নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ অ্যাসোসিশনের সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে ভয়ানক তিন প্রতারকের নামে দায়ের করা মামলা তদন্ত চলছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে খুব শিগিগির একটি তদন্ত প্রতিবেদক আসবে। এখনও এই তিন প্রতারক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের থেকে নিউ ইয়র্ক প্রবাসীদের সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন জালালাবাদ অ্যাসোসিশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান। গত রোববার (১৯ মে) সংগঠনের সাধারন সভায় তিনি এ আহবান জানান।
সভায় সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল, বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলাম ও সাবেক সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী যোগসাজস করে কমিটির অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংক থেকে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮ শত ৬ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৬ টাকা) উত্তোলন করে নিজের ইচ্ছেমত খরচ করেন যা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। জালালাবাদ অ্যাসোসিশন অব আমেরিকা আয়োজিত সভায় নেতৃবৃন্দরা এসব কথা বলেন।
উক্ত সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক রোকন হাকিম ও কোষাধ্যক্ষের মোহাম্মদ আলীম রিপোর্ট পেশ করেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম তার দীর্ঘ রিপোর্টে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন।
সভাপতি বদরুল হোসেন খান উল্লেখ করেন সংগঠনের একাউন্ট থেকে ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ডলার বেশি অর্থ উদ্ধারের জন্য সাবেক সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল ও সাবেক সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ এবং বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক ময়নুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী অফিসে অভিযোগ দায় করেছেন যা এখন তদন্তাধীন রয়েছে। কুইন্স কাউন্টির অভিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাটর্নি জোসেফ মোটনকে নিয়োগ করে আত্বাসাতকৃত অর্থ দিয়ে বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলামের নিজস্ব নামে কেনা বাড়ীর উপর আমরা লীন বসিয়েছি এবং বাড়িটির মর্টগেজ কোম্পানির বিরুদ্ধেও সংগঠনের চেক নিয়ে অবৈধভাবে অন্যের নামে বাড়ি রেজিস্ট্রি করায় মামলা দায়ের করা হয়েছে যা এখনও চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক ময়নুল ইসলাম আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে যে বাড়িটি ক্রয় করেছিলেন সেই বাড়িটি এখন ফোরক্লোজারে রয়েছে। সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য এবং কোর্টে বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক ময়নুল ইসলামের দেওয়া স্বীকারোক্তি উপস্থিত সদস্যের হাতে তুলে দেন তিনি। যেখানে ময়নুল ইসলাম নিজেই স্বীকার করেছেন ১০.৫ ইন্টারেস্ট রেইটে ক্রয় করলেও এখন তা ২৪%। স্বীকারোক্তিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করার যে চেষ্টা করেছেন বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক মঈনুল ইসলাম তার প্রমাণ স্বরূপ ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের মেরিট এফিডেভিট উপস্থিত সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যেখানে পরিষ্কার ছিলো পে অফ লেটারে মঈনুল ইসলাম কোন পেমেন্ট করেনি।
কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীম তার রিপোর্টে ২০২৩ সালের ১ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত সংগঠনের আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই সময়ে সংগঠনের আয় হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৩২ ডলার ৮০ পয়সা। এখান থেকে ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭২৩ ডলার ৮০ পয়সা খরচ করা হয়েছে আর বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে, যারা সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীম।
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মাসাতের ফলে নিউ ইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ অ্যাসোসিশনকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছেন এই তিন ভয়ানক প্রতারক। এদের থেকে নিউ ইয়র্ক প্রবাসীদের সজাগ থাকার আহবান জানানো হয়।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি ও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার ইনক এর সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টি অন্যতম সদস্য আজিমুর রহমান বুরহান ও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার ইনক এর ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, কওছারুজ্জামান কয়েস, ছদরুন নূর ও সৈয়দ নাজমুল হাসান কুবাদ। সংগঠনের গুনীব্যক্তিবর্গ অলোচনায় অংশ নেন। সভায় চারটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]