১৪ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না আমানসহ বিএনপির ৫ নেতা

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না আমানসহ বিএনপির ৫ নেতা

বাংলাপ্রেস ডেস্ক : দুর্নীতির অভিযোগে প্রাপ্ত সাজা (কনভিকশন অ্যান্ড সেনটেন্স) স্থগিত চেয়ে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানসহ পাঁচ নেতার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর ফলে এই পাঁচ নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আবেদন খারিজ করার সঙ্গে সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে দণ্ড (কনভিকশন) স্থগিতের সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, যদি আপিল বিভাগে সাজা স্থগিত না করা হয়, তাহলে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কারোরই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে আপিল বিভাগই তাদের একমাত্র ভরসা। হাইকোর্টে আপিল পেন্ডিং অবস্থায় সাজা স্থগিতের বিধান নেই বলেও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ফলে, আপিলকারীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকছে না বলে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

বিএনপির ওই পাঁচ নেতা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউলাহ আমান, বিএনপিসমর্থিত চিকিৎসকদের নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মো. মশিউর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুল ওহাব।

আদালতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম। ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করীম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। ওয়াদুদ ভুঁইয়া ও আব্দুল ওহাবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ব্যারিস্টার এ কে এম ফখরুল ইসলাম।

মশিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না?-এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান বলেছেন, হাইকোর্টের এই আদেশে অন্য দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ফলে খালেদা জিয়াসহ অন্য দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না।

আদালতের পর্যবেক্ষণের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে, আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত ও জামিন হলেই কেবল অংশ নিতে পারবেন।

এর আগে সোমবার (২৬ নভেম্বর) এই পাঁচ নেতার ফৌজদারি কাযর্বিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়।

দুদকের আেইনজীবী খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, ‘পাঁচজনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক্ষেত্রে আদালত সুনিদিষ্টভাবে বলেছেন, সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে আপিল বিভাগে তা স্থগিত না হওয়া পর্ন্ত কেউ নিবাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানই এখানে প্রাধান্য পাবে।’

মামলার বিবরণে জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জন করায় ওয়াদুদ ভুঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল ২০০৯ সালে জামিন লাভ করেন।

এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করায় মো. আবদুল ওহাবকে যশোর স্পেশাল জজ গত বছরের ৩০ অক্টোবর ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ত্রিশ হাজার টাকার জরিমানা করে রায় দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ৬ ডিসেম্বর জামিন নিয়েছেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধা মামলা করেন।

এ মামলায় ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে পৃথক ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে, ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।

আমান উল্লাহ আমানকে দুর্নীতির মামলায় ২০০৭ সালের ২১ জুন বিচারিক আদালত ১৩ বছরের সাজ দেন। পরে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন বলে জানান আমিন উদ্দিন মানিক।

বাংলাপ্রেস/এফএস

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন