১৩ অক্টোবর ২০২৫

নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ গঠন

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৯ পিএম
নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ গঠন

 

নোমান সাবিত: নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের (ডেমোক্র্যাট) বিরুদ্ধে মর্টগেজ জালিয়াতির অভিযোগে ফেডারেল গ্র্যান্ড জুরি দুইটি অভিযোগ এনেছে—যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত 'প্রতিশোধের অভিযান'-এর পর তার দ্বিতীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে দায়ের করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, জেমসের বিরুদ্ধে ব্যাংক জালিয়াতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রাথমিক আদালত শুনানি ২৪ অক্টোবর নরফোকে একটি ম্যাজিস্ট্রেট বিচারকের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। ডিস্ট্রিক্টের ভারপ্রাপ্ত মার্কিন অ্যাটর্নি লিন্ডসি হ্যালিগান এই মামলার একমাত্র প্রসিকিউটর হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, 'আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। এই মামলার অভিযোগগুলো ইচ্ছাকৃত ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন—যা জনআস্থার মারাত্মক লঙ্ঘন। আমরা আইন ও প্রমাণ অনুসরণ করবো যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।'

অন্যদিকে, জেমস এক বিবৃতিতে অভিযোগগুলোকে 'আমাদের বিচারব্যবস্থার ওপর প্রেসিডেন্টের মরিয়া রাজনৈতিক অস্ত্রায়নের ধারাবাহিকতা' বলে অভিহিত করেছেন। তার দাবি, তিনি নিউ ইয়র্কের শীর্ষ প্রসিকিউটর হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের জন্যই ট্রাম্প প্রশাসনের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।

তিনি বলেন, 'এই অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রকাশ্যে বলেছেন, তার একমাত্র লক্ষ্য রাজনৈতিক প্রতিশোধ—যে কোনো মূল্যে।'

এই অভিযোগে সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে দোষী সাব্যস্ত হলেও জেমসের এটি প্রথম অপরাধ হওয়ায় তুলনামূলক কম শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই মামলাটি বিচারক জামার ওয়াকারের আদালতে বরাদ্দ হয়েছে, যিনি বাইডেন প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত।

প্রসিকিউটরদের দাবি, ২০২০ সালে জেমস ভার্জিনিয়ার নরফোকে একটি বাড়ি ক্রয় করেন “সেকেন্ড হোম রাইডার” চুক্তির আওতায়, যেখানে তাকে বাড়িটি দ্বিতীয় বাসস্থান হিসেবে ব্যবহারের শর্তে সুবিধাজনক ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি বাড়িটি ভাড়া দেন একটি পরিবারকে—যা বিনিয়োগ সম্পত্তির আওতায় পড়ত এবং তাতে এই ঋণ সুবিধা প্রযোজ্য ছিল না। এতে প্রায় ১৯ হাজার ডলারের অবৈধ আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেমস তার হোম ইন্স্যুরেন্স ও কর-সংক্রান্ত নথিতেও সম্পত্তিটির ব্যবহারের বিষয়ে 'ভুল তথ্য' দিয়েছেন বলে প্রসিকিউটরদের দাবি।

জেমস ট্রাম্পের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দেওয়ানি জালিয়াতির মামলা করার পর থেকেই প্রেসিডেন্টের রোষানলে পড়েন।

তার মামলায় ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের রায় দেওয়া হয়েছিল, যা ট্রাম্পের সম্পদ ও ব্যবসা সাম্রাজ্যের জন্য বড় হুমকি তৈরি করে।

তবে আপিল আদালত গত আগস্টে রায়ের আর্থিক জরিমানা বাতিল করলেও মামলার অন্যান্য দিক বহাল রাখে। ট্রাম্প ও জেমস উভয় পক্ষই রায়ের বিরুদ্ধে নতুন আপিল দায়ের করেছেন।

জেমস বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি তার মামলার পক্ষে 'দৃঢ়ভাবে' দাঁড়িয়ে আছেন এবং তার তদন্ত “রাজনীতি নয়, বরং তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে” পরিচালিত হয়েছে।

জেমসের বিরুদ্ধে এই মর্টগেজ জালিয়াতির অভিযোগ প্রথম আসে ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সি (FHFA)-এর কাছ থেকে। সংস্থার পরিচালক বিল পুল্টে গত এপ্রিল মাসে তার বিরুদ্ধে একটি অপরাধমূলক রেফারেল দাখিল করেন।

পুল্টে অভিযোগ করেন, জেমস নিউ ইয়র্কে সরকারি পদে থেকে ভার্জিনিয়ার একটি বাড়িকে তার “প্রধান বাসস্থান” হিসেবে দেখিয়েছেন—যা আইনবিরুদ্ধ।

তিনি বলেন, 'নরফোকের ওই সম্পত্তি কেনার সময় জেমস নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এবং আইন অনুযায়ী তার প্রধান বাসস্থান নিউইয়র্কেই থাকার কথা ছিল। অথচ তার মর্টগেজ আবেদনে নরফোকের বাড়িটিকে প্রধান বাসস্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।'

পুল্টে একই ধরনের রেফারেল সিনেটর অ্যাডাম শিফ (ডি–ক্যালিফোর্নিয়া) ও ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড সদস্য লিসা কুকের বিরুদ্ধেও করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডি এই অভিযোগগুলো তদন্তে 'বিশেষ অ্যাটর্নি' নিয়োগ দেন। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এড মার্টিনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়, যিনি এই বছর জেমসের ব্রুকলিনের বাড়ির সামনে তোলা একটি ছবিও প্রকাশ করেন।

এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র জেমসের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, যা তিনি 'আক্রমণাত্মকভাবে লড়বেন' বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক আইনজীবী অ্যাবে লোয়েলের মাধ্যমে মামলাটি পরিচালনা করছেন—যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকদেরও প্রতিনিধিত্ব করেছেন পূর্বে।

এই অভিযোগ এমন এক সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্পের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির বিরুদ্ধেও গত মাসে মিথ্যা সাক্ষ্যের অভিযোগে দুটি ফৌজদারি মামলা গঠিত হয়েছে।

কোমি ইতিমধ্যেই আদালতে হাজির হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন, এবং আগামী জানুয়ারি মাসে তার মামলার শুনানি নির্ধারিত হয়েছে।

মামলার তদন্তে নিয়োজিত এক প্রসিকিউটর আগে বলেছিলেন, জেমসের বিরুদ্ধে মর্টগেজ জালিয়াতির 'কোনও যথেষ্ট প্রমাণ' পাওয়া যায়নি।

বিপি।সিএস

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন