নোমান সাবিত: নিউ ইয়র্কে বাড়িতে যত্ন সেবা (হোম কেয়ার সার্ভিস) ও ভোক্তা নির্দেশিত ব্যক্তিগত সহায়তা প্রোগ্রাম (সিডিপ্যাপ) ব্যবসায় প্রতারণা ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন প্রবাসীসহ শত শত ব্যবসায়ী। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল ও স্টেট অ্যাসেম্বলি স্পিকার কার্ল হিয়াস্টি হোমকেয়ার ব্যবসায় প্রতারণা ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তাব করেন। এ ঘোষণয় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর ও স্টেট এ্যাসেম্বলী ও সিনেটের প্রতিনিধিদের সাথে বাজেটের বিভিন্ন খাতে অপচয় রোধের সম্ভাব্য পন্থা নিয়ে আলোচনা করেন। এ পর্যায়ে মেডিকেইড তহবিল বৃদ্ধি এবং মেডিকেইড প্রতারণা কিভাবে বন্ধ করা যায় এ বিষয় উঠে আসে আলোচনায়। আগামী অর্থ বছরে হোম কেয়ার খাত থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বাঁচানোর একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হোম কেয়ার মেডিকেইড প্রোগ্রামের ৮ বিলিয়ন ডলার বাজেটের বিষয়টি নিয়ে নিউ ইয়র্ক পোষ্ট একটি রিপোর্ট করেছে। গত ১১ এপ্রিল প্রকাশিত এই রিপোর্টে উত্থাপন করা হয় গভর্নর হকুল এবং স্টেট অ্যাসেম্বলি স্পীকারের পরিকল্পনাটি। গভর্নর অফিসে মেডিকেইড হোম কেয়ারের ৮ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করবেন বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদটিতে।
নিউ ইয়র্ক স্টেটের নিম্ন আয়ের বয়স্ক মানুষের জীবন ধারা পাল্টে দিয়েছে বাড়িতে যত্ন সেবা। বাংলাদেশিসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রহণ করছেন বাড়িতে যত্ন সেবা ও ভোক্তা নির্দেশিত ব্যক্তিগত সহায়তা প্রোগ্রাম। বয়স্ক নারী-পুরুষ যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ, নিজের কাজ নিজে করতে অক্ষম এবং অল্প বয়সী অথচ কর্মক্ষম তারাও এই সেবা পাওয়ার যোগ্য। এজন্য তাদেরকে হাসপাতাল বা নার্সিং হোমে থাকার প্রয়োজন নেই। নিজ ঘরে বসেই পরিবারের সদস্য কিংবা প্রতিবেশির মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করে থাকেন তারা। সেবা প্রদানের বিনিময়ে প্রতি ঘন্টায় পারিশ্রমিক পান সেবা প্রদানকারীগণ। ফলে বাড়িতে যত্ন সেবা ও ভোক্তা নির্দেশিত ব্যক্তিগত সহায়তা প্রোগ্রামের আওতায়ধীন পরিবারগুলো স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে। পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবন জীবিকা। অপর দিকে পরিবারে বয়স্ক নিকটাত্মীয়দের কদরও বেড়েছে দ্বিগুণ।
অতীতে নিউ ইয়র্কে বিশেষ একটি সম্প্রদায় একক সুবিধা ভোগ করতো স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্টের এসব প্রকল্পের। ২০১৬ সাল থেকে অনেক বাংলাদেশিরা বাড়িতে যত্ন সেবা ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে নিজ কমিউনিটিতে সেবাদান করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্ট পরিচালিত বাড়িতে যত্ন সেবার অর্থায়ন করে থাকেন স্টেটের মেডিকেইড তহবিল থেকে। বর্তমানে নিউ ইয়র্ক স্টেটে ছোট-বড় প্রায় ৭০০ এফ আই বা ফিস্কাল ইন্টারমেডিয়েটরি রয়েছে। হেলথ ডিপার্টমেন্টের লাইসেন্সের আওতায় তারা বাড়িতে যত্ন সেবা (হোম কেয়ার সার্ভিস) ও ভোক্তা নির্দেশিত ব্যক্তিগত সহায়তা প্রোগ্রাম (সিডিপ্যাপ) ছাড়াও অন্যান্য সেবা প্রদান করে আসছে গ্রাহকদের।
এসব ব্যবসায় মেডিকেইড বা স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্টের সরাসরি কোন নজরদারি না থাকায় বিভিন্ন সময় এক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রতারণার অভিযোগ উঠে নিউ ইয়র্ক স্টেট গভর্নর অফিস থেকে। এ নিয়ে স্টেট সরকার হোম কেয়ারগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য নিবন্ধনের মাধ্যমে ৬০টি হোম কেয়ার কোম্পানীকে লীড ফিস্কাল ইন্টারমেডিয়েটর নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে আরো ৭০টি লীড এফ আই করে মোট ১৩০টিতে উন্নীত করা হয় এই সংখ্যা। বড় ধরণের ৪৩০টি হোম কেয়ার বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে ১৩০টি লীড এফআইয়ের মাধ্যমে। কিন্তু তাতেও হোমকেয়ার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মেডিকেইডের অর্থ প্রতারণা বন্ধ হয়নি। কয়েকমাস পূর্বে গভর্নর ক্যাথি হুকুল এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং কিভাবে এই প্রতারণা বন্ধ করা যায় সেই পথ খুঁজতে থাকেন। চলতি সপ্তাহে গভর্নর ক্যাথি হকুল আগামী অর্থ বছরের জন্য ২৩৭ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেন।
তাদের পরিকল্পনার মূল বিষয় হলো বর্তমানের ১৩০টি লীড এফ আইয়ের পরিবর্তে সবগুলো এফ আইকে একটি মাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপিএল ইঙ্ক-এর আওতায় এনে সব কর্তৃত্ব এই কোম্পানীর উপর ন্যস্ত করা। গভর্নর হকুল এবং স্পীকার কার্ল হিয়াস্টির এই প্রস্তাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সকল হোমকেয়ার ব্যবসায়ী সহ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। হোমকেয়ার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন গুজবও চাউর হয়েছে।
গভর্নর এই আইন কার্যকর করতে নিউইয়র্ক মেডিকেইড সেকশন ১১১৫এ পরিবর্তন আনতে চান। এজন্য স্টেট অ্যাসেম্বলীতে প্রয়োজন হবে ভোটের। নিউ ইয়র্ক স্টেটের নিম্ন কক্ষ অ্যাসেম্বলীর ১৫০ সদস্যের মধ্যে সিংহভাগ সদস্যই ডেমোক্র্যাট। প্রস্তাবিত এই আইন পাশ হলে হোম কেয়ার সার্ভিসে বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ধারণা। এতে কমিউনিটির সাধারণ গ্রাহকগণ পড়বেন ভোগান্তিতে। হ্রাস পাবে সেবার মান। সংকুচিত হবে হোমকেয়ার সার্ভিসের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের কর্মসংস্থান।
এসব ব্যবসায় প্রতারণা ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণায় গত ১৫ এপ্রিল আলবেনিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী। অন্যান্য হোম কেয়ার এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরাও সেখানে গিয়েছিল। তারা বলেন, একটি কোম্পানির অধীনে সব হোম কেয়ার কোম্পানিকে এনে নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক হবে না। আর একটি কোম্পানির অধীনে এতগুলো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হলে ব্যাহত হতে পারে সেবার মান। সে কারণে আমরা চাই এখন যে রকম আছে সেভাবেই পরিচালিত হোক।
প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিরা অ্যালব্যানিতে সমবেত হয়েছিলেন আইনপ্রনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হোমকেয়ার প্রতিবাদ জানানোর জন্য। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, আইনপ্রনেতারা স্বল্প আয়ের নিউ ইয়র্কবাসীর স্বাস্থ্যসেবার দিকটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন এবং তাদের ক্ষতি হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মেকিডেইড নিয়ে যে প্রতারণা অতীতে হয়েছে অথবা বর্তমানে হচ্ছে, তা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার আনা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে হোমকেয়ার সার্ভিসের ওপর বড় ধরনের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]