
বাংলাপ্রেস প্রবাস দপ্তর: নিউ ইয়র্কে মেডিকেইড বা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ১১ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে এক গৃহস্বাস্থ্য সেবা (হোম হেলথ এইড) কেম্পানির সিইও কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ওই নারীর নাম ফারাহ রুবানি। তিনি ব্রুকলিন ভিত্তিক হোম কেয়ার কোম্পানি হোপটন-এর প্রধান।
তার স্বামী নিউ ইয়র্ক পুলিশ (এনওআইপিডি) এর একজন কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে রুবানির বাড়ি-গাড়ীসহ সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এসব সম্পদ তিনি এ অর্থ আত্মসাৎ করে গড়ে তুলেছিলেন। আর এ সম্পদ থেকে আসা অর্থ দিয়ে তিনি বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন।
এদিকে হোপটন বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও। এ কোম্পানিতে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি ৪ সপ্তাহ ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তারা ট্যাক্স ফাইলের জন্য ডব্লিউ-২ পাবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক অ্যাটর্ণি জেনারেলের অফিস থেকে দায়ের করা সিভিল স্যুটে বলা হয়েছে, ফারাহ রুবানি এবং তার অংশীদাররা শিশুদের (অটিস্টিক বা ডিজেবল) জন্য হোম কেয়ারের নামে নিউ ইয়র্ক স্টেট মেডিকেইড থেকে বিলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন।
অথচ দেখা গেছে কোন শিশুকেই তারা হোম কেয়ার দেননি। যে শিশুদের সেবা দেয়ার কথা বলে তারা অর্থ তুলে নিয়েছেন সেই শিশুদের মা-বাবাকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়েছিল।
অ্যাটর্ণি জেনারেল বলেছেন, ম্যানহাটান সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, এ প্রকল্প থেকে রুবানি একাই ৪ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। রুবানি একজন পাকিস্তানি আমেরিকান। তার স্বামী রিচার্ড ট্রিকারিও ৫০ প্রিসিংটের একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ৫১ বছর বয়সী ফারাহ রুবানির বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম ডিগ্রির ‘গ্র্যান্ড লার্সেনির’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ নিয়ে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের ভাষ্য, ম্যানহাটন সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, এই প্রকল্প থেকে রুবানি একাই চার মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম ডিগ্রির ‘গ্র্যান্ড লার্সেনির’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা গেছে, হোপটনের সব কার্যালয় এখন বন্ধ রয়েছে। এ কোম্পানিতে কর্মরতরা প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের বেতনের জন্য অফিসে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। হোপটনের বিরুদ্ধে হেলথ ফাস্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও ইতোমধ্যে একটি মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে।
হোপটনের ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের স্টারলিংয়ে কর্মরত বাংলাদেশি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি এ কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছি। সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের চেক পেয়েছি। এখন চার সপ্তাহের চেক বাকি আছে। এ চেক আমরা কার কাছে থেকে পাবো জানি না। আমার মতো অনেক বাংলাদেশি এ সমস্যায় রয়েছেন।’
হোপটনের ব্রুকলিনের কনি আইল্যান্ডে কর্মরত বাংলাদেশি আবদুল হাই বলেন, ‘আমি চার সপ্তাহ ধরে বেতন পাই না। আমাদের কাজ আদৌ আছে কি না সেটিও জানি না। তবে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছি ট্যাক্স ফাইল করার জন্য ডব্লিউ-২ পাব কি না তা নিয়ে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি নয়, আমার মতো অনেক বাংলাদেশি একই সমস্যায় রয়েছেন।’
নিউইয়র্কের একাধিক সূত্রে জানা যায়, হোপটন অন্য কোম্পানির চেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে কর্মচারী নিয়োগ করতো। এ কারণে কোনো কিছু চিন্তা না করেই বাংলাদেশিসহ অনেক প্রবাসী এ কোম্পানির লোভনীয় অফারে যোগ দিতেন। এ ছাড়া কোম্পানিতে কর্মচারীদেরও বেশি শ্রম দিতে হতো না, কারণ ফারাহ রুবানি ওই কর্মচারীদের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে অনেক বেশি কর্মঘণ্টা দেখিয়ে পুরো অর্থগুলোই আত্মসাৎ করতেন।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ফারাহ রুবানি বেশ বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। প্রায় প্রতি মাসেই তিনি অবকাশ যাপনের জন্য ফ্লোরিড়ার মায়ামিতে যেতেন। যেখানে রয়েছে তার ‘রিচ অব দ্যা হার্ট’ (হৃদয়ের ধনি ) নামের একটি বাড়ী। হোপটনের বিরুদ্ধে হেলথ ফাস্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও ইতোমধ্যে একটি মামলা করেছে বলে জানা গেছে।
হোপটন বন্ধ এবং ফারাহ রুবানি গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশি অধ্যুাষিত এলাকাগুলোতে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এ ধরনের কাজ থেকে বাংলাদেশিদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই।
বিপি/সিএস
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]