
প্রাচীন মুসলমানদের অবদান ও বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিস্তারকে তুলে ধরলেন মুসলিম উম্মাহ


ছাবেদ সাথী, ফিলাডেলফিয়া (পেনসিলভানিয়া) থেকে: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুসলমানদের সবচেয়ে বৃহৎ সংগঠন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা)’র তিন দিনব্যাপী ৮ম বার্ষিক মহাসম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আলোকের উত্তরাধিকার: বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিস্তারে প্রাচীন মুসলমানদের অবদান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৯ আগষ্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিজ্ঞ ইসলামিক আলোচকরা। আলোচনায় প্রাচীন মুসলমানদের অসাধারণ অবদান তুলে ধরা হয়। ভার্চুয়াল তাফসির ও কুরআনভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন দেশ ও বিদেশের অন্যতম আলোচিত ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
'বিশ্বব্যাপী ধর্ম প্রচারে ইসলামের আলোকবাহকরা'-এ শ্লোগানে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ার কনভেনশন সেন্টারে স্থানীয় সময় শুক্রবার ( ৮ আগষ্ট ) দুপুরে জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ সম্মেলন। এতে অংশ নেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান। আগামী রোববার (১০ আগস্ট) মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এ সম্মেলন। প্রথম দিন শুক্রবার হাজার হাজার মুসলমানদের সমাগম ঘটেছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তবে তিন দিনের এ সম্মেলনে ২০ সহস্রাধিকেরও বেশি বিভিন্ন দেশীয় ধর্মপ্রাণ প্রবাসী মুসলমান অংশ গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন আয়োজকরা।

আলোকের উত্তরাধিকার:বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিস্তারে প্রাচীন মুসলমানদের অবদান শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা ইসলামের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারে ঐতিহাসিক,সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক উদ্ভাবনগুলোকে গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করেন। অংশগ্রহণকারীরা জানান অগ্রগতির অনুপ্রেরণামূলক গল্প, আবিষ্কার করেন মানবজাতির যৌথ ঐতিহ্য এবং গভীরভাবে উপলব্ধি করেন কীভাবে এসব অবদান আধুনিক বিশ্বেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন-শেখ মাজেদ মাহমুদ, ড. মোহাম্মদ আবু তালেব ও শেখ মেকাইল স্মিথ প্রমুখ।
আলোচকরা বলেন, প্রাচীন মুসলমানরা শুধু ধর্মীয় প্রচারেই নয়, জ্ঞান, বিজ্ঞান, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার মাধ্যমে ইসলামকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বুঝেছিলেন, মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর সর্বোত্তম উপায় হলো তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং জ্ঞানের আলো জ্বালানো।
আরব, আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের উপকূলীয় শহরগুলোতে মুসলিম বণিকরা শুধু পণ্য নয়, ন্যায়, সততা ও সহমর্মিতার বার্তাও পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাদের সৎ ব্যবসায়িক আচরণ স্থানীয়দের আস্থা অর্জন করে, যা ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ায়।
বাগদাদের দারুল হিকমাহ, কর্ডোভার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রোর আল-আজহার—এসব প্রতিষ্ঠান শুধু মুসলমানদের নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞানের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন ও সাহিত্য—প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানরা এমন অবদান রেখেছেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে আছে।
স্থাপত্য, শিল্পকলা, সংগীত, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস—সবকিছুর মধ্য দিয়েই প্রাচীন মুসলমানরা এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ধারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের স্থাপত্য যেমন আলহাম্ব্রা প্রাসাদ, উমাইয়া মসজিদ কিংবা দিল্লির কুতুব মিনার, আজও ইসলামী ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
মুসলিম শাসকরা অনেক অঞ্চলে এমন ন্যায়ভিত্তিক প্রশাসন চালু করেছিলেন, যা স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করত। ইসলামি আইন বা শরিয়াহ অনেককে ন্যায়বিচারের নতুন ধারণা দিয়েছে, যা তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
সব মিলিয়ে, প্রাচীন মুসলমানদের অবদান শুধু ধর্মীয় সীমারেখায় সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা বিশ্বকে দিয়েছেন জ্ঞানের আলো, নৈতিকতার শিক্ষা এবং সভ্যতার অমূল্য উত্তরাধিকার, যা আজও ইসলামের বিশ্বব্যাপী বিস্তারের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
সন্ধ্যায় মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা)'র সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় ইসলামিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিশু শিল্পীরা। এছাড়া সাংস্কৃতিক দলের নতুনা সঙ্গীত 'বাঁচতে হলে জাগতে হবে, মুনাফিকি ছাড়তে হবে' উপস্থিত দর্শকশ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে।

আজ রোববার (১০ আগষ্ট) দুপুরে বিভিন্ন সমাজে ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রভাব শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেবেন- হারুন অর রশিদ, হামিদ হোসাইন আজাদ, ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, ড. আলতাফ হোসাইন, ইমাম দালোয়ার হুসাইন, ইমাম সিরাজ ওয়াহাজ,মনজের তালেব, ড. আসিফ হিরানি, শেখ মোহাম্মদ এলশিনাউই ও শেখ আব্দেল রাহমান মারফি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮টি অঙ্গরাজ্যে মুনার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সকল বয়সের ২০ থেকে ২৫ হাজার নারী পুরুষ এবং শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করেন এবারের সম্মেলনে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় সবকটি অঙ্গরাজ্যে থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমান সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি। সিএসআপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন




যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাইটক্লাব ব্যবসায়ী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী,সমালোচনার ঝড়

