১৪ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাট্যজন জামালউদ্দিন হোসেন মারা গেছেন

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাট্যজন জামালউদ্দিন হোসেন মারা গেছেন
নোমান সাবিত: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত নাট্যজন, নির্দেশক, অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন হোসেন মারা গেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬ টায় কানাডার ক্যালগেরির রকিভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহে-রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। গত ৩ সপ্তাহ আগে শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দিলে তাকে তড়িঘড়ি রকিভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি তলে লাইফ সাপোর্টে নেন চিকিৎসকরা। কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক মুহাম্মদ খান ও সাস্কাটুন প্রবাসী রাজনীতিবিদ বজলুর রহমান তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রর আটলান্টা থেকে কানাডার ক্যালগেরিতে ছেলে তাশফিন হোসেন তপুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন। সেখানে তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রায় ২৪ দিন অসুস্থতার সঙ্গে সংগ্রাম করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা। টিভি নাটক দিয়ে দর্শকের কাছে জনপ্রিয়তা পেলেও মঞ্চ ছিল তাঁর সবচেয়ে ভালোবাসার মাধ্যম। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন। পরে কাজ করেছেন চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকেও। অভিনেতার শেষ জীবন কেটেছে আমেরিকায়। সেখানে ২০০৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন তিনি। প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন, পাশপাশি মঞ্চেও ছিলেন সক্রিয়। নিউইয়র্কে তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেনও থাকতেন। সংবাদমাধ্যম চ্যানেল আই অনলাইনকে ২০১৯ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিনেতার কাছে মঞ্চে শেষ অভিনয়ের কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘নিউইর্য়ক সিটিতে থাকাকালীন সময়ে দেখেছি অনেকগুলো নাটকের দল সেখানে রয়েছে। তাদের সমন্বয়ে ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনাসম্বল’ নামে প্রতিবছর একটা করে নাটক করতাম। গত ১১ বছরে ১১টা নাটক করেছি। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও ‘মুক্তধারার’ বই মেলায় আমরা স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে ‘বেলাশেষে’ নাটক করেছি। মঞ্চে ২০১৫-১৬-তে নিউইয়ার্কে নাটক করেছি।’’ এই অভিনেতা বলেন, ‘এখনকার মঞ্চ নাটকের স্ক্রিপ্টগুলো আরও উন্নত হওয়া দরকার। অনেক ব্যবধান আমাদের সময় আর এখনকার সময়ের মঞ্চ নাটকে। অনেক ভালো লাগে মঞ্চ নাটক। ছোট ছোট গ্রুপগুলো অনেক ভালো করছে। যদিও তেমন মঞ্চ নাটক দেখা হয় না। অনেক নির্দেশকের বয়স হয়ে গেছে। অনেকেই ব্যস্ত প্যাকেজ নাটক নিয়ে। গ্রুপ থিয়েটারের সেই উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক কমে গেছে। কিছু ভালো কাজ যে হচ্ছে না তা নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়, ‘ভালো জিনিস যত কম হয়, ততই ভালো’।’ অভিনয়জীবনের শুরুতে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যুক্ত ছিলেন জামালউদ্দিন। একসময় নাট্যদলটি ছেড়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল’। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এই অভিনেতা। কোনো আফসোস রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জামালউদ্দিন বলেছিলেন, ‘জীবনে যা চেয়েছি মনে হয় তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। ধনী না হলেও সম্মান নিয়ে চাকরি করেছি। ২০১৩ সালে ২১শে পদক পেয়েছি। আর কি থাকতে পারে? তবে পরজনমে কণ্ঠশিল্পী হতে চাই। আমার প্রচুর দুর্বলতা কণ্ঠশিল্পীদের প্রতি। বিশেষ করে রবীন্দ্র সংগীত।’ জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি তার নিজের নাট্যগোষ্ঠী নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল শুরু করেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জামালউদ্দিন হোসেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রাণী’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দী’সহ কয়েকটি আলোচিত মঞ্চ নাটক পরিচালনা করেছেন। পরিবার সূত্র জানিয়েছে, জামালউদ্দিন হোসেনের অভিনয়শিল্পী স্ত্রী রওশন আরা হোসেনেরও শারীরিক অসুস্থ। জামালউদ্দিন হোসেনের জন্ম ৮ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে। তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও নাট্য কর্মী। শিল্পকলায় তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করেন। জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ সালে অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা উভয়ই নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের শিল্পী ছিলেন, সেখানেই তাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল। তিনি দুই সন্তানের জনক ছিলেন। জামালউদ্দিন হোসেনের স্ত্রী অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেনেরও শারীরিক অবস্থা ভালো না। বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন