১৪ অক্টোবর ২০২৫

নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, প্রবাসীদের তীব্র ক্ষোভ

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, প্রবাসীদের তীব্র ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বাংলাদেশি যুবক। স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে কুইন্সের ওজোন পার্ক এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। বেলা দেড় টার দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশি যুবক ইয়েন রোজারিও (১৯)এর মা নিজ বাড়ি থেকে ছেলের অনিয়মিত আচরণের বিষয়ে পুলিশের জরুরি নম্বরে ফোন করেন। ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পুলিশ সাহায্যের চেষ্টা করলে যুবকটি পুলিশের হাতে কাঁচি চালানোর চেষ্টা করেন এসময় পুলিশ নিজেদের রক্ষার জন্য গুলি চালায় বলে পুলিশ দাবি করেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ১৯ বছর বয়সী এক তরুণকে নিউইয়র্কের কুইন্সে তার নিজ বাড়িতে পুলিশ কর্মকর্তারা গুলি করে হত্যা করেছে।নিহত ওই তরুণ মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং গুলিতে নিহত হওয়ার আগে সাহায্যের জন্য ৯১১ নম্বরে ফোন করেছিলেন। পুলিশ জানায়, বাড়িতে পৌঁছে ইয়েন রোজারিওকে কাঁচি হাতে দেখতে পান তারা। এ সময় এক জোড়া কাঁচি নিয়ে পুলিশ অফিসারদের দিয়ে তেড়ে যান এবং এরপরই একপর্যায়ে কর্মকর্তারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক হয়ে দারিয়েছিল বলছে পুলিশ। গুলি করার পরপরই মৃত্যু হয় ইয়েন রোজারিওর। পুলিশকে রোজারিও জানিয়েছিলেন যে, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে মানসিক রোগের ইতি টানতে চান। নিহত তরুণের ভাই এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং তিনি পুলিশি বিবরণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, তার মা তার ভাইকে আটকাচ্ছিলেন এবং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পুলিশ অফিসারদের তাদের বন্দুক থেকে গুলি করার দরকার ছিল না। তবে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর অফিসাররা রোজারিওকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি একটি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে অফিসারদের দিকে ধেয়ে আসেন। পরে উভয় অফিসারই রোজারিওর ওপর টেজারের মাধ্যমে গুলি করেন এবং তাকে পরাস্ত করা হয়। জন চেল আরও বলেন, ‘কিন্তু তার মা ছেলেকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু এটি করতে গিয়ে তিনি ঘটনাক্রমে রোজারিওর শরীর থেকে টেজার সরিয়ে দেন। আর সেই সময়ে রোজারিও কাঁচি তুলে আবার অফিসারদের দিকে তেড়ে আসেন।’ চেল বলেন, ‘এই পরিস্থিতেতে আত্মরক্ষা করার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’ তবে রোজারিওকে কতবার গুলি করা হয়েছে তা জানায়নি পুলিশ। কিন্তু রোজারিওর পরিবারের দাবি, তাকে ছয়বার গুলি করা হয়েছে। এই পুরো ঘটনাটি পুলিশ অফিসারদের শরীরে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে বলে জানান চেল। যদিও ফুটেজটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। রোজারিওর ১৭ বছর বয়সী ভাই উশতো রোজারিও এক সাক্ষাৎকারে পুলিশের বিরোধিতা জানিয়ে বলেন, তার মা এনকাউন্টারের পুরো সময়জুড়ে তার ভাইকে তার কোলে ধরে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে গুলি করা ছিল অপ্রয়োজনীয়। আমি মনে করি না কেবল একটি কাঁচি দুজন পুলিশ অফিসারের জন্য হুমকি ছিল।‘ উশতো এবং ইয়েনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেছেন, তাদের পরিবার ১০ ​​বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে অভিবাসী হয়েছিল এবং উইনের স্বপ্ন ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। তবে গ্রিন কার্ড পেতে বিলম্বের কারণে তার সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে হত্যার অভিযোগ করেন তিনি। গুলিবিদ্ধ যুবক ইয়েন রোজারিওকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পরে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অফিসাররা কেউ আহত হননি তবে কানে আঘাত পাওয়ায় একজনকে চিকিত্সার জন্য একটি এলাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়ে। পথচারি কেন ক্লার্ক বলেন তিনি গুলির শব্দ শুনেছেন। তিনি তাদের প্রথম বাড়িতে যেতে দেখেছেন, দরজায় টোকা দিতে দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত তাদের ভিতরে যেতে দেখেছেন ক্লার্ক। তারপর তিনি চিৎকার শুনেছেন। পরে গুলির শব্দ সবাই শুনেছেন। তারপরে কিছুটা নীরবতা এবং তারপর আবারও গুলির শব্দ শুনেছেন। গুলি করার আগে ইয়েন রোজারিও যে কাঁচিটি ধরেছিলেন তার একটি ছবি পুলিশ প্রকাশ করেছে। জন চেল বলেন যে শুটিংটি পুলিশ বিভাগের জন্য শোকের সময়ে এসে পৌঁছেছিল যেহেতু আমাদের শহর অফিসার ডিলারের জন্য শোক করছে। আমরা তার বিরুদ্ধে এই জঘন্য সহিংসতা থেকে পুনরুদ্ধার করেছি। আমাদের পুলিশদের এখনও সাত দিনের ২৪ ঘণ্টা এখানে থাকতে হবে বলে তিনি জানান।সম্প্রদায়কে রক্ষা করা এবং সম্প্রদায়কে সাহায্য করাই তাদের কাজ। নিহত ইয়েন রোজারিওর দেশের বাড়ি গাজীপুরের পুবাইলে। বাবার নাম ফ্রান্সিস রোজারি। মা-বাবা ও এক ভাইসহ তারা দীর্ঘদিন ধরে নিউ ইয়র্কের ওজোন পার্ক এলাকায় বসবাস করছিলেন। নিউ ইয়র্কে গত দুই মাসে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন রোজারিও। এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশি যুবকের উপর নিউ ইয়র্ক পুলিশের বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের খবর কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে উক্ত হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন। বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন