
কার্ক হত্যাকাণ্ড: এডিএলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন এফবিআই পরিচালক প্যাটেল


মিনারা হেলেন: এফবিআই বুধবার ঘোষণা করেছে যে তারা অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগের (এডিএল) সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব ছিন্ন করছে। এ প্রসঙ্গে সংস্থার পরিচালক কাশ প্যাটেল এন্টিসেমিটিজমবিরোধী এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন।
প্যাটেল সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে কটাক্ষ করে বলেন, কোমি ২০১৪ সালে এডিএল-কে দেওয়া এক বক্তৃতাকে এডিএল-এর উদ্দেশে লেখা প্রেমপত্র” বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং ২০১৭ সালেও তিনি সংগঠনটির অনুষ্ঠানে একইভাবে ভাষণ দেন। কোমি দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লক্ষ্যবস্তু হয়ে আছেন এবং গত মাসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
“জেমস কোমি এডিএল-এর জন্য ‘প্রেমপত্র’ লিখেছিলেন,” বুধবার প্যাটেল লিখেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, কোমি এডিএল-এর সঙ্গে এফবিআই এজেন্টদেরও জড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সেই যুগ শেষ। বর্তমান এফবিআই এমন কোনো রাজনৈতিক আড়ালে লুকানো সংগঠনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করবে না, যারা কেবল নিজেদের নজরদার বলে পরিচয় দেয়।
ঘোষণাটি আসে একদিন পরই, যখন এডিএল হঠাৎ করে তাদের ‘চরমপন্থার শব্দকোষ’ (Glossary of Extremism) বন্ধ করে দেয়।
এডিএল এক বিবৃতিতে জানায়, “বহু বছরের প্রচেষ্টায় লেখা ১,০০০-এরও বেশি এন্ট্রি নিয়ে এডিএল-এর শব্দকোষ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ের উচ্চপর্যায়ের তথ্যের উৎস ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অনেক এন্ট্রি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিল। একইসঙ্গে বেশ কিছু এন্ট্রিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত ও অপব্যবহার করা হয়েছে।”
যদিও প্যাটেল তাঁর বক্তব্যে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি, এডিএল-এর ওই শব্দকোষে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ (TPUSA)-এর উল্লেখ ছিল। সংগঠনটি ডানপন্থী কর্মী চার্লি কার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যিনি গত মাসে এক অনুষ্ঠানে নিহত হন।
এডিএল ২০১৯ সালে প্রথমবার টিপিইউএসএ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং কার্কের মৃত্যুর পর সেটি হালনাগাদ করে জানায় যে কার্ক খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করতেন।
একটি সংরক্ষিত পৃষ্ঠায় বলা হয়, টিপিইউএসএর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী, এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি, বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার মানুষ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠী সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার ইতিহাস বহন করে।
যদিও টিপিইউএসএ বারবার বলেছে তারা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ প্রত্যাখ্যান করে, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা প্রকাশ্যে তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। এমনকি আমেরিকাফেস্ট সম্মেলন এবং অন্যান্য টিপিইউএসএ আয়োজনে উগ্রপন্থি ও অতিদক্ষিণপন্থী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারকারীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এটাও সত্য যে, কির্ক নিজে প্রকাশ্যে এসব গোষ্ঠীকে নিন্দা করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন তারা টিপিইউএসএর প্রতিনিধিত্ব করে না।
এডিএল প্যাটেলের অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি, তবে এফবিআইকে সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এডিএল ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানায়, যারা প্রতিদিন নিরলসভাবে কাজ করেন সব আমেরিকানদের সুরক্ষায়, তাঁদের বংশধারা, ধর্ম, জাতিগত পরিচয়, বিশ্বাস, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কিংবা অন্যান্য পার্থক্য নির্বিশেষে, সংস্থাটি জানায়।
অভূতপূর্ব এন্টিসেমিটিজম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য—ইহুদি জনগণের সুরক্ষা—বাস্তবায়নে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্যাটেলের মন্তব্য ছিল এডিএল-এর বিরুদ্ধে এক অস্বাভাবিক সমালোচনা, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসন যখন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এন্টিসেমিটিজম প্রতিরোধে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে এ প্রচেষ্টার একটি বড় অংশ কেন্দ্রীভূত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লক্ষ্য করে, বিশেষত ইসরায়েল-হামাস সংঘাতবিষয়ক প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে।
দুই সংগঠনের মধ্যে অংশীদারিত্বটি আসলে কী ধরনের ছিল, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৭ সালের বক্তৃতায় কোমি এডিএল-এর এন্টিসেমিটিজম ও ঘৃণাজনিত অপরাধ নজরদারি এবং সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে, সংগঠনটিকে ঘৃণার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য প্রশংসা করেন।
কোমি বলেন, আমরা এডিএল-এর সঙ্গে কাজ করছি আমাদের সেবা দেওয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়তে। আমরা মানুষের উদ্বেগ শুনছি এবং জানাচ্ছি কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি। আমরা বিশ্বাস ও সংহতির পরিবেশ তৈরি করছি, যাতে তারা জানে প্রয়োজনে আমাদের ডাকতে পারে এবং আমরা তাদের সুরক্ষা দেব।
যখন কোনো ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না, তখন আমাদের এজেন্ট ও বিশ্লেষকরা অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।
প্যাটেলের পূর্বসূরি ক্রিস্টোফার রে পূর্বে উল্লেখ করেছিলেন যে এন্টিসেমিটিজমজনিত হামলাই মোট ঘৃণাজনিত অপরাধের বৃহত্তম অংশ।
রে ২০২৩ সালে কংগ্রেসে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন, বাস্তবতা হলো প্রায় সব সন্ত্রাসী সংগঠন ইহুদি সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। আর যখন দেখবেন, মোট জনসংখ্যার প্রায় ২.৪ শতাংশের একটি গোষ্ঠী ধর্মীয় ঘৃণাজনিত অপরাধের প্রায় ৬০ শতাংশের শিকার হচ্ছে, তখন সেটি সবাইকে নাড়া দেওয়ার মতো। তারা আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।
বিপি।সিএস
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন


সামরিক সংঘর্ষের পর আফগান সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি পাকিস্তানের

ভুটান থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনলে দুই দেশেরই উপকার: হামু দর্জি

মিশরে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গাজা শান্তিচুক্তিতে সই করলেন ট্রাম্প

