুবিধাই হয়েছিল, ফাঁকায় থাকা শমিতের মাথায় গিয়ে পড়েছিল বলটা; বলটা যখন আছড়ে পড়ল তখন জাতীয় স্টেডিয়ামে কান পাতা দায়! কোচ হাভিয়ের কাবরেরা দিগ্বিদিক ছুটছেন, বাংলাদেশের তখন মনে হচ্ছিল, অবিশ্বাস্য একটা প্রত্যাবর্তনের গল্প বুঝি লেখা হয়েই গেল!
সেখান থেকে পরিস্থিতিটা থাম্বনেইলের ছবিটার মতো হয়ে গেল শেষেরও শেষ মুহূর্তে। শেষ অ্যান্টিক্লাইম্যাক্সটা হলো তখন। রেফারি যখন খেলা নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দিলেন, তখন মনে হচ্ছিল কয়েক সেকেন্ডেরই তো ব্যাপার! ওই ক’টা সেকেন্ড জাল বাঁচিয়ে রাখা তো যাবেই!
ভুলটা ভাঙালেন সাদ উদ্দিন। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের ‘ভুলের হ্যাটট্রিক’টা সারলেন তিনি, বল তুলে দিলেন মেরকেজের পায়ে। মেরকেজও হ্যাটট্রিকটা পূরণ করলেন।
বাংলাদেশের গোলের হাপিত্যেশ বহুদিনের। প্রতিযোগিতামূলক এক ম্যাচে তিন গোলের দেখা দলটা সচরাচর পায় না। সেখানে র্যাঙ্কিংয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা এক দলের জালে এক ম্যাচেই ৩ গোল জড়ানো গিয়েছিল। সে ম্যাচ থেকে নিদেনপক্ষে ড্রটাও এল না, সেটা বিস্ময়েরই বৈকি! আরও বিস্ময় জাগাল এই তিন ভুল, যে তিন ভুলে সর্বনাশ হলো বাংলাদেশের।
বিপি>টিডি
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন



-68eb25d6635b2.jpg)
-68eb58c4c0835.jpg)
