
নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটে আ.লীগের হামলার ঘটনায় দুই ব্যক্তি আটক না গ্রেপ্তার?


নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজকে হেনস্তার চেষ্টার অভিযোগে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দুতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ২৪ আগস্ট বিকেলে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কনস্যুলেটে ঢোকার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা মাহফুজ আলমকে উদ্দেশ করে ডিম ছোড়েন। এরপরই কনস্যুলেটের দরজা-জানালা ভাঙচুর শুরু করেন।
ওইদিন আওয়ামী নেতাকর্মীরা বিকেল ৫টা থেকেই কুইন্সের এস্টোরিয়াস্থ কনসাল জেনারেল অফিসের সামনে অবস্থান নেন। তারা বাংলাদেশ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল কিছু নেতাকর্মী মিছিল করতে করতে কনস্যুলেটের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। সিকিউরিটি গার্ড ও অফিস স্টাফদের বাধায় তারা ভেতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে দরজা-জানালায় লাথি মারেন। এতে কন্যুলেটের প্রধান ফটকের কাচের দরজা ভেঙে যায়। নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ দ্রুত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ২ জনকে আটক করে। পরে অবশ্য পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।
গোলাম মোর্তোজা তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লিখছেন, নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটে আ. লীগের সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি নিয়ে যার যেমন ইচ্ছে তেমন মন্তব্য করছেন। আমার নাম উল্লেখ করেও কেউ কেউ বলছেন,একটা মামলা হয়েছিল। আমি নাকি আ. লীগের সঙ্গে আপোষ করে ফেলেছি। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। ভিত্তিহীন তথ্যহীন অসত্য মত প্রকাশ করলে আমার কিছু করার থাকে না। শুধু সত্যটা মানুষকে জানাতে পারি। সেই হিসেবে কয়েকটি সত্য তথ্য জানাই।
প্রথমত, ঘটনা ঘটেছে নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটে। আমার দায়িত্ব বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াশিংটন ডিসিতে। আমি অতিথি হিসেবে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের অনুষ্ঠানে গিয়েছি, অংশ নিয়েছি,আয়োজনে সহায়তা করেছি।
দ্বিতীয়ত, আ. লীগের সন্ত্রাসী হামলার পুরো বিষয়টি নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেট লিখিতভাবে,সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে ভিডিও ফুটেজসহ নিউ ইয়র্ক পুলিশ, সিক্রেট সার্ভিসকে জানিয়েছে।ওয়াশিংটন দূতাবাসের পক্ষ থেকে স্টেটস ডিপার্টমেন্ট এবং সিক্রেট সার্ভিসকে একই ভাবে জানানো হয়েছে । দূতাবাস এবং নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেট প্রতিনিয়ত বিষয়টির খোঁজ রাখছে। নিউ ইয়র্ক ডিপ্লমেটিক সিকিউরিটি উইং, নিউ ইয়র্ক মেয়র অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারে পক্ষ থেকে সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটকে সংখ্যা উল্লেখ না করে জানানো হয়েছে,এখন পর্যন্ত একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।পুরো প্রক্রিয়াটি এখনও তদন্তাধীন।
তৃতীয়ত, তদন্ত সম্পন্ন হলে নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেট ও দুতাবাসকে সুনির্দিষ্ট করে জানাবে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা। তদন্তে যে অভিযোগ পাওয়া যাবে তার উপর ভিত্তি করে মামলা করতে হবে। এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা হয় নাই,অভিযোগ জানানো হয়েছে। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়া। মামলা করার পর্যায় আসে নাই।
২৪ আগস্টের ঘটনা, আজ ১৮ সেপ্টেম্বর। এত সময় লাগছে কেন? এই প্রশ্ন করছেন কেউ কেউ। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত প্রক্রিয়া সাধারণভাবে সময়সাপেক্ষ।কারও প্রভাবে ‘দ্রুত’ তদন্ত হয় না। তদন্ত চলাকালীন কলস্যুলেট বা দূতাবাসের পক্ষ থেকে মন্তব্য করাটাও শোভনীয় নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত মানবতাবিরোধী অপরাধী আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপোষের কোনো ঘটনা ঘটে নাই, কারও সেই সুযোগ নাই,আমার তো নাই-ই। আমি বা অন্য যে কারও পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে তদন্তাধীন বিষয়ে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপোষ করার বা তদন্তকারীদের প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ নাই,এটা বাংলাদেশ নয়-ভিত্তিহীন অসত্য মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আমরা সম্ভবত তা ভুলে যাচ্ছি।
তদন্তের সর্বশেষ তথ্যসহ নিউ ইয়র্ক কন্যুলেটের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করে জানানো হবে।এখানে আপোষ বা গোপণীয়তার কোনো সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনে 'Detention'(আটক) ও 'Arrest' (গ্রেপ্তার) এর পার্থক্য:
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী পুলিশ কাউকে 'Reasonable Suspicion' (যৌক্তিক সন্দেহ) থাকলে সাময়িকভাবে থামাতে বা আটক করতে পারে। এটাকে সাধারণত টেরি স্টপ (Terry Stop) বলা হয়।
আটক অবস্থায় পুলিশ সীমিত প্রশ্ন করতে পারে এবং 'Frisk' বা বাহ্যিক তল্লাশি করতে পারে, যদি সন্দেহ করে যে ব্যক্তির কাছে অস্ত্র থাকতে পারে। Detention বা আটক সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য হয়। দীর্ঘ সময় আটকে রাখলে তা আদালত গ্রেপ্তার হিসেবে গণ্য করতে পারে। আটক মানেই অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযুক্ত হওয়া নয়।
Arrest (গ্রেপ্তার)–মার্কিন আইন
Arrest হয় যখন পুলিশ কাউকে probable cause (অপরাধ সংঘটনের যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ) এর ভিত্তিতে ধরে। Arrest হলে একজনকে custody (আইনগত হেফাজত) তে নিতে হয়। গ্রেপ্তারের পর ব্যক্তিকে Miranda Rights (চুপ থাকার অধিকার ও আইনজীবী পাওয়ার অধিকার) জানাতে হয়। Arrest এর পর পুলিশ সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে বাধ্য।
গ্রেপ্তার মানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা criminal charges হতে পারে।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি। সিএসআপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন




যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাইটক্লাব ব্যবসায়ী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী,সমালোচনার ঝড়

